‘করোনাকাল’ থেকে ‘বাসন্তীকাল’
মানিকগঞ্জ বার্তা
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২০
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : কদিন আগে ডিবিসি চ্যানেলে একটা টকশোতে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের নামটা মনে গেঁথে গিয়েছিলো ‘করোনাকালের চিকিৎসাপত্র’।
‘করোনাকাল’ খুবই শক্তিশালী একটা শব্দ। আমার ধারণা ভবিষ্যতের বাংলাদেশে লেখালেখি আর টকশোতে যখন আজকের সময়টা নিয়ে আলোচনা আর ব্যবচ্ছেদ চলবে তখন এই সময়টাকে হয়তো ‘করোনাকাল’ নামেই চিহ্নিত করা হবে বলে। এই করোনাভাইরাসকালে আমাদের ভোগান্তি আর দুর্ভোগের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। এই করোনাকালে ভালো থাকতে কী করতে হবে আর কোনটা করা থেকে বিরত থাকতে হবে এ নিয়ে বলা আর লেখা হয়েছে বিস্তর। হচ্ছে এখনো। হবে আরও বেশ কিছুদিন। করোনাকালের প্রাপ্তি হচ্ছে আমরা বেশ কিছু নতুন লেখক পাচ্ছি, পাচ্ছি টক’শোগুলোতে নতুন নতুন মুখও। করোনাকালের নানা মাত্রার সঙ্গে তারা যোগ করছেন আরও নতুন সব মাত্রা। আমার কাছে কেন যেন মনে হয় করোনাভাইরাস আমাদের সামনে টাইম মেশিনে চড়ে টাইম ট্রাভেলের একটা অদ্ভুত সুযোগ এনে দিয়েছে। জাপানের নারা শহরটি ওইখানকার পার্কে চড়ে বেড়ানো শয়ে শয়ে হরিণের জন্য বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। কিন্তু ওই নারা শহরের বাসিন্দারা কে কবে তাদের শহরের রাস্তায় রাস্তায় হরিণ ঘুরে বেড়াতে দেখেছে কে জানে।
আমি তো অন্তত বলতে পারি, আমি তো আমি, আমার পূর্বপুরুষরা এই নশ্বর পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে আজ সাক্ষ্য দিতেন যে তারা কেউ কোনোদিনও কক্সবাজার শহরের লাগোয়া সমুদ্রে ডলফিনের জলকেলি দেখেননি। আর এটা তো নিশ্চিত যে আজকের পৃথিবীর কেউই পাঁচশ বছর আগে পৃথিবীর পরিবেশটা কেমন ছিলো তা দেখেনি। বলা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার তলানিতে এসে ঠেকায় পৃথিবীর পরিবেশ ফিরে যাবে পাঁচশ বছর আগের পৃথিবীতে আর এমনকি থেমে যেতে পারে দুই মেরুতে হিমবাহগুলোর গলতে থাকাও। আর শুধু অতোদূরের পৃথিবী কেন, করোনাভাইরাস সম্ভবত আমাদের কাছাকাছি সময়ের অতীতটাও দেখার এবং বোঝার সুযোগ করে দিচ্ছে। পঁচাত্তরে আমাদের প্রজন্মের যারা তাদের বয়স ছিলো পাঁচ থেকে সাত বছর।
সে সময়কার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াগুলো আমাদের প্রজন্ম আর আমাদের পরের প্রজন্মের মানুষগুলো জেনেছে পড়ে, শুনে আর তারপর বুঝে। সেসব কাছ থেকে দেখা আছে আমার আগের প্রজন্মের, কিন্তু আমাদের নয়। আমরা চুয়াত্তরের মন্বন্তর আর পঁচাত্তরের প্রেক্ষাপটকে জেনেছি এভাবেই। বাসন্তীকেও চিনেছি একইভাবে। জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বাসন্তীর জালে জড়ানো ছবি সে সময়টায় আওয়ামী লীগ সরকারের ইমেজের উপর ছিলো বড় ধরনের আঘাত। অনেক পরে আমরা জেনেছিলাম মাত্র পঞ্চাশটি টাকার বিনিময়ে বাসন্তী ওই ছবিতে মডেল হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের পুকুর চুরিতে দেশজুড়ে দুর্ভিক্ষ আর বাসন্তীর শরীরে জাল এই ছিলো পঁচাত্তরের ন্যারেটিভ। কেউ একটিবারের জন্যও বলেননি যে, পিএল-৪৮০-এর চাল বোঝাই জাহাজ মার্কিনিরা মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশে দেখা দিয়েছিলো চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য নয়। কেউ একটিবারের জন্যও প্রশ্ন করেননি কেন বাসন্তীর গায়ে শাড়ির বদলে জাল, শাড়ির চেয়ে জালের দাম এখনকার মতো তখনো অনেক বেশি ছিলো।
পঁচাত্তরে বাংলাদেশে বাম্পার ফলন হয়েছিলো, যার সুফল ঘরে তুলেছিলো অবৈধভাবে গদিতে বসা জেনারেল জিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ১৯৭৬-এ। অথচ এই ফলনের কথা পঁচাত্তরে কেউ বলেননি। কারণ পঁচাত্তরে ১৫ অগাস্ট ঘটানো না গেলে ‘৭৬-এ তা হতো অসম্ভব। করোনাভাইরাসের এ কালে অনেকগুলো হিসাব সহসা কেন যেন মিলছে না। এই যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদ কেন হঠাৎ ঢাকায়? এমন তো না যে করোনাভাইরাস কলকাতায় আছে, কিন্তু ঢাকায় নেই। হঠাৎ কেন আওয়ামী লীগ নেতাদের আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চাল আর গম চুরির গল্পে সয়লাব মিডিয়া? আমি অনেক ঘেঁটে বের করেছি ১৪ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত ১২ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ত্রাণ লোপাটের দায়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এর সঙ্গে আরামে যোগ দিতে পারেন আরও জানা দশেক আওয়ামী লীগ নেতার নাম। এই লেখার বাকি অংশটুকু পড়ার আগে একটি ক্যালকুলেটর নিয়ে বসুন। কারও কি জানা আছে এ দেশে মোট নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কয়জন? হিসাবটি জেনে নিন। বাংলাদেশে নির্বাচিত এমপি আছেন ৩৫০ জন, নির্বাচিত পৌর মেয়র ৩৩০ জন, নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ৪৯২ জন, নির্বাচিত পুরুষ ও মহিলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ৯৮৪ জন, নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৪৫৭১ জন এবং নির্বাচিত পুরুষ ও মহিলা ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ৫৪৮৫২ জন অর্থাৎ ৬১৫৭৯ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর এর যতো স্বীকৃত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তাদের সবগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো পর্যন্ত বিবেচনায় আনলে মোট পদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০ লাখেরও বেশি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতাই এদেশে আছেন ৫০ লক্ষাধিক।
তাহলে এখন বলুন এদেশে দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতা আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পার্সেন্টেজ ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব করা সম্ভব কিনা। জানি অবিশ্বাসীরা যুক্তি দেখাবেন, ‘দুর্নীতিবাজের প্রকৃত সংখ্যা আসলে অনেক বেশি, সরকার মিডিয়ার টুঁটি চেপে ধরায় বের হচ্ছে না আসল সংখ্যাটা’। অথচ কেউ একবারের জন্যও দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী আর ডিলারদের হিসাবে আনবেন না। ভুলে গেলে চলবে না যে দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংখ্যা ২৫-এর বেশি। সঙ্গে আছে শতাধিক প্রিন্ট মিডিয়া আর ৫ কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। কাজেই এদেশে আর যা কিছুই সম্ভব হোক না কেন মিডিয়ার টুঁটি চেপে ধরাটা এতো সহজ নয়। করোনাকালের না মেলা হিসাবগুলো মাঝে মধ্যে যে একটু উদ্বিগ্ন করে না, তা কিন্তু নয়। তারপর আবার আশ্বস্ত হই। মনে পড়ে আজকের এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে মানুষ এখন সহজেই সত্যিটা জেনে নিতে পারে। মিলিয়ে দেখতে পারে নিজের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে প্রতিবেশী আর উন্নত দেশগুলোর বাস্তবতাও। কাজেই মানুষকে বোকা বানানো এখন অসম্ভব, এমনকি এই করোনাকালেও। ভালো কথা, বাসন্তীর কথা জানেন কি? ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাসন্তীর খোঁজ রাখেনি কেউই, যদিও তার জাল জড়ানো ছবি দিয়ে আখের গুছিয়েছে অনেকেই। লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ৩ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে
- বুধবার গ্যাস থাকবে না ১২ ঘণ্টা
- স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেফতার
- ভরিতে কমল ৩১৩৮ টাকা
- কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি
- চতুর্থ ধাপের তফসিল হতে পারে আজ
- বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
- স্টুডিওতে আ*গু*ন
- মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন ৪ নভেম্বর
- ঢাকা-না’গঞ্জ লিঙ্ক রোড ছয় লেন হচ্ছে
- আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে
- বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় শোক
- ১৮ টন নিষিদ্ধ ঘনচিনি আমদানি
- স্ত্রীকে হত্যার পর মাটিচাপা
- জিম্মি মার্কিন মা-মেয়েকে মুক্তি দিলো হামাস
- ফ্রান্সে দফায় দফায় বোমা হামলার হুমকি
- আক্ষেপে পুড়ছেন বাবর আজম
- টানা ১৫ দিন চলবে স্মার্টওয়াচ
- জুনেদের ছবি নিয়ে তোলপাড়
- আইনজীবী সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
- জরুরি আইন চায় ইসরায়েল
- যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস পতাকা অর্ধনমিত রাখবে
- গাজাকে সহায়তা দেবে জার্মানি
- বায়তুল মোকাররমে দোয়া-মোনাজাত
- কোথায় আছেন গায়ক জেনস সুমন
- ছিনতাইয়ের পর এক ঘণ্টায় টাকা উদ্ধার
- মার্কিন সেনাঘাঁটিতে চারবার হামলা
- ৯ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বেড়েছে প্রবৃদ্ধি
- ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- গ্লোবাল গেটওয়ের তহবিলে অংশীদার হওয়াই টার্গেট