• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঈদের পর সংক্রমণের নতুন ঢেউ-এর আশঙ্কা আছে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২০  

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘সরকার দৈনিক ১৫ হাজার টেস্টে যাচ্ছে। তাদের সুপারিশ রয়েছে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টেস্ট করতে।’ অবশ্য সকল পিসি আর ল্যাব একত্রিত করলে দেশে টেস্টের সামর্থ্য ৩০ হাজারই।

তিনি মনে করেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান ‘ঊর্ধ্বমুখী ধারা’ আগামী এক মাসে নিম্নমুখী হতে পারে। কিন্তু সেটা লকডাউনের কার্যকরতা তথা জনগণের আচরণের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জুমে প্রথম আলোকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ এ কথা বলেন। এ সময় ঈদে গণ যাতায়াত ও গণসমাবেশ রোধ করতে না পারলে দেশে করোনা ‘সংক্রমণের নতুন ঢেউ’-এর আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।

গত ১৮ এপ্রিল দেশে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার দেশের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের ওই কমিটি করোনা মোকাবিলায় ২২টি সুপারিশ করেছে। এখন থেকে কমিটি এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য কমিটি হাসপাতালের সেবার মান উন্নত করার ওপর জোর দেবে। কমিটির সদস্যরা শিগগিরই বিভাগীয় সদরে সরেজমিন পরিদর্শনে যাবেন। কমিটি সরকারকে বলেছে, ২২টি চেকলিস্টের ভিত্তিতে প্রতি জেলার সিভিল সার্জনকেও নির্দেশনা দেওয়া উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, টেস্টিংয়ের আওতা বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়ে ২৭ এপ্রিল তাঁরা সরকারকে রিপোর্ট দেন। ৫ মে সরকার বলে, কাজ শুরু করে দিয়েছি। কয়েক দিন পরে আরও ভালোভাবে বলতে পারবে। এরপর ১২ মে তাঁরা বেজ লাইন সার্ভে বা মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে ১২ মের মধ্যে তাঁরা অনেক উন্নতি দেখি। যেমন কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট নেই। বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তারদের অসুবিধা কেটেছে। নার্সদেরও পদায়ন ঘটেছে। অক্সিজেন সরবরাহে উন্নতি হয়েছে। এভাবে আগে যা রেড ছিল, তা গ্রিন হয়েছে। কিন্তু এখন সরকার বলছে, কিছু জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার। এটা বাড়াতে হবে। অন্যথায় যারা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে অবসাদ আসবে। ক্লিনার যেখানে ছিল একজন, সেখানে প্রতি হাসপাতালে নিয়োগ পেয়েছে ১৫ জন। নমুনা সংগ্রহে দরকার কিছু টেকনোলজিস্ট। এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা মন্ত্রণালয়কে নতুনভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

গত ২০ মে পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে বসেছিল। আমরা সন্তুষ্ট হলাম। কারণ ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। বাকি ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে কয়েকটিতে সময় নেবে।

বড় অগ্রগতি কোথায় জানতে চাইলে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘টেস্টিংয়ে। যেখানে ১ শ, তিন শ, পাঁচ শ দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেটা আজ ১০ হাজারের ওপরে চলে গেছে।’ ১০ হাজারই সুপারিশ ছিল, না আরও বেশি—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, ১০ হাজার তো বলেছিলাম অতি শিগগির। প্রয়োজন পড়লে এটা দৈনিক ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছি আমরা। সরকার কিন্তু এখনই বলেছে তারা ১৫ হাজারের দিকে যাবে। এর আগে মিডিয়ায় ১৫ হাজার কীটের তথ্য এসেছিল। এখন কিন্তু ১৫ লাখ কীট পাইপলাইনে আছে। এভাবে সরকার আমাদের সুপারিশ সুবিবেচনায় নিয়েছে।’

বর্তমানে ৪৪টি টেস্ট ল্যাবের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রশ্নে বললেন, বাংলাদেশে অব্যবহৃত পিসিআর টেস্ট যন্ত্র আরও আছে। সেগুলোকেও ঈদের পরে যুক্ত করা হবে। তখন প্রতিদিন আমরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টেস্ট করাতে পারি।

আক্রান্তের সংখ্যা যা সরকারিভাবে বলা হয়, তার থেকে বাস্তবে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশি, আপনি একমত? উত্তরে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এটা তো অঙ্কের হিসাব। এখন ১০০ করলে ১৫টি পজিটিভ পাই। তাই এমনটা তো হতেই পারে। কেন জানি আমার মনে হয়, টেস্টের সংখ্যা ভারত, পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশে কম নয়। বরং বেশিই হবে।’

জুন-জুলাইয়ের মধ্যে দৈনিক ৩০ হাজার টেস্টে পৌঁছানোর কোনো লক্ষ্য আছে কি? এর উত্তরে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘না, ঠিক তা নয়। প্রশ্নটা উঠেছিল, আমরা প্রতিদিন চাইলে ৩০ হাজার টেস্ট করাতে পারি কিনা? তখন সরকার থেকেই বলল, দেশে যেখানে যত পিসিআর ল্যাব রয়েছে, তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে এবং অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দৈনিক ৩০ হাজার টেস্ট পর্যন্ত পৌঁছানো যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘তবে এমনও হতে পারে, ১৫-২০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছানোর পরে আমাদের আর টেস্ট দরকার হবে না। এই জায়গাটা সত্যি খুবই দুরূহ।’ এ প্রসঙ্গে তিনি তথ্য দেন যে, বিজিএমইএ নিজেদের খরচায় চারটি বিসিএল ল্যাব করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা হয়তো অনুমতি পাবেও।

কোন মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছাতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বললেন, ‘এটা ঠিক আমার বিষয় নয়। তবে এপিডেমিওলজিস্টরা বলছেন, এখনকার যে সংক্রমণের ধারা, অর্থাৎ লকডাউন যতটুকু শিথিল হয়েছে, তাতে যদি সীমিত থাকে, জানাজার (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো) বা ঈদের জামায়াতে গণসমাবেশ না ঘটে, তাহলে আগামী এক মাস পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তারপরে কার্ভটা ফ্ল্যাট হয়ে যাওয়ার কথা। আপাতত তাদের এমনই অনুমান। সবটাই নির্ভর করছে আমাদের জনগণ কি করে তার ওপর। অবশ্য সবটাই পুলিশ দিয়ে হয় না। জনগণের সচেতনতাই বড়।’ কারফিউ জারি বিষয়ে তাঁর মত, ‘এটা হলে আমি অবাক হব না। বরং আমার সমর্থন থাকবে।’

ভ্যাকসিন ও ওষুধের অগ্রগতি এবং পাশ্চাত্যের প্রস্তুতি বিবেচনা করে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এই ভাইরাস কবে যাবে, সেটা অনির্দিষ্ট। তাই একে নিয়েই বাস করাটা রপ্ত করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ কৌশলটা গুরুত্বপূর্ণ। হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কখনো আশা করব না, এটা পুরোপুরি চলে যাবে।’

গত বৃহস্পতিবার সরকারের সঙ্গে সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, বড় বড় হাসপাতালগুলোয় যাতে লিকুইড অক্সিজেন থাকে। চট করে তো একটি লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো সম্ভবও নয়। আজ থেকে এক থেকে দেড় মাস আগে শোনা যেত, অক্সিজেন নিয়ে এক রোগীর সঙ্গে অন্য রোগীর টানাটানি। সেটা এখন আর বিরাজ করছে না। উন্নতি তাই যথেষ্ট।’