• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আলোর মুখে আনিসুল হকের যানজট নিরসনের দুই প্রকল্প

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২০  

রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ, কোম্পানিভিত্তিক বাস নামানোর প্রকল্প নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তাঁর মৃত্যুর পর বাধাবিপত্তিতে মুখ থুবড়ে পড়ে এই প্রকল্পগুলো। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এরই মধ্যে চালু হয়েছে তিনটি ইউটার্ন, বাকিগুলো আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে। বেশ অগ্রগতি হয়েছে কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রকল্পেও। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নাগরিকবান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন আনিসুল হক। এর মধ্যে, সবুজ ঢাকা কর্মসূচি, আমিনবাজার থেকে শ্যামলী সড়ক পার্কিং-ফ্রি ঘোষণা, মহাখালীতে ডিএনসিসির উইমেনস হলিডে মার্কেট, হয়রানি রোধে ঠিকাদারদের বিল অফিসে পৌঁছে দেওয়া, সড়কে আধুনিক সাড়ে ৪ হাজার বাস সার্ভিস চালু। সড়কে এলইডি বাতি লাগানো এবং হাতিরঝিলের আদলে রামপুরা খালের পরিবর্তন ছিল অন্যতম। তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কটির পুরোটা দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড করে রাখা হয়েছিল। আনিসুল হক দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো সড়ক দখলমুক্ত করে উন্মুক্ত করে দেন। এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খান পরিবারের অবৈধ দখলে থাকা সড়কের     জায়গার অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে সাহসের পরিচয় দেন তিনি। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রকল্প নিয়েছিলেন তিনি। সাহসী উদ্যোগে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেন আনিসুল হক। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ইউটার্ন প্রকল্প, কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। ডিএনসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আতিকুল ইসলাম ইউটার্ন প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নেন। কোম্পানিভিত্তিক প্রকল্পের কাজও এগিয়ে নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র       ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যানজট নিরসনে সাতরাস্তা       থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের    প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি ইউটার্ন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাদ পড়ে যায়। তাঁর মৃত্যুর পর বিভিন্ন জটিলতায় প্রকল্প কাজ কিছু দিন বন্ধ ছিল। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউটার্নের কাজ পুরোদমে চালু করেছি। এর মধ্যেই তিনটি চালু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর সুফল পেতে শুরু করেছে নগরবাসী। ইংরেজি নতুন বছরে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নগরবাসীকে এই ১০ ইউটার্ন উপহার দেব। আমাদের প্রত্যাশা এই ইউটার্নগুলো যানজট সমস্যা লাঘব করে নগরজীবনকে সচল করে তুলবে।’ প্রকল্প সংশিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেয়র আনিসুল হক। প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমির প্রয়োজন পড়ে। সংস্থাগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন মেয়র। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো খরচ ছাড়াই জমি ব্যবহারে অনুমতি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রয়োজনীয় জমির জন্য অর্থ দাবি করলে প্রকল্প খরচ বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। এ প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকার দেবে আর বাকি টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় থেমে যায় যাবতীয় কার্যক্রম। তখন এই সমস্যার সমাধান চেয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পরে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই প্রকল্পে ব্যবহারে জমি প্রদানে রাজি হয়। এর পরই শুরু হয় প্রকল্পের কাজ।

প্রকল্প পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই তিনটি ইউটার্ন চালু হয়েছে। চালু হওয়া ইউটার্নে চলছে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। বিজি প্রেসের সামনে, বনানী চেয়ারম্যানবাড়িসহ সবগুলো ইউটার্নের কাজ সমানতালে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জোয়ারসাহারা এলাকায় আর্মি গলফ ক্লাবের সামনে যে ইউটার্ন হওয়ার কথা ছিল সেখানে কিছু ত্রুটির বিষয়ে বলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এজন্য প্রকল্পে ১১টি ইউটার্নের জায়গায় ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ হচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউটার্নের কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। সবকিছু ঠিক থাকলে মেয়াদের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।’

যানজট নিরসন ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মেয়র আনিসুল হক। বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ এগিয়ে নিয়েছিলেন প্রকল্প। তাঁর মৃত্যুর পর এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হলেও অগ্রগতি ছিল না। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রকল্পের কাজে নতুন গতি পায়। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রুট ও কোম্পানি কমানোর সুপারিশ করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে চলাচলরত আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার পরিবহনের পরিবর্তে ৯ হাজার ২৭টি গণপরিবহন পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন প্রকল্পে বাস ডিপো, বাসস্ট্যান্ড করার জায়গা নির্ধারণের সমীক্ষা চলছে। কোন রুটে কোন রঙের বাস চলবে সেটাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এই প্রকল্প চালুর আশা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।