• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে হাসপাতালে রোগীদের বসবাস!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২১  

মানিকগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালকে ২০১৬ সালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও গেল ৫ বছরে সেবার মানে উন্নয়ন ঘটেনি জেলা শহরের এই হাসপাতালে। দক্ষ চিকিৎসক স্বল্পতার অভাবে ঘরবন্দিভাবে পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশ।

এতে করে চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও রয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন। সরকারি হাসপাতালের সেবা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। ছোট-খাট বিষয় নিয়েও দৌড়াতে হয় ঢাকা পর্যন্ত। হাসপাতালের পরিবেশ এবং অব্যবস্থাপনায় করোনাকালেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল। জরুরি সেবা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতেই যেন স্বস্তি রোগীদের।

মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাবের সংকটকালীন সময়ে মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কোন ব্যবস্থা। সামনে দু-একটা হাত ধোয়ার জন্য বেসিন বসিয়ে রাখলেও যত্নের অভাবে তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে। হাসপাতালের বারান্দা এবং শয্যাগুলোতে অবাধেই ঘোরাফেরা করছে কুকুর ও বিড়াল। সিঁড়ির কোনায় কোনায় জমে আছে ময়লার স্তূপ।

সরেজমিনে সোমবার  মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের নিজ তলায় জরুরি বিভাগ, তত্বাবধায়ক ও আবাসিক চিকিৎসকের অফিস, প্রসূতি বিভাগসহ স্পর্শকাতর সেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের সামনে রোগী ওয়ার্ডের যাতায়াতের রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে কুকুরগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে। বিড়ালগুলো ওয়ার্ডের এপাশ থেকে ওপাশ দৌড়চ্ছে, মুখ দিচ্ছে খাবারে। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে বিড়াল-কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে রোগী এবং স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীন ভূমিকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন ইন্তাজ উদ্দীন বলেন, ‘এই করোনাকালীন সময় সরকার যখন পুরো দেশবাসীকে সচেতন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে নানামুখী কর্মসূচি নিচ্ছে সেই মুহূর্তে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ আনাগোনা কাম্য নয়। কারণ কুকুর জলাতঙ্ক রোগ বহন করে। সেই কুকুরগুলো হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। হাসপাতালটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।'

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীকে দেখতে আসা স্বজন ফালাক বলেন, ‘দেশ যখন হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়তই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র হাসপাতালে যদি এমনভাবে কুকুর শুয়ে থাকে তা হলে সেই হাসপাতালে রোগী কতটুকু নিরাপদ তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানেন। আমরা যখন নিজ গৃহেই করোনা থেকে নিরাপদ নই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে।’

নারী ওয়ার্ডে রোগীর সাথে আসা আরও এক স্বজন পারভেজ মিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য প্রতিনিয়ত ম্যাজিস্ট্রেট জেল-জরিমানা করে যাচ্ছে, যাতে কমে মানুষ সচেতন হয়। সকলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। কিন্তু করোনাকালেও হাসপাতালের মত জায়গাতে এই নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ কখনোই কাম্য নয়।’

প্রশাসনের লোকজন এই দিকে নজর দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সচেতন হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘প্রথমতই আমাদের জনবলে ঘাটতি রয়েছে। আমরা একশ শয্যার জনবল দিয়ে আড়াইশ শয্যা কাভার করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার বিষয়টি জানিয়েছি কোন সুরাহা হচ্ছে না। হাসপাতালের পরিবেশ যথাউপযুক্ত নয় এ বিষয়ে রোগী এবং স্বজনদের অসচেতনতাকেই দায়ী করেন তিনি।