• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইতিকাফের ফজিলত

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২০  

ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো সময় জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে। 

রমজান মাস ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ই আমলটি করা যায়। তবে রমজান মাসের সঙ্গে এর বিশেষ একটি সম্পর্ক রয়েছে।

রাসূল (সা.) এর ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করবে, সে দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব পাবে। (বাইহাকি)।

ইতিকাফের ফজিলত :

ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত। মদিনায় অবস্থান কালে রাসূল (সা.) প্রতি বছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়াত, শিক্ষা ও যুদ্ধ-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি।

ইতিকাফ ঈমানি তরবিয়ত ও শিষ্টাচার অর্জনের একটি পাঠশালা। ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায় মশগুল হয়ে পড়ে।

ইতিকাফ ঈমান বৃদ্বির একটি দারুণ সুযোগ। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনা শাণিত করে তোলা এবং উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা। তাছাড়া এই ইতিকাফের মাধ্যমে ‘শবে কদর’ পাওয়ার এক অপূর্ব ও নিশ্চিত সুযোগ রয়েছে। কারণ হাদিসের ভাষ্যমতে রমজানের শেষ দশকে ‘শবে কদর’ হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। আর ইতিকাফ এটাও রমজানের শেষ দশকে হয়ে থাকে বিধায়; এ কথা জোরালোভাবেই বলা যায়, যে ইতিকাফ করলো সে যেন নিশ্চিত ‘শবে কদর’ পেয়ে গেলো!

পরিবার-পরিজন, ব্যবসা-চাকরিসহ, দুনিয়াবী সমস্ত কার্যকলাপ থেকে মুক্ত হয়ে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট স্থান মসজিদে পূর্ণ দশ দিনের জন্য সর্ব মহৎ স্বত্ত্বার সান্নিধ্য লাভের প্রচেষ্টা—এটা নিশ্চিত স্রষ্টা ও সৃষ্টির বন্ধনকে করে আরো মজবুত, যা সবার পক্ষে হয়ে উঠে না। এই অপার্থিব ও ঐশ্বরিক ভালোবাসার চুম্বুকাকর্ষণে সেই কেবল আকর্ষিত হতে পারে, যাকে আল্লাহ ‘মুখলিস’ বা নিষ্ঠাবান বান্দা হিসেবে কুবল করে নিয়েছেন।

এই ইতিকাফর ফলে আল্লাহর জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। কেননা ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে ইতিকাফ অবস্থায়। ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে!

তাছাড়া এই ইতিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূর হয়। কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করার কারণে। আর মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়।

ইতিকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়। সর্বোপরি সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর এক যোগ্যতা তৈরি হয়। তাই ইতিকাফকে বলা চলে, দশ দিন মেয়াদি আধ্যাত্মিক উন্নতির সাধনার এক পবিত্রতম সোপান!