• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

গুজব ছড়াতে নিজেদেরই তৈরি ‘ভোটে অনিয়মের ভিডিও’ সংগ্রহ করছে বিএনপি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০১৯  

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নেতাকর্মীদের দিয়ে নির্জন স্থানে ‘নির্বাচনী অনিয়মের ভিডিও’ তৈরিতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছে বলে বিশ্বস্ত সূতে জানা গেছে। সূত্রে বলা হয়েছে, ভুয়া ব্যালট ও কেন্দ্র তৈরি করে সেই ব্যালট ছিনতাই, জালভোট প্রদান একইসাথে বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলার সূক্ষ ভিডিও এবং স্থির চিত্র বা ছবি তৈরি করছে দলটি। যা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরে সরকারের ওপর বহির্বিশ্বের চাপ বাড়ানোর জন্য দলটির পরিকল্পনার একটি অংশ।

মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও অর্থের বিনিময়ে যে কোনো সহিংসতার ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছে দলটি।

এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ ভোট দিয়েছে। যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২৫৭ আসনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয়। আগের নির্বাচনে বিরতি দেয়ায় নিয়মানুযায়ী এ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অনেকটাই নিবন্ধন বাঁচানোর আনুষ্ঠানিকতা ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দলের প্রধান দুই নেতার একজন জেলে ও অপরজন গত এক যুগ ধরে বিদেশে পলাতক থাকায় সাংগঠনিকভাবে বিএনপির দুর্বলতার লক্ষণ দেখা গিয়েছে এ নির্বাচনেই। যেখানে পুরানো ও নতুন শরিকদের সাথে নিয়ে নতুন করে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেও মোট ভোটের মাত্র সাড়ে ১৩ শতাংশ জুটেছে দলটির ঝুলিতে। ঐক্যফ্রন্টের প্রাপ্ত মোট সাতটি আসনের মধ্যে বিএনপি মাত্র পাঁচটি আসনে জয় পায়।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বাচন পরবর্তী ভাষ্যে, এ নির্বাচনে দলটি সরকার গঠনের স্বপ্ন না দেখলেও এতো শোচনীয় পরাজয় কল্পনা করতে পারেনি।

গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিয়েও কাজ না হওয়ায়, নির্বাচন শেষে ফলাফল আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশী পর্যবেক্ষক ও কূটনীতিকদের সাথে একের পর এক বৈঠক করেছে দলটি। যেখানে তাদের মূল বক্তব্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াসই বেশি ছিল। এ সময় হাতে বেশ কিছু প্রমাণ ও ভিডিও চিত্র রয়েছে জানালেও সঙ্গে সঙ্গে তেমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি বিএনপি। এমনকি নির্বাচন শেষ হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ ছুঁলেও এখনো পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

বিএনপি এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করেছে ভোটের পরদিনই। যেখানে আগের রাতে সিল মেরে এবং ভোটের দিন তাদের সমর্থকদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ায় জনগণ ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানায় বিএনপি। আর এই মামলায় জয় পাওয়ার জন্য প্রতিটি আসনের পরাজিত প্রার্থীদের কর্মীদের দিয়ে নিজেরাই তৈরি করা ভুয়া তথ্যপ্রমাণ তৈরি করে ১০ জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে সবগুলো আসন থেকে তথ্যউপাত্ত না এলেও এখনও পর্যন্ত ১২০টি আসনের ভুয়া ভিডিও তৈরি করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

যেখানে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদেশিদের কাছে রাজনৈতিক সহানুভূতি প্রাপ্তির লক্ষ্যেই নতুন এই ছকে এগুচ্ছে বিএনপি।

এদিকে নির্বাচন শেষ বিএনপির সমর্থক কর্মীদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সহায়তা অতীতে ঘটেযাওয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ঘটনাগুলোকে নির্বাচনী ঘটনা বলে অপপ্রচার চালানো হয়। যেখানে প্রতিটা ভিডিওতে সরকারকে দায়ী করে তীব্র আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। যা এরইমধ্যে গণমাধ্যমে তথ্য উপাত্তসহ তুলে ধরেছে।

গোপনসূত্রের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এমনকি ভোটে কাজ করা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন ভুয়া ভিডিও এবং ছবি সংগ্রহ করছে দলটি। এগুলো আদালত ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবে বিএনপি। তবে অর্থের বিনিময়ে এসব তথ্য সংগ্রহে দলের কোনো সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেই। বিচ্ছিন্নভাবে নানা উপায়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আর এ কাজ করতে এখনো পর্যন্ত যত খরচ হচ্ছে তার সবটাই আইএসআই দিচ্ছে বলে জানাগেছে।

অর্থের বিনিময়ে এসব ভিডিও-ছবি তৈরি করতে হচ্ছে কি না প্রশ্নে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘অনেক ধরনের কৌশল নিতে হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে এক দিন খেয়ে হলেও সংগ্রহ করতে হচ্ছে। কারণ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ।’