• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দল পুনর্গঠনে বিদেশিদের দ্বারে ধরনা: ৬ শর্তে কাহিল বিএনপি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯  

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ব্যর্থতা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় বিপর্যয়ের পর রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। জানা গেছে, দল পুনর্গঠনে বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছে দলটির নেতারা। প্রথমে অজুহাত দিলেও শেষ পর্যন্ত ৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের শর্তে বিএনপির পুনর্গঠনে আর্থিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

একাধিক দায়িত্বশীল কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রের বরাতে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কার্যক্রম জোরদার করতে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে বিদেশি দূতাবাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং লবিস্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছেন মির্জা ফখরুলসহ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা। কমিটি গঠনে গ্রুপিং-লবিং করতে ব্যস্ত থাকায় রাজপথের রাজনীতিতে সময় কম দিচ্ছেন দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা। মূলত, লন্ডনের নির্দেশেই ধীরে চলো নীতিতে কাজ করছে বিএনপি।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রথমে বিদেশি দূতাবাসগুলো বিএনপির দলীয় দুর্নীতি, ব্যক্তি পর্যায়ের সীমাহীন লুটপাট, জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নামে মানুষ হত্যার বিষয়গুলোতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপির পুনর্গঠনে কোন রকম আর্থিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিতে অপারগতা প্রকাশ করে একাধিক দূতাবাস ও সংস্থা। পরবর্তীতে ৮ মার্চ রাতে রাজধানী গুলশানের একটি তিন তারকা হোটেলে গোপন বৈঠকে একাধিক দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৬ শর্তে দলের পুনর্গঠনে সহায়তার আশ্বাস পান মির্জা ফখরুল, মওদুদ ও মির্জা আব্বাস।

দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দেয়া ৬টি শর্ত হলো:

প্রথমত, দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে বিএনপির সকল পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কেননা, দণ্ডপ্রাপ্ত ও দুর্নীতিবাজ নেতার নেতৃত্বে বিএনপি কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

দ্বিতীয়ত, ড. কামালের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি প্রভাব বিস্তারে কোন চেষ্টা করবে না। ড. কামালের অধীনেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকতে হবে বিএনপিকে।

তৃতীয়ত, সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে নাগরিক আন্দোলন। এ আন্দোলন সভা-সেমিনার ও মানববন্ধনে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে এমন কোন কার্যক্রমে বিএনপি অংশ নেবে না।

চতুর্থত, বিএনপিকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের দল খ্যাত জামায়াতে ইসলামীর গোপন সকল নাশকতার পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে।

পঞ্চমত, দণ্ডপ্রাপ্ত, চিহ্নিত দুর্নীতি মামলার আসামি-জঙ্গিবাদে মদদ দাতাদের আগামী কাউন্সিলে কোন রকম পদ দেয়া যাবে না।

ষষ্ঠত, দল পুনর্গঠিত হলে, দেশের উন্নয়নে সরকারের ভুল-ভ্রান্তির সমালোচনা করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সংহতি প্রকাশ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

বিএনপিকে দেয়া শর্তের বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দল পুনর্গঠনে যে ৬টি শর্ত দেয়া হয়েছে- তা মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য। তারেক রহমান, দুর্নীতি ও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করাটা বিএনপি নেতাদের জন্য প্রায় অসম্ভব বলেও মনে করছেন তারা। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে টিকে থাকতে হলে মির্জা ফখরুলদের বুকে পাথর রেখে হলেও শর্তগুলো পূরণ করে দল গঠনে বিদেশি বন্ধুদের কথা মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।