• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মাঠে ১৫শ’র বেশি প্রার্থী

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮  

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে চূড়ান্ত লড়াইয়ের মাঠে রয়েছেন দেড় হাজারের বেশি প্রার্থী। শেষ দিনে তিন শতাধিক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। আর যেসব দলের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, সেখানে একক প্রার্থী নিশ্চিত করায় ২৫৬ জনের প্রার্থিতা রহিত হয়। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৭২ এবং বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে ২৯৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

রোববার রাত সোয়া ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এদিন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরই নির্বাচনী এলাকায় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তবে সারা দেশে কতজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, দলের একক প্রার্থী নির্ধারণ করায় বাকি কতজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে- তা তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি ইসি।

এদিকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের আজ সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরপরই শুরু হবে প্রচার উৎসব। প্রচারের সময় যাতে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন না হয়, সে জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। পাশাপাশি ভোটের মাঠে রয়েছে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি। এসব কমিটির কাছে নির্বাচনী অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারবেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, তিনশ’ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৫৮ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। বাকি ৪২টি মহাজোটের শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ২৬টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৫, জাসদ (ইনু) ৩টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি, জেপি ২টি, জাসদ (আম্বিয়া) ১টি ও যুক্তফ্রন্টকে ৩টি আসনে ছাড় দেয়া হয়। তবে মহাজোটের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি ১৪৮টি আসনে এককভাবে নির্বাচন করছে।

কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-৪ ও বরিশাল-৩-এ মহাজোটের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও-৩-এ ইমদাদুল হক, কুষ্টিয়া-১-এ রেজাউল হক চৌধুরী, পিরোজপুর-৩-এ আশরাফুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ-৩-এ চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন, নারায়ণগঞ্জ-৩-এ আবদুল্লাহ আল কায়সার, চট্টগ্রাম-২-এ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কক্সবাজার-২-এ ড. আনসারুল করিম আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচন করবেন।

অপরদিকে ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৪১ জনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের ৫৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৪০ এবং ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেয়া হয়েছে।

বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন। শুধু এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ নিজ দলের ‘ছাতা’ প্রতীকে ভোট করবেন।

জানা গেছে, ২০ দলীয় শরিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি, এলডিপিকে ৫, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৪, জাতীয় পার্টি (জাফর) ২, খেলাফত মজলিস ২, বিজেপি ১, এনপিপি ১, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, লেবার পার্টি ১, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশকে ১টি আসন দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন ছাড় দেয়া হয়। এর মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি ৪, নাগরিক ঐক্য ৪ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৪টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন। এ আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। এর বাইরেও পাবনা-১-এ মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩-এ নুরুল ইসলাম বুলবুলকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রেখেছে দলটি। যদিও এ দুটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী রয়েছে।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ৯ আসনে প্রার্থী রদবদল করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবীরের পরিবর্তে প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আক্তার হামিদ ডাবলুকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু দুপুরে ডাবলুকে বাদ দিয়ে জিন্নাহকেই বহাল রাখে দলটি। এ নিয়ে দেলোয়ারের পবিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।

এ ছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট ১৪৭ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আটটি দল নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়। দলগুলো হল- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এসব দলের মধ্যে সিপিবি, বাসদ ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে। বাম জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের দল থেকে ৭৪টি আসনে নির্বাচন করছি।

ইতিমধ্যে এসব আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মার্কা কাস্তে। ৭৪টি আসনে আমাদের দলের বাইরে ৩টি আসন রয়েছে। ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ১টি, ১টি গণমুক্তি ইউনিয়নের আর অন্যটি হচ্ছে সমজীবী সংঘ। এ ছাড়া চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

এদিকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) পাঁচটি আসনে দলটির প্রার্থীকে হুক্কা প্রতীক দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে দিনাজপুর-১ আসনে মো. আরিফুর ইসলাম, ঢাকা-১৮ এসএম শাহাদাত, পঞ্চগড়-২ ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, যশোর-৫ মো. নিজামউদ্দিন অমিত ও পঞ্চগড়-১ আসনে আল রাশেদ প্রধানকে দলীয় প্রতীক দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কল্যাণ পার্টি কুমিল্লা-৭ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী সুলতান মঈন আহম্মেদকে দলীয় প্রতীক হাতঘড়ি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মো. আলমগীর হোসাইনকে দলীয় প্রতীক কাঁঠাল দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ এক চিঠিতে দলের প্রধানসহ তিনজনকে দলীয় প্রতীক গাভী দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা হলেন- জেবেল রহমান গানি, সুমি আক্তার শিল্পী ও মো. ওয়াজি উল্লাহ মাতব্বর অজু।

জাতীয় পার্টি-জেপি কুড়িগ্রাম-৪ ও পিরোজপুর-২ আসনে দলের প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এক চিঠিতে ইসিকে জানিয়েছে, দলের প্রধান হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ তিনজন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। তবে ময়মনসিংহ-৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫, গাইবান্ধা-৩, রংপুর-২ ও বরিশাল-৬ আসনে দলের প্রার্থীকে মশাল প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

বিকল্পধারা বাংলাদেশ এক চিঠিতে মাহী বি. চৌধুরীসহ তিনজন নৌকা ও বাকি ২৫টি আসনের প্রার্থীকে কুলা প্রতীক দেয়ার কথা জানিয়েছে।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে গত ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৬৭ জন ও বাকি ৪৯৮ জন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। গত ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেন ৫৪৩ জন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ২৪৩ জন। এ ছাড়া রোববার উচ্চ আদালতে রিট করে আরও কয়েকজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার রায় পেয়েছেন।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল। এদিন বিকাল ৫টার মধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের দলীয় ও জোটের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা স্ব স্ব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই তালিকার অনুলিপি কমিশনকে দিতে বলা হয়।

তাদেরকে দেয়া চিঠিতে দলের প্রধান বা মহাসচিব বা সমমর্যাদার ব্যক্তির স্বাক্ষরে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিতে বলা হয়। চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ছাড়া ওই দলের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।

তারা আরও জানান, নির্বাচনে বিএনপিসহ কয়েকটি দল একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল। রোববার চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা দেয়ার পর বাকিদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। আজ সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক দেবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।