• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

জেনে নিন রোজার ফিদিয়া আদায়ের বিধান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ মে ২০২০  

শরীয়ত প্রদত্ত কোনো বিধান পালনে অক্ষম হয়ে, শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ দেয়াকে ফিদিয়া বলে। (কামুসুল ফিকহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৪৯)। অতএব, রোজার ফিদিয়া বলতে বুঝানো হয়, রোজা রাখতে অক্ষম হয়ে, শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় তাকে।

প্রশ্ন : রোজার ফিদিয়া আদায়ের বিধান কি? ফিদিয়ার পরিমাণ কতটুকু এবং তা কখন আদায় করতে হয়? কেউ যদি ফিদিয়া আদায়ের পর সুস্থ হয়ে যায় তাহলে তার পুনরায় রোজা রাখতে হবে? আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে কেউ ফিদিয়া দিতে অক্ষম হলে করণীয় কি?

উত্তর : ফিদিয়া সম্পর্কে আল কোরআনে এসেছে, ‘আর যারা রোজা রাখার সামর্থ্য রাখে না তারা ফিদিয়া আদায় করবে, এক মিসকিনকে খোরাক দেয়া।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৪)।

ফিদিয়া আদায় করার বিধান : যেসব লোক বার্ধক্যের কারণে বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি তাদের রোজা না রাখা বৈধ। তবে রোজার পরিবর্তে তারা ফিদিয়া আদায় করবে। ইমাম আবু হানিফা, শাফী ও আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহ.) এর মতে ফিদিয়া আদায় করা ওয়াজিব। (কামুসূল ফিকহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৫০)।

রোজার ফিদিয়া যাদের ওপর আবশ্যক : এক. বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে যে অক্ষম হয়ে যায়। দুই. অসুস্থতার কারণে যে রোজা রাখতে অক্ষম এবং অসুস্থতা থেকে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৪৭১, ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৭৮)।

ফিদিয়ার পরিমান : রোজার ফিদিয়া হচ্ছে, একজন মিসকিনকে দুবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো। তবে খাবারের পরিবর্তে, প্রত্যেক রোজার বিনিময়ে সদকায়ে ফিতর পরিমান দ্রব্য বা টাকা দিলেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। যা সের হিসেবে এক সের সাড়ে বারো ছটাক গম বা আটা কিংবা তার সমপরিমাণ মূল্য। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৪৪)।

রোজার ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হলে করণীয় : উত্তম হচ্ছে, ফিদিয়া আদায়ে বিলম্ব না করা। তবে ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হয়ে গেলে সে রোজা কাজা আদায় করতে হবে। ফিদিয়া যথেষ্ট হবে না। তবে ফিদিয়া আদায়ের কারণে আলাদা নেকি পাবে। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৪৬৫)।

ফিদিয়ার পরিবর্তে অন্য কেউ রোজা রেখে দেয়ার বিধান : যার ওপর ফিদিয়া ওয়াজিব, তার পক্ষ থেকে তার অভিভাবক বা অন্য কেউ রোজা রেখে দিলে সেটা গ্রহনযোগ্য হবে না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৬০৩)।

ফিদিয়া আদায় করতে অক্ষম হলে করণীয় : রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তির কাছে যদি ফিদিয়া আদায় করার মতো কোনো সম্পদ না থাকে তাহলে সে তওবা ইস্তেগফার পড়তে থাকবে এবং এই নিয়ত রাখাবে যে, আল্লাহ তায়ালা সচ্ছলতা দান করলে ফিদিয়া আদায় করে দেবেন। অসচ্ছল অবস্থায়ই মারা গেলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কারণ, সাধ্যের বাইরে আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৪৯, আপকে মাসায়েল, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৬০২)।

বর্তমান সময়ে আমাদের অনেকের সন্তানাদি জাগতিক শিক্ষায় অনেক উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু দ্বীনের ব্যাপারে একেবারেই অশিক্ষিত থেকে যায়। তারা পিতা-মাতার হকগুলো বুঝে না। যে কারণে মৃত্যুর পর পিতা-মাতার পরকালের সুখ শান্তির জন্য বিপুল অর্থ খরচ করে কুলখানি, চল্লিশা ইত্যাদি পালন করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজ যেমন- নামাজ রোজা কাযা হয়ে থাকলে সেগুলোর ফিদিয়া আদায় করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয় না। অথচ দ্বীনি দৃষ্টিকোন থেকে প্রথমটি রসুম-রেওয়াজ, যার কোনো ভিত্তি নেই। আর দ্বিতীয়টি আবশ্যক। তাই পিতা-মাতা ও মুরব্বিদের করণীয় হচ্ছে, নামাজ রোজা কাযা হয়ে থাকলে মৃত্যুর আগে সন্তানাদিকে ওসিয়ত করে যাওয়া। কারণ আমাদের সমাজে ওসিয়তের গুরুত্ব এখনও আছে।