• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আমূল বদলে যাওয়া এক সাকিবের গল্প

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০১৯  

তার সম্পর্কে যেকোনো বিশেষণই যেন কম হয়ে যায়। সাকিব আল হাসান শুধুই যেন একটি নাম নয়; তিনি একটি নির্ভরতা, আস্থা এবং দলের চালিকাশক্তি। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেখানেই যেকোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলুক না কেন সবসময় সর্বক্ষেত্রে যাকে নিয়ে প্রতিপক্ষ দলে আলোচনা হয়-তিনি হচ্ছে সাকিব আল হাসান।

সাকিবের ব্যাটিং, বোলিং এবং দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা- বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। তাকে নিয়ে তাই বিভিন্ন সময় বিশ্বের বরেণ্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিত, ধারাভাষ্যকার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন। এই যেমন কিছুদিন আগে ওয়াকার ইউনুস বলেছেন, সাকিব যে মানের ক্রিকেটার বা উঁচু মাপের ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব এবং মাঠে তার ব্যাট ও বলের যে কার্যকারিতা ও ভূমিকা- সে অর্থে তার কথা সারা পড়েনি তথা প্রচার মাধ্যম বা ক্রিকেট বিশ্ব তাকে সমাদর করেনি।

অথচ সাকিবের গায়েই কিন্তু শেষ প্রায় ১২ বছর ধরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের জয়ের অন্যতম নায়ক এবং ম্যাচ সেরা পারফরমারও কিন্তু সাকিব। প্রথম ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি তাই সাকিবকে নিয়ে অনেক স্তুতি, প্রশংসা ও বন্দনা গেয়েছেন।

SAKIB-1

পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আমি বা আমাদের বলার কিছু নেই। সাকিবের সামর্থ্য বা ক্রিকেট মেধা ও মনন এবং তার পারফরম্যান্সের জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশ দলের জন্য সাকিব অনেক বড় এক শক্তি এবং আমাদের দলের জন্য সে অনেক বড় এক আস্থা এবং নির্ভরতার নাম।

সাকিব সম্পর্কে অনেক কথার ভিড়ে এবার নতুন একটি তথ্য দিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুজন খেলোয়াড়ি জীবনে সাকিবের সঙ্গে খেলেছেন ক্লাব ক্রিকেটে। জাতীয় দলের ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন থাকার কারণে সাকিবকে তিনি কাছে পেয়েছেন অনেকটা সময় ধরে।

ব্যক্তি জীবনে খানিকটা কম কথা বলা এবং কিছুটা কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থাকার মানুষ হলেও সাকিব দিনকে দিন দলের সঙ্গে আরও বেশি মানিয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন টাইগারদের ম্যানেজার সুজন। দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা, সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার ওঠা- বসা, তার মেলা-মেশা এবং কথা-বার্তা বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি তার মানসিকতার যেন আমূল পরিবর্তন হয়েছে।

khaled

কিছুদিন আগেও একা থাকতে পছন্দ করা সাকিব দলীয় বৈঠক এবং দলীয় ইস্যু ছাড়া মুখ খুলতেন না তেমন। নিজের কাজটুকু ঠিক মতো করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপের আগে আইপিএল থেকে ফিরে যেন নতুন সাকিবের দেখা মেলে।

গতকাল (সোমবার) বাংলাদেশের টিম হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, 'সাকিব এখন দলের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়মিত কথা-বার্তা বলছেন। তাদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন। কারও কোনো সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কার কী সমস্যা, কার কোথায় ঘাটতি, কে কোন জায়গায় ভালো করছেন এবং দলের কখন কী প্রয়োজন সেটা অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে মিলেমিশে মাঠে এবং মাঠের বাইরে ঠিক করছেন। মোদ্দা কথা, সাকিব এখন সতীর্থদের প্রতি অনেক বেশি যত্নবান।

mehedy

ঘটনার কথা উল্লেখ করেন সুজন বলেন, 'ছেলেরা প্র্যাকটিস করছিল। এর মধ্যে কয়েকজনের পানির পিপাসা লাগে। সাকিব ছিলেন পানির জারের খুব কাছাকাছি। সেখান থেকে তিনি বোতলে করে সতীর্থ ক্রিকেটারদের জন্য ২৫-৩০ গজ দূরে এসে-গিয়ে পানি দিয়ে আসে। এটা হয়তো কোনো বড় উপমা নয়। তবে ব্যক্তি সাকিবের আচরণের এবং দলের সঙ্গে তার মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়াকে বড় উদাহরণ বলে মনে করি আমি।

সুজন আরও জানান যে, 'শুধু জুনিয়র ক্রিকেটারদের পানির বোতল এনে দেয়া নয়, সাকিব এখন জুনিয়রদের সঙ্গে মিশছেন। এর-ওর সঙ্গে কথা বলে ম্যাচের পরিকল্পনা-কৌশল সাজাচ্ছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও সাকিবে এই আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বিশেষ করে ম্যাচে মুস্তাফিজকে সাহায্য করছিলেন সাকিব। কখনো মিড-অফ কখনো মিড-অনে দাঁড়িয়ে মুস্তাফিজকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও ফিল্ডারদেরও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

সাকিবের এই আচরণ দলের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন সুজন। সবচেয়ে বড় কথা সাকিবের ক্রিকেটের প্রতি যে বোধ, অনুভূতি ও উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ যত ঘটবে সতীর্থদের মধ্যে তা তত বেশি বিচ্ছুরিত হবে এবং সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।