• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

হজযাত্রীরা আজ মক্কা থেকে পাড়ি জমাবেন মিনার দিকে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২০  

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আজ। দীর্ঘ ৯০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে পারছে না কেউ। বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

মাত্র দশ হাজার হজযাত্রীর পদচারণায় মিনার মাঠে আজ শুরু হচ্ছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পাড়ি জমাবেন মিনার দিকে। মিনার খিমায় (তাঁবু) তাদের সবাইকে একত্রে কাটাতে হবে। আগামীকাল বুধবার সারাদিনে তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ শেষে তারা মিনা থেকে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। এবার বিশ্বের কোনো দেশ থেকেই কেউ হজে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে সৌদিতে অবস্থানরত হাতেগোনা কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি এই বিরল সুযোগ পেয়েছেন।

জানা গেছে, ব্যতিক্রমী এই হজে মাত্র দশ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশ নিচ্ছেন। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক হলেও আগে থেকে সৌদি আরবের বাসিন্দা। এবার মোট দশ হাজার লোক হজে অংশ নিলেও তাদের মাত্র ৩০ ভাগ সৌদির নিজস্ব নাগরিক। সে হিসেবে এবারের হজে সৌদি আরবের নাগরিক থাকছেন মাত্র ৩ হাজার বাকি ৭ হাজার বিশ্বের ১৬০টি মুসলিম দেশের নাগরিক। গত দুদিনে তারা সবাই মক্কায় এসে হাজির হয়েছেন। তাদের কণ্ঠে ছিল-মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরিফে হাজির হওয়ার ফজিলতের সেই দোয়া- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’ অধিকাংশই মক্কা থেকে মোয়াল্লেমের বাসে করে মিনায় যান।

শরীয়ত মোতাবেক-হজের অংশ হিসেবে বুধবার পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন মিনায়। সেখানে হাজিরা সারা জীবনের পুঞ্জীভূত গুনাহ মাফ ও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে সময় কাটাবেন। প্রতিদিন নিজ নিজ খিমায় (তাঁবু) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন জামাতের সঙ্গে। প্রতিটি খিমায় এবার ২ থেকে ৪ জন হজযাত্রীর একত্রে থাকার সুবিধা রয়েছে যাতে কোভিড-১৯ বিধানের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও এবারের সীমিত আকারের ব্যতিক্রমী হজের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। সেটা অনুসরণ করেই মক্কা মদিনা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে নেয়া হয়েছে বিশেষ সুব্যবস্থা।

এদিকে জমজমের পানি বোতলে করে সরবরাহ করা হবে হাজিদের। তবে করোনার কারণে ছোয়া যাবে না কাবাঘর, কালো পাথরে চুমু খাওয়াও এবার নিষিদ্ধ। নামাজ পড়ার জন্য আনতে হবে নিজস্ব জায়নামাজ।

মূলত মক্কা থেকে মিনার মাঠে পৌঁছার মাধ্যমেই শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবছর হজের দুদিন আগে অর্থাৎ ৭ জিলহজ তারিখ সন্ধ্যায় মক্কা থেকে মীনার মাঠে যাত্রা শুরু করেন। পরদিন ৮ জিলহজ সারাদিন মিনার মাঠে হজযাত্রীরা নিজ নিজ খিমায় কাটাবেন। আগামীকাল বুধবার সারাদিন অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ আদায় শেষে আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সাধারণত হজযাত্রীরা নিজস্ব মোয়াল্লেমের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো বাসে মিনার মাঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে থাকেন। ফজর থেকে শুরু তাদের যাত্রা শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত।

হজযাত্রীরা মহান রবের প্রেমে উন্মাদের মতো ছুটেন আরাফাতে। তাদের সঙ্গে থাকে শুধু একটি ব্যাগ-যাতে রাখা হয় একটি কিছু অতীব জরুরি জিনিস পত্র। যেমন থালা বাসন, পানির মগ, ওষুধ ও ওজু-গোসলের জন্য গামছা জাতীয় কাপড় চোপড়। মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ (সোমবার) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ।

সহিহ হাদিছে রয়েছে- যিনি ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অকুফে আরাফায় অবস্হান করলেন- তিনিই হাজি হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। আর হজে মকবুলের (কবুল হজ) ফজিলত হচ্ছে-নিশ্চিত জান্নাত লাভ।

উল্লেখ্য এবারের হজে হাজিদের সব খরচ দিচ্ছে সৌদি সরকার। হজের দ্বিতীয় দিন আরাফাত ময়দানের খুতবা বাংলাসহ ১০টি ভাষায় অনূদিত হবে।