• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ভুলের সাত পাকে বাঁধা পড়ে মুসলিম লীগের দশায় বিএনপি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯  

নবম ও একাদশ এই দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নজিরবিহীন পরাজয়ের পেছনে সাতটি কারণ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, মনোনয়ন-বাণিজ্য, একই আসনে একাধিক প্রার্থী, যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থতা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য নেতার অভাব, নির্বাচনী প্রচারণায় না যাওয়া, অতীতের কৃতকর্ম এবং জামায়াত প্রীতির কারণেই এই ভরাডুবি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন শোচনীয় পরাজয়ের পরও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ইতি টেনে এই মুহূর্তে বিএনপি যদি ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও পরিকল্পনা না করে থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে দলটির পরিণতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একসময়ের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের মতো হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবহিকভাবে বিভিন্ন নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তগুলোই আত্মঘাতী হচ্ছে বিএনপির জন্য। মুসলিম লীগও বড় দল ছিল একটি সময়। সে সময়ের নির্বাচন বয়কটের পরপরই সংকুচিত হয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

ক্ষমতায় যাওয়া জন্য এবার নতুন করে জোট গঠন করেছিল বিএনপি। গণফোরামের নেতা ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মান্না, জাসদের আ স ম রবদের নিয়ে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েন মির্জা ফখরুল। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পাত্তা পায়নি ভোটে। মাত্র সাড়ে ১৩ শতাংশ ভোট আর আটটি আসন নিয়ে তাদের অবস্থান তলানিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিকরা পেয়েছে ২৮৮টি আসন।

এক আসনে একাধীক প্রার্থী: এবারের নির্বাচনে বিএনপি তার প্রতিপক্ষ দলগুলোকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রাখার জন্য একই আসনে এক থেকে পাঁচজন বা তারও বেশি প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় দলটি। এতে করে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।

তারেক রহমানের রমরমা মনোনয়ন বাণিজ্য: নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ের যাবতীয় ক্ষমতা ড. কামলা হোসেনের হাতে থাকলেও মনোনয়ন পত্রে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তারেক রহমান। হত্যা ও দুর্নীতির মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত তারেক নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে বলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার থেকেই বিভিন্ন অংকের টাকা আদায় করে। কিন্তু সময় শেষে দেখা গেলো যে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্দ কর্মীরা দলটির গুলশান ও পল্টনের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।

নেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য নেতা: গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়ার পর নির্বাচন করার বৈধতা হারান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিএনপি যদি কোনও ভাবে ক্ষমতায় যেতে পারতো তখন কে প্রধানমন্ত্রী হতো সে বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দল পাকিয়ে ফেলে।

নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে: নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা যখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলো, ঠিক তখন বিএনপির নেতা কর্মীরা ছিল প্রচারণা বিমুখ।

সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমে গুজব রটানো: নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোতে ব্যস্ত ছিলো। পাশাপাশি বিভিন্ন রকম গুজব ছড়িয়ে নির্বাচন বর্জনের পাঁয়তারা করছিলো।

জামায়াত প্রীতি: ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জামায়াতের সাথে আঁতাত করে দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড পরিচালনা করে বিএনপি। এছাড়া জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধী হওয়াতে খোদ বিএনপির ভেতর থেকেই জামায়াতকে বর্জন করার দাবি ওঠেছিলো, কিন্তু তারেকের অতিমাত্রায় জামায়াত প্রীতির কারণে সে দাবী সফল হয়নি। দল হিসেবে জামায়াতের অনুমোদন না থাকায় বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়।

বিএনপির নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, তবে কি নিজ কৃতকর্মের দায়ে মুসলিম লীগের মতো পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছে দলটি?