• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

কোরআন নাজিল ও চর্চার মাস রমজান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২০  

পবিত্র কোরআন নাজিলের মাসে রোজা পালনের পাশাপাশি মুসলিম উম্মার কাছে রমজানের ইবাদাতের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত ও তারাবিতে খতমে কোরআন।

রমজান মাসের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক সুগভীর। রমজান মাস এমন যে, তাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে; মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে ও হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে। (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)।

রমজানের পাঁচটি সুন্নত- (১) সেহরি খাওয়া, (২) ইফতার করা, (৩) তারাবির নামাজ পড়া, (৪) কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা, (৫) ইতিকাফ করা। এই পাঁচটি সুন্নতের দুটিই হলো প্রাকৃতিক প্রয়োজন; যা মানুষ বাধ্য হয়ে করে থাকে। রোজা রাখার শক্তি–সামর্থ্য অর্জনের জন্য সেহরি খাওয়া এবং রোজার ক্লান্তি ও ক্ষুধা নিবারণের জন্য ইফতার করা। মূলত শেষোক্ত তিনটিই হলো রমজানের মূল ইবাদত বা মৌলিক উদ্দেশ্য। আর এই তিনটির সঙ্গেই রয়েছে কোরআনের একান্ত সম্পর্ক। যথা: রমজানের তৃতীয় সুন্নত তারাবির নামাজ, এতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, যা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব রুকন এবং খতম তারাবিতে পূর্ণ কোরআন মজিদ খতম করা হয়, যা সুন্নত। রমজানের চতুর্থ সুন্নত কোরআন তেলাওয়াত। সাহাবায়ে কেরাম প্রায় সারা বছর প্রতি মাসের প্রতি সপ্তাহে পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার তেলাওয়াত করতেন। প্রতি সাত দিনে এক খতম পড়তেন বলেই কোরআন মজিদ সাত মঞ্জিলে বিভক্ত হয়েছে। তারা রমজান মাসে আরো বেশি বেশি তেলাওয়াত করতেন।

প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.)–কে অবতীর্ণ পূর্ণ কোরআন একবার শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.) ও নবী ক​রিম (সা.)–কে অবতীর্ণ পূর্ণ কোরআন একবার শোনাতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের শেষ রমজানে দশম হিজরির রমজান মাসে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত জিবরাইল (আ.)–কে পূর্ণ কোরআন মজিদ দুবার শোনান এবং হজরত জিবরাইল (আ.)–ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কোরআন শরিফ দুবার শোনান। এতে বোঝা গেল রমজান শুধু কোরআন নাজিলের মাস নয়; বরং রমজান মাস হলো কোরআন শিক্ষণ প্রশিক্ষণ, কোরআন পঠন পাঠন ও কোরআন চর্চার মাস এবং সর্বোপরি রমজান মাস হলো জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআন অনুশীলন ও বাস্তবায়নের মাস।

রমজানের চতুর্থ সুন্নত হলো ইতিকাফ, যা মূলত আল্লাহর সঙ্গে নির্জনবাস বা গোপন অবস্থান। যার উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে সঙ্গোপনে বিশেষ সান্নিধ্য অর্জন ও একান্ত আলাপচারিতা। কোরআন হলো কালামুল্লাহ বা আল্লাহর বাণী। কোরআন তেলাওয়াত হলো আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। তাই ইতিকাফের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কোরআন তেলাওয়াত।

এ ছাড়া ইসলামি শরীয়তে ঈমানের পরই হলো নামাজ, নামাজের উদ্দেশ্য হলো জিকির বা আল্লাহর স্মরণ। কোরআন মজিদে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আমার স্মরণোদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো। (সূরা : ২০ তোহা, আয়াত : ১৪)। তাই নামাজের উদ্দেশ্যও হলো আল্লাহর জিকির বা প্রভুর স্মরণ। কোরআন মজিদের ৭২টি নামের ৩টি হলো জিকির বা স্মরণ। যথা: (১) জিকরুল হাকিম বা কৌশলগত স্মরণ (সূরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৫৮); (২) আজ ​জিকর বা মহাস্মরণ (সূরা-৪১ হা–মীম সাজদা, আয়াত: ৪১); (৩) তাজকিরা বা স্মারক (সূরা-৮০ আবাসা, আয়াত: ১১)। রমজান মাসে তারাবিহ তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলসহ বেশি বেশি নামাজ পড়া হয়, আর নামাজে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা হয়, এতে করে রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক ও রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও আমলের অনুশীলন ও চর্চার সূত্র ও সুনিবিড়তা সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।