• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ থেকে বিপক্ষ দলকেই বেশি মূল্য দিল বিএনপি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮  

চলতি মাসের ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাস দুয়েক আগেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিবিদদের অগ্রাধিকার দেয়ার বেশ তোড়জোড় করেছিল গণ ফোরামের নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট। যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের সৃষ্ট জামায়াতে ইসলামীকে বাইরে রাখাই ছিল ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের প্রধান বক্তব্য।

ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জলও কম ঘোলা করেনি ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপির দল বিচ্ছিন্ন নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতকে আসন দিয়েছে ২২টি। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ নেতাদের মূল্যায়নের আশা দেখানো ঐক্যফ্রন্টের কপালে জুটেছে সর্বসাকুল্যে ১৯টি আসন।

ভোট যুদ্ধ শুরু আগে আরেকটি মনোননয়ন বাণিজ্যের অভিশাপে অভিশপ্ত হয়েছে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পালাতক আসামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ধানের শীষ। শেষ মুহূর্তে লন্ডনে বসেই তার সিণ্ডিকেটের মনোনয়ন বাণিজ্য দেশের রাজনীতিকেই নয়, গোটা বিএনপিকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে তারেক। নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ভালোবাসা এবারও দূরে রাখতে পারেনি বিএনপি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় দলের নিবন্ধন বাঁচানোর জন্য আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে দুর্নীতির মামলায় বিএনপির সভানেত্রী খালেদা জিয়া জেলে থাকায় নেতৃত্ব শূণ্য বিএনপি ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের আশ্রয় নেয়। আসন্ন নির্বাচনে জাতির সামনে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেনের মুখ ভাসলেও ঠিক মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে পালাতক থেকেও তার কর্তৃত্ববাদী চেহারায় দেখিয়ে দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টকে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লন্ডনে তারেককে ঘিরে থাকা সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা। পাশাপাশি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকা তার ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি সিণ্ডিকেটের বিরুদ্ধেও রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্যের সরব সমালোচনা রয়েছে খোদ বিএনপিতেই। এদিকে টাকার বিনিময়েও মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষোভে এরই মধ্যে দল হাজার হাজার নেতাকর্মী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছে।

এক সময়ে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের বিশ্বস্ত ও অনুগত একদল সহচর তেজগাঁওয়ের একটি অফিসে বসে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন— এমন অভিযোগও বাতাসে ছড়াচ্ছে। টানা ১২ বছর বিএনপি নেতা-কর্মীরা নির্যাতন-নিপীড়ন ও নির্বাসনের সাজা ভোগ করেছেন। ভবিষ্যৎ তাদের অন্ধকার। মামলার জালে তারা আটকা। পুলিশের তাড়া খেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। স্বাভাবিক জীবনযাপন শান্তি ও স্বস্তি হারাম হয়ে গেছে তাদের জন্য। অনেকের প্রত্যাশা ছিল এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জয়-পরাজয় যাই হোক বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু অসংখ্য মামলা অভিরাম হয়রানি ও কারাভোগ করেও জনপ্রিয় নেতাদের বদলে দলের মনোনয়ন বাণিজ্যের খোলা বাজার থেকে যেভাবে নব্যরা আচমকা মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন তাতে কারাগারের ভিতরে বাইরে থাকা মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটছে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনায় জানা যায়, হতাশার চাদরে ঢাকা পড়েছে নেতা-কর্মীদের ত্যাগের ১২টি বছর। বিএনপি নয়াপল্টন ও গুলশান কার্যালয়ে তালা দিয়েছে। স্লোগান তুলেছে ‘টাকা ফেরত দাও, নয়তো মনোনয়ন দাও’। মনোনয়ন বাণিজ্য মানি না মানব না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতে হামলা ও দলের বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতাকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার পরও তাদের রাগ প্রশমিত হয়নি এখনো।

১২ বছরের তিক্ত যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিএনপি যখন এভাবে মনোনয়ন বাণিজ্য করে দলের ত্যাগীদের ছুড়ে ফেলে দিয়ে, ঐক্যফ্রন্টের সাথে তাদের দেয়া কথা ভুলে ইতিহাসের সেই বিষাক্ত স্রোতধারা ধরেই জামায়াতকে ধানের শীষ বানিয়েছে ২২টি আসনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়লেও মনোনয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতির কাছে এখন প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির কাছে ঐক্যফ্রন্ট শরিকদের চেয়ে যেমন জামায়াতের পাল্লা ভারী। তেমনি মনোনয়ন বাণিজ্য করা অদৃশ্য শক্তিও ক্ষমতাধর।