• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বন্ধুহীন বিএনপি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

২৯ নভেম্বর। রোজ বৃহস্পতিবার। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের কণ্ঠে অভিমান আর হতাশায় বেরিয়ে এলো “বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূমিকা রাখার কথা, সেটা রাখছেন না যুক্তরাষ্ট্র”।

কিছুদিন আগেই যখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে উত্থাপিত বিলে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ধর্মীয় দলগুলোর সহিংসহতার শঙ্কা প্রকাশ পেয়েছিল তখন ফখরুল সাহেব কোথায় ছিলেন কে-ই বা জানে! মির্জা ফখরুল সাহেব আশাবাদী মানুষ, আশা করতেই পারেন। আশা সে তো মরিচীকা নয়! ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সংস্থাটির একজন সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের পদক্ষেপ চেয়েছিলেন ফখরুল। ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। এছাড়াও তফসিল ঘোষণার পর ঢাকায় নিয়োজিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। মির্জা ফখরুল হয়তো বাংলাদেশকে ১০ বছর আগের রূপেই দেখেন। টিনের চশমা ছাড়া ১০ বছর আগের বাংলাদেশকে দেখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ এখন অনেক বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশের ওপর চাইলেও এখন আর কেউ খবরদারি করতে পারে না। কারো হুকুমের গোলাম নয় শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে কাউকে খবরদারি করার অপশন দেয়া হয় না। অপশন নেই আমেরিকার হাতেও। আমেরিকারও জঙ্গি সম্পর্কিত নীতি পাল্টে গেছে। আগে তাদের জঙ্গি দমনের নীতি বা পররাষ্ট্রনীতি ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশে জঙ্গি বা জঙ্গির অপবাদ দিয়ে সেখানে আমেরিকান সৈন্য পাঠানো। বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ নিয়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে এমন একটি সুপ্ত ধারণা ছিল। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের সামুদ্রিক বন্দর নিয়ে ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থান নিতে চাইত। এখন তাদের আর সেটা প্রয়োজন নেই। কারণ, ভারতই সামরিক মিত্রতা গড়ে তুলেছে আমেরিকার সঙ্গে। আমেরিকার এশিয়া প্যাসিফিক নেভাল ফোর্স এখন ইন্ডিয়া এশিয়া প্যাসিফিক নেভাল ফোর্স হয়েছে। এক সময়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের মূল স্নায়ুযুদ্ধ ছিল ইন্ডিয়ান ওসানে যেন আমেরিকান নেভীন না আসে তা নিয়ে। তারা দিয়াগো গার্সিয়াতে আমেরিকার উপস্থিতি নিয়ে সারাক্ষণ প্রতিবাদ করতো। এখন ভারত মহাসাগর বা ইন্ডিয়ান ওসানে আমেরিকা তাদের বন্ধু হিসেবে সহাবস্থান করছে। তাই বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর আর আমেরিকার প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি তারা কোনো মুসলিম অধ্যুষিত দেশকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে সৈন্য পাঠানোর নীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। বরং এই খরচ কমিয়ে তারা আমেরিকাকে গ্রেট করার দিকে মন দিয়েছে।

অন্যদিকে আমেরিকা পাশে না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও আমেরিকার পথ ধরেছে। পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধানের সম্পর্ক অনেক ভাল। বিএনপির পক্ষ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়া সম্ভব হয়নি। চীনের সঙ্গে বিএনপির আগে যে সম্পর্ক ছিল বর্তমানে সেটাও নেই। বরং বর্তমান সরকারী জোট ও সরকার প্রধানের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো। চীন শেখ হাসিনার আমলেই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। সর্বোপরি বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক বেশি গভীর সম্পর্ক বর্তমান সরকারের। বিএনপির সঙ্গে সৌদি আরবের আগের সেই সম্পর্ক নেই। শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম বলেছেন ‘মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী নয়’। সারা বিশ্বের মুসলিমকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য তিনি দাবি জানান প্রতিটি ফোরামে। সৌদি আরবসহ গোটা আরব বিশ্ব উপলব্ধি করেছে, তাদের কোনো নেতার থেকে শেখ হাসিনার কথা বিশ্ব ফোরামে গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। তাই স্বাভাবিকই তারা শেখ হাসিনাকে উচ্চ আসনে বসিয়েছে।

ভারতের চোখে শেখ হাসিনা কোন মাপের নেতা সেটা ‘এল কে আদভানি’র বক্তব্যেই বোঝা যায়। শেখ হাসিনাকে দেয়া সংবর্ধনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের দেশের সব থেকে প্রবীণ এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনাই বর্তমানে সাউথ এশিয়ার মূল নেতা। শেখ হাসিনা এমনি করে একের পর এক তার কাজের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর বড় বড় শক্তিধর দেশের সঙ্গে ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। এর বিপরীতে গত দশ বছর বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে থেকে বিএনপি এমন কোনো কর্মসূচি সামনে আনতে পারেনি যাতে তারা প্রতিবেশীসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। ইন্ডিয়া ও আমেরিকা বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেক্ষেত্রে গত দশ বছরে বিএনপি বার বার প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া শঙ্কিত হয়ে ওঠে। তাদের ভেতর শঙ্কা জাগে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তাহলে আবার জামায়াতে ইসলামী ও তাদের জঙ্গি সংগঠনগুলো অবাধে কাজ করবে বাংলাদেশে। তখন দেখা যাবে, বাংলাদেশে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি করে সেখানে ট্রেনিং নিয়ে জঙ্গিরা আজ ইন্ডিয়ার পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করছে তো কাল কলকাতায় আমেরিকান ডেপুটি মিশনে হামলা করছে আর পরশু বোম্বের কোন হোটেলে হামলা করছে। এই ভয়েই ভীত হয়ে পড়ে ইন্ডিয়া। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গীরা অবাধে কাজ করার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পাকিস্তানে পরিণত হওয়া। ভারত সব সময়ই সর্বাত্মক চেষ্টা করবে, তাদের আরেক পাশে যেন আরেকটি পাকিস্তান না থাকে। এ কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী যে কোনো শক্তি তা আওয়ামী লীগ বা তার জোট হোক আর সিপিবি বা তার জোট হোক এমন একটি শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে ভারত। মনোনয়ন জমা দেয়ার পর জমা দেবার পরে বিএনপির নেতারা ভারতে গিয়েছিলেন, তাদের বন্ধু ও থিঙ্কট্যাঙ্ক এক সম্পাদকও দিল্লী সফর করে এসেছেন। তাতেও তারা কোনো সুবিধা করতে পারেননি। তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে কথাও বলতে পারেননি। এ কারণে বিএনপির কথাবার্তার ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইন্ডিয়া ও আমেরিকা এ নির্বাচনে বিএনপির পাশে নেই।