• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কোচের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ব্যাডমিন্টনে!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০১৯  

অনিয়ম আর অদক্ষতাই চলছে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। তা আরো মাথাচাড়া দিয়েছে জাতীয় দলের কোচ নির্বাচন ও নির্বাচনের পদক্ষেপ দেখে। ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য। ব্যাডমিন্টন নিয়ে সিরিজ নিউজ ‘শেষ হলো নাটকীয় চ্যাম্পিয়নশিপ’ শিরোনামে প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়।

ওই নিউজে দ্বিতীয় পর্ব বা শেষ পর্বের কিছু ধারণাও দেয়া হয়। তবে আবারো নতুন ঘটনা সৃষ্ট হওয়ায় আরো এক পর্বের নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। কোচ নির্বাচন করে আবারো বিতর্কের সৃষ্টি করল বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের অনির্বাচিত কমিটি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে চলতি বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হবে সাউথ এশিয়ান গেমসের ১৩তম আসর। ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) আগেভাগেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাম্পও শুরু করেছে বিভিন্ন ফেডারেশন। 

গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনে এসএ গেমসের ক্যাম্প। তার আগে মঙ্গলবার চূড়ান্ত হয়েছে তিনজন প্রশিক্ষক নিখিল চন্দ্র ধর, গৌতম চন্দ্র পাল ও মারুফ আলম। নিখিল চন্দ্র ধরকে নিয়ে কোনো কথা না উঠলেও গৌতম ও মারুফকে মনোনীত করায় অসন্তোষ বিরাজ করছে অন্যান্য কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে।

সূত্র জানায়, এবারের কোচ নির্বাচন হয়েছে ভোটাভুটির মাধ্যমে। সিনিয়র যারা কোচ রয়েছেন তাদেরকে সুযোগ দিতে চায় ফেডারেশন। যেসব কোচ ফেডারেশনের কমিটিতে রয়েছেন এবং যারা এখনো খেলছেন সভাপতির নির্দেশে তারাও বঞ্চিত হয়েছেন। সে হিসাবে ২০১০-২০১২ সালে যারা লেভেল ওয়ান কোর্স করেছেন তারাই প্রাধান্য পেয়েছেন। নিখিল, গৌতম ও মারুফরা সে জন্যই মনোনীত হয়েছেন।

কোনো বাই লজ না থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী টেকনিক্যাল ও ডেভলপমেন্ট কমিটি যোগ্যতা ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরামর্শ করেই কোচ ঠিক করেন।

বর্তমান ফলাফলের দিকে লক্ষ্য করলে অহিদুজ্জামান রাজু, সার্বিক বিবেচনায় এনায়েত উল্লাহ খান ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে জাহিদুল হক কচির নাম থাকার কথা। রাজু আনসারের কোচ হিসেবে এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়শিপে ভালো ফলাফল করিয়েছেন। তার অধীনেই শাপলা আক্তার ট্রিপল ক্রাউন জয়ী হন। যোগ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও তাকে অবমাননা করা হয়েছে না ডেকে। 

লেভেল-টু কোর্স পাস করা এনায়েত পুলিশ দলের কোচ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বাদ পড়েছেন তিনি। কচি ফেডারেশনের সদস্য বিধায় নিয়মের গ্যাঁড়াকলে বাদ। যারা প্লেয়ার তৈরি করেন সেই তারেক জাতীয় দলের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনায় আসেননি। খেলোয়াড় তৈরির কারিগর সিলেটের শিব্বিরের নাম আসেনি লেভেল ওয়ান সার্টিফিকেট নেই বলে। তালিকায় ছিলেন সিলেটের আরেক তারকা এনামও। সে এখনো খেলছে বলে নাম আসেনি। লেভেল-টু সম্পন্ন করা এলিনা সুলতানা বর্তমান প্লেয়ার হিসেবে বিবেচিত। 

সব থেকে মজার ব্যাপার ফেডারেশনের নির্বাচন করা ২ জন কোচই লেভেল-১ শেষ করেছে। এ দিকে কয়েকজন খেলোয়াড় লেভেল-২ শেষ করা। তাহলে লেভেল-১ শেষ করা শিক্ষক লেভেল-২ শেষ করা ছাত্র-ছাত্রীকে কি শিখাবেন? 

এখানে প্রশ্ন হলো কোচ কি শিখাবেন নাকি শিখবেন? আর এতেই বেরিয়ে আসে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা। কেন একজন খেলোয়াড়কে লেভেল-২ কোর্স শেষ করাতে হবে। আসলে ফেডারেশনের নাম ব্যবহার হলেও পেছনে কাজ করছে একটি শক্ত গ্রুপ।

এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহারকে বুধবার দুপুর ৩.২০ মিনিটে তার গ্রামীণ ফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে জানা গেছে, তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবাইকে সুযোগ দিতে চাই। কয়েকজনে বন্দি থাকার কোনো মানে নেই। তা ছাড়া আগামী মাসেই বিদেশ থেকে কোচ আনা হবে। তিনি এসএস গেমস পর্যন্ত থাকবেন। তাতে সবার জন্যই পজিটিভ হবে।’ 

কোচ হিসেবে মনোনীত হওয়া মারুফ আলম ২০১০ সাল থেকে কোচিংয়ে জড়ানো ২০১২ সালে লেভেল ওয়ান করা এবং এবার মালয়েশিয়ায় লেভেল টু করতে গিয়েছিলেন (এখনো ফলাফল দেয়নি)। 

মারুফ জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। এ জন্য ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। এত দিন স্বজনপ্রীতিতে ভরপুর ছিল বলে সুযোগ পাইনি। এম জোন নামে আমার একটা অ্যাকাডেমি থেকে জাকারিয়া নামে একজন শাটলার র‍্যাংকিংয়ে আট পর্যন্ত গিয়েছিল। অভিজ্ঞতার আলোকে জাতীয় দলের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা বের করার চেষ্টা করব। যারা দলে সুযোগ পেয়েছেন, সবাই মেধাবী। ব্যাক আপ ঠিক রেখে কনফিডেন্স ও ডিসিপ্লিনের মাধ্যমে কোয়ালিটি বের করতে পারলেই এসএস গেমসে একটা কিছু করা সম্ভব।

গৌতম বলেন, দল অনুপাতে সবাই সঠিক জায়গায় আছে। এসএ গেমসে ভাল করার চেষ্টা করব। মারুফ ও গৌতমের কোচিং ক্যারিয়ারের ভালো বলার মত তেমন কোন দৃষ্টান্ত তারা যুক্ত করতে পারেননি। তাদের কোচিং করানো জাতীয় র‍্যাংকিংয়ে কোনো খেলোয়াড় নেই। তারপরও অদৃশ্য এক ক্ষমতা বলে তারা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন।

লেভেল-২ কোর্স শেষ করা এলিনা সুলতানা বলেন, যাদের কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা আমাকে কি শিখাবে?

তারা যে আমার ভুল ধরবে, আমি তাদের ভুল ধরে দিতে পারি। তাহলে কি শিখবো আমরা। আমি আবেদন করবো, এই কোচের আন্ডারে কোচিং করতে চাই না।

এ ব্যাপারে ৩৬তম জাতীয় চ্যাম্পিয়শিপে ট্রিপল ক্রাউন জেতা শাপলা আক্তার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘রেজাল্ট করা এত সহজ ব্যাপার না। এর জন্য চাই দক্ষ কোচ আর মানসিক প্রশান্তি। ফেডারেশন যে কোচ নিয়োগ দিয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা কতটুকু? তাদের কোচিংয়ে কোনো খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে নেই। তাহলে কেন তাদের কোচ নিয়োগ দেয়া হলো। আর যাদের হাতে রেজাল্ট আসতেছে কেন তাদের বাদ দেয়া হলো। আমি কিছুই বুঝতেছি না।’

তবে তিনিও এলিনার মতই জানান, আবেদন করবেন এই কোচের আন্ডারে কোচিং না করার জন্য।