• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮  

অতঃপর তারা উভয়ে চলতে লাগল। পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল তখন সে [খিজির (আ.)] তা বিদীর্ণ করে দিল। সে [মুসা (আ.)] বলল, আপনি কি আরোহীদের (সাগরে) নিমজ্জিত করার জন্য তা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করেছেন। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭১)

তাফসির : আগের আয়াতগুলোতে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর কাহিনির ভূমিকা বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে তাঁদের মূল কাহিনি বর্ণনা করা হচ্ছে। বোঝার সুবিধার্থে এখানে একসঙ্গে পুরো ঘটনা তুলে ধরা হলো—একাধিক শর্ত মানার অঙ্গীকার করে মুসা (আ.) খিজির (আ.)-এর সঙ্গে পথ চলতে শুরু করেন। কিছুদূর গিয়ে সাগর পার হওয়ার জন্য একটি নৌকা পেলেন। অতঃপর নৌকা থেকে নামার সময় খিজির (আ.) তাতে ছিদ্র করে দেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি ছিল অন্যের অনিষ্ট সাধন। মানুষের ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই। কোনো ধর্মেরই এর অনুমতি নেই। তাই এমন কাজ দেখে মুসা (আ.) তত্ক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেন।

তিনি বলেই ফেললেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি একটা গুরুতর মন্দ কাজ করলেন।’ এ কথা শুনে খিজির (আ.) বলেন, ‘আমি কি আগেই বলিনি যে আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না।’ মুসা (আ.) ক্ষমা চাইলেন। ইতিমধ্যে একটি কালো চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে এবং সাগর থেকে এক চঞ্চু পানি তুলে নিল। সেদিকে ইঙ্গিত করে খিজির (আ.) মুসা (আ.)-এর উদ্দেশে বলেন, ‘আমার-আপনার এবং সমস্ত সৃষ্টিজগতের জ্ঞান মিলিতভাবে আল্লাহর জ্ঞানের মোকাবেলায় সাগরের বুক থেকে পাখির চঞ্চুতে ওঠানো এক ফোঁটা পানির সমতুল্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৭২৭)

তারপর তাঁরা সাগরের তীর বেয়ে চলতে থাকলেন। কিছুদূর গিয়ে তাঁরা সাগরপারে খেলায় রত এক দল বালককে দেখলেন। খিজির (আ.) তাদের থেকে একটি ছেলেকে ধরে এনে নিজ হাতে হত্যা করেন। এ দৃশ্য দেখে মুসা (আ.) আঁতকে ওঠেন। ‘এ কী! একটি নিষ্পাপ শিশুকে আপনি হত্যা করলেন? এ যে মস্তবড় গোনাহের কাজ।’ খিজির (আ.) বলেন, ‘আমি তো আগেই বলেছিলাম, আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না।’ মুসা (আ.) আবার ক্ষমা চাইলেন এবং বলেন, ‘এরপর যদি আমি কোনো প্রশ্ন করি, তাহলে আপনি আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।’ অতঃপর তাঁরা চলতে লাগলেন। অবশেষে যখন একটি জনপদে পৌঁছলেন তখন তাদের কাছে খাবার চাইলেন। কিন্তু তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। পরে তাঁরা সেখানে একটি পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেয়ে সেটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তখন মুসা (আ.) বললেন, ‘আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। কেননা এরা আমাদের খাবার দেয়নি।’ খিজির (আ.) বললেন, ‘এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো।’

এ তিনটি ঘটনার তাৎপর্য হলো—প্রথমত, নৌকা ছিদ্র করার কারণ হলো, সেটা ছিল কয়েকজন গরিব-মিসকিন ব্যক্তির। তারা এটা দিয়ে সাগরে জীবিকা অন্বেষণ করত। আমি সেটিকে ছিদ্র করে দিয়েছি এ জন্য যে ওই অঞ্চলে ছিল এক জালিম বাদশাহ। সে বল প্রয়োগে মানুষের নৌকা ছিনিয়ে নিত। আর ছিদ্র করা নৌকা সে নিত না। তাই আমি ছিদ্র করে দিয়েছি, যাতে তারা জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বালকটিকে হত্যা করার কারণ হলো, তার মাতা-পিতা ঈমানদার। আর সে বড় হয়ে কাফির হবে, যা তার মাতা-পিতার জন্য আজাবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমি চাইলাম যে মহান আল্লাহ তার মাতা-পিতাকে এর বদলে উত্তম সন্তান দান করুন, যে হবে সৎকর্মশীল ও বিশুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী।

তৃতীয়ত, পতনোন্মুখ প্রাচীর সোজা করে দেওয়ার কারণ হলো, ওই প্রাচীরের মালিক ছিল নগরীর দুজন পিতৃহীন বালক। ওই প্রাচীরের নিচে তাদের নেককার পিতার রক্ষিত গুপ্তধন ছিল। মহান আল্লাহ চেয়েছেন যে বালক দুটি যুবক হওয়া পর্যন্ত প্রাচীরটি দাঁড়িয়ে থাকুক এবং তারা তাদের প্রাপ্য গুপ্তধন হস্তগত করুক।

মূলত খিজির (আ.) এসব ঘটনার অবতারণা করেছেন মহান আল্লাহর নির্দেশে।

গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ