• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ছেলেকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চান মা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২০  

দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে ছেলে রফিকুলের। তাকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চান মা সুফিয়া বেগম। কিন্তু টাকার অভাবে সেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর সহায়তায় সপ্তাহে দুইদিন রফিকুলের ডায়ালাইসিস চললেও কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ বহন করতে পারছে না তার অতিদরিদ্র পরিবার।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বুতনী গ্রামের শেখ হবি শেখ-সুফিয়া বেগম দম্পতির ছেলে রফিকুল ইসলাম। এইচএসসি পাস করার পরই থেমে গেছে তার লেখাপড়া। কারণ তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।


পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে বমির সঙ্গে গলা দিয়ে রক্ত বের হতো রফিকুলের। স্থানীয়দের পরামর্শে কবিরাজ দিয়ে করানো হয় জন্ডিসের চিকিৎসা। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানা যায় রফিকুলের দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। এই খবরে যেন অন্ধকার নেমে আসে রফিকুলের পরিবারে।

কারণ রফিকুলের বাবা শেখ হবি (৫৫) সাত বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে আছেন। তিনি নিজে চলাফেরা এবং কথাবার্তা বলতে পারেন না। তার চিকিৎসা করাতেই হিমশিম অবস্থা পরিবারটির।

রফিকুলের বড় ভাই দিনমজুর সফিকুল ইসলাম পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। কৃষিকাজ আর নৌকা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোমতে খাবার জোটে। সেখানে চিকিৎসা করানো অসম্ভব।

তবে রফিকুলের বন্ধু-বান্ধব এবং এলাকাবাসী গত ৯ মাস ধরে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস ইউরোলজি হাসপাতালে সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিস চলছে রফিকুলের।

রফিকুলের মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ছেলে তাকে বার বার বলে- ‘মা আমাকে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই।’ তাই প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করতে চান তিনি। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা তাদের কাছে নেই। এজন্য কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।


পাশেই বসে থাকা রফিকুলও মায়ের কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। রফিকুল বলেন, বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। অনেক কষ্টের মধ্যে সংসার চলছে। স্বপ্ন ছিল নিজে সংসারের অভাব মোচন করবো। কিন্তু আমিও আজ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বন্ধু-বান্ধব সুন্দর স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। আমারও খুব ইচ্ছে করে আগের মতো সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে। আপনারা সহযোগিতা করলে আমি আবার সুস্থ হয়ে ওঠবো ইনশাআল্লাহ।


রফিকুলের ভাই সফিকুল ইসলাম বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রায় ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য আমাদের নেই। দেশ ও প্রবাসের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার ভাইকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতেন তাহলে চির কৃতজ্ঞ থাকতাম।

মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রেজাউল হোসেন জানান, কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস অস্থায়ী চিকিৎসা। এই মুহূর্তে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা জরুরি। এটাই একমাত্র চিকিৎসা। কিডনি প্রতিস্থাপন হলে রফিকুল বেঁচে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আর দশজন যুবকের মতো সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান রফিকুল ইসলাম। সবার সহমর্মিতা আর সহযোগিতাই পারে রফিকুলকে বাঁচিয়ে রাখতে।