• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

৩০টি আসনও পাবে না বিএনপি: জয়

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২৪৮ আসন, বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৪৯ আসন আর বাকি তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয় দেখছে আরডিসি।

রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি) বলছে, ভোটের মাসের শুরুতে ৯ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দেশের ৫১টি সংসদীয় আসনে সোয়া দুই হাজার ভোটারের ওপর জরিপ চালিয়ে তারা এ পূর্বাভাস পেয়েছে।

আরডিসির হয়ে এই জরিপ পরিচালনায় যুক্ত মার্কিন পরামর্শক ফরেস্ট ই কুকসান বুধবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

আরডিসির জরিপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কারণ বিএনপি ৩০ আসনেও জয়লাভের মতো অবস্থায় নেই।’

বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় তার ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা লিখেন। বাংলাদেশ জার্নালের পাঠকদের জন্য নিচে জয়ের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

জয় লিখেন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) নতুন জনমত জরিপের ফলাফল আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। সারাদেশের ৫০টি জেলায় ২,২৪৯ জন তালিকাভুক্ত ভোটারের ওপর ডিসেম্বর এর প্রথম দুই সপ্তাহে এই জরিপটি চালানো হয়। এই জরিপের কনফিডেন্স লেভেল ৯৫% এবং মার্জিন অব এরর +/-৩%।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সমর্থন ৬০.৪% আর বিএনপির সমর্থন ২২.২%। এছাড়া জাতীয় পার্টি ৩.৭%, সিদ্ধান্তহীন ১০.৩% এবং ২.৭% ভোটার উত্তর দিতে চাননি।

এই জরিপটি পরিচালনার জন্য আরডিসি একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। ভোটাররা মক ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি প্লাস্টিক বক্সে ফেলেন। ব্যালটে কারো নাম লিখা ছিলো না, ফলে বোঝা যায়নি কে কোন দলের জন্য ভোট দিয়েছেন। এর ফলে দুটি জটিলতা দূর হয়; একটি হলো ভোটারদের মন থেকে তাদের মূল পছন্দ প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় দূর হয়েছে এবং অন্যটি হচ্ছে এর ফলে সিদ্ধান্তহীন অনেকেই ভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেমনটি তারা আসল ভোটের দিন করবেন।

যেহেতু ভোটার উপস্থিতি কখনোই শতভাগ হওয়া সম্ভব না, ধরে নেয়া যায় যে বেশিরভাগ সিদ্ধান্তহীন ভোটাররাই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী নন এবং তাদের ভোট না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরডিসির পুর্বাভাস হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে ২৪৮টি আসনে জয়লাভ করবে আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট জিতবে ৪৯টি আসনে।

আমি মনে করি, বিএনপির জন্য এই পূর্বাভাস বাস্তবসম্মত না, কারণ তাদের ৩০টি আসনেও জয়লাভ করার মতন সমর্থন নেই। যাই হোক, আমাদের জন্য আসন্ন নির্বাচনের ফল ২০০৮ সালের নির্বাচনের চাইতেও ভালো হবে। জয় বাংলা!

আরডিসির হয়ে এই জরিপ পরিচালনা করেন যুক্ত মার্কিন পরামর্শক ফরেস্ট ই কুকসান। কুকসানের বিজনেস কার্ডে বলা হয়েছে, তিনি ডেভেলপমেন্ট ইন ডেমোক্রেসি নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ সংস্থার পাশাপাশি পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন জরিপেও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে কুকসান বলেন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অর্থায়নে আরডিসি বাংলাদেশের নির্বাচন সামনে রেখে এই মতামত পরিচালনা করেছে।

এর আগে গত অগাস্ট মাসে করা আরডিসির আরেকটি জরিপের বরাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, নির্বাচনে তাদের দল আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ২২০ আসনে জয় পেতে পারে বলে তারা আভাস পেয়েছেন।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনে ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা।

এ নির্বাচনে সব মিলিয়ে ২৩২টি আসনে জয় পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি ৩৩টি, ওয়াকার্স পার্টি ছয়টি, জাসদ পাঁচটি, জেপি একটি, তরিকত ফেডারেশন একটি, বিএনএফ একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৩টি আসনে জয় পান।

এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়েছিল৷ দুই বছর জরুরি অবস্থার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০, বিএনপি ২৯, জাতীয় পার্টি ২৭, জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি, এলডিপি একটি, বিজেপি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চারটি আসনে জয়ী হন।

আরডিসি বলছে, এবারের নির্বাচন সামনে রেখে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গ্রাম ও শহরের ২ হাজার ২৪৯ জন ভোটারের ওপর মতামত জরিপ চালিয়েছে তারা।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা মহাজোট, ২২ শতাংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ৪ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে সমর্থন জানিয়েছেন।

আর ১০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা এখনও নিশ্চিত নন। ৩ শতাংশ ভোটার উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আর এক শতাংশের কম ভোটার বলেছেন, তাদের ভোট দেওয়ারই আগ্রহ নেই।

ফরেস্ট ই কুকসান বলেন, একটি মডেল ব্যবহার করে ভোটারদের মতামতের সঙ্গে আগের নির্বাচনের ভোটের রেকর্ড বিশ্লেষণের মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাভাস তৈরি করেছেন তারা।

আরডিসির প্রতিবেদন বলছে, জরিপে অংশগ্রহণকরী পুরুষের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ মহাজোটের পক্ষে, ২২ দশমিক ৬ শতাংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ জাতীয় পার্টির পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা বলেছেন।

আর নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ২ শতাংশ মহাজোটের পক্ষে, ২২ শতাংশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশ জাতীয় পার্টির পক্ষে কথা বলেছেন।