• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

‘জিন’ তাড়াতে দল বেঁধে ড. হায়েনার চেম্বারে রোগীরা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২০  

একটি হায়েনা কীভাবে মানুষকে সুস্থ করতে পারে? ভাবতে অবাক লাগলেও বিষয়টির সত্যতা মিলেছে! সোমালিয়ার মানুষরা চিকিৎসক হিসেবে বেছে নিয়েছে একটি জন্তুকে। তার নাম দেয়া হয়েছে ড. হায়েনা। সে-ই নাকি মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের ভালো করে দিচ্ছে!

 

ড. হায়েনা

ড. হায়েনা

মোহাম্মদ শেখ ইয়াকুব ঝিম মেরে ড. হায়েনার সামনে বসে আছেন। সে মানসিকভাবে অসুস্থ। তার হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে লাল সুতা বাঁধা রয়েছে। এই সুতাটির সাহায্যেই নাকি দুষ্টু আত্মাকে বশ করে ড. হায়েনা। ইয়াকুবের পরিবারের সদস্যরা সুস্থতার আশায় তাকে সেখানে নিয়ে এসেছে। বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে সে পাগলের ন্যায় আচরণ করছে বলে জানায় তার পরিবার।

সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতেই একটি লোহার খাঁচায় বন্দী রয়েছে হায়েনাটি। তার সামনে গিয়ে সুস্থতার দাবি জানায় রোগীরা। যারা দুশ্চিন্তগ্রস্থ কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ তাদেরকে নাকি ‘জিন’ এ আছড় করেছে! এমনই ভাবনা সেখানকার বাসিন্দাদের। আর সেই জিন থেকে রক্ষা পেতেই ব্যবহৃত হয় হায়েনাটি। সোমালিয়ানদের ধারণা হায়েনাটিই পারে রোগীর শরীর থেকে জিন তাড়াতে।

 

হয়াকুবকে বসানো হচ্ছে হায়েনার সামনে

হয়াকুবকে বসানো হচ্ছে হায়েনার সামনে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আফ্রিকাতে মাত্র তিনজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানসিক চিকিৎসক রয়েছে। চিকিৎসকের অভাবের কারণেই সেখানকার রোগীরা এসব কুসংস্কারভিত্তিক উপায় বেছে নিচ্ছে। এ বিষয়ে এরদোগান হাসপাতালের নিউরোসার্জন ড. নূর আব্দুল্লাহি কারশি বলেন, হায়েনা কীভাবে মানুষকে সুস্থ করবে? এটি একেবারেই অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড। মানুষের অন্ধবিশ্বাস। এতে করে রোগীর আরো অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দিরহমান আলি আওয়ালি বলেন, আমি সবসময়ই তাদেরকে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করি। এসব ভিত্তিহীন কুসংস্কারে যাতে কারো প্রাণ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার চেষ্টা করি। তারা যেন ড. হায়েনার কাছে না যায় সে বিষয়েও তাদেরকে বলা হয়েছে। তবে তাদের ধারণা, সেখানে গেলেই না-কি তারা সুস্থ হয়ে যায়!

খাঁচায় বন্দী হায়েনা

খাঁচায় বন্দী হায়েনা

এমনই এক নারী ফাতুমা আহমেদ। সম্প্রতি তার ১৩ বছরের কন্যাকে নিয়ে তিনি ড. হায়েনার কাছে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এখানে আসার পূর্বে আমি মেয়েকে মোগাদিশুর প্রতিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু টাকা ও সময় দু’টোই নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে ড. হায়েনার চিকিৎসায় আমার মেয়ে সুস্থ আছে।

জানা গেছে, বিগত চার বছর ধরে এই নিয়মে মানুষের শরীর থেকে জিন তাড়ানোর কাজ করছে ড. হায়েনা। এসময় একটি ঘরে রোগী ও হায়েনা ছাড়া আর কেউ থাকে না। হিংস্র এক জন্তুর আশেপাশে থাকলেও তবুও আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ আহত হয়নি। তার সামনে যাওয়ার সময় রোগীর কনিষ্ঠ আঙুলে বেঁধে দেয়া হয় এক টুকরো লাল সুতা। ধারণা করা হয়, আঙুল নয় বরং এভাবে দুষ্টু আত্মাকে বাঁধা হয়। 

 

হায়েনাকে পানি ও মুরগি খাওয়াচ্ছেন আলী

হায়েনাকে পানি ও মুরগি খাওয়াচ্ছেন আলী

আলী নামের এক ব্যক্তি এই হায়নাটিকে ছোট অবস্থায় ধরেছিলেন। তিনি একজন শিকারি। অতঃপর তিনি তাকে অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে এক রুমে রাখেন। কয়েক দিন পর তিনি লক্ষ্য করেন, অত্যন্ত হিংস্র হওয়া স্বত্ত্বেও সে অন্য কোনো প্রাণীকে আচঁড় পর্যন্ত কাটেনি। এরপর তার বোন শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর এক মনে সে নাকি হায়েনাটির দিকে তাকিয়ে থাকত। আর রহস্যময়ভাবেই সে সময় হায়েনাটি বিচলিত হয়ে পড়ত। এরপর দেখা যায় আলীর বোন কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। এরপর তার বোনকে দেখলেও আর বিচলিত হত না হায়েনাটি।

 

ইয়াকুবের হাতে লাল সুতা বাঁধা হচ্ছে

ইয়াকুবের হাতে লাল সুতা বাঁধা হচ্ছে

আলী বলেন, আমি হায়েনাটিকে ১২০০ ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। তবে এর ব্যবহার দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ভাবলাম সে তো পোষ মেনেছে, নিজের কাছেই বরং রেখে দেই। এরপর একটি ঘরে লোহার খাঁচা বানিয়ে তাকে রাখা শুরু করি। আমি ভাবলাম, সে যেহেতু আমার বোনকে সুস্থ করেছে অন্যদেরকেও পারবে। এরপর থেকে একজন দুইজন করে রোগী হায়েনার শরনাপন্ন হতে শুরু করে। এখন রোগীর আর অভাব নেই। প্রতি সেশনে ১০ ডলার করে চার্জ নেয়া হয় রোগীর কাছ থেকে। এ পর্যন্ত সবাই উপকৃতই হয়েছেন। 

ইয়াকুব আলী যখন হায়েনাটির সামনে বসেছিল, তখন মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার সেশন শেষ হয়ে যায়। তাকে দেখে ড. হায়েনা কয়েকবার মাথা ঘুরায়। আলীর ধারণা, সে ইয়াকুবের শরীরে জিনের কোনো অস্তিত্ব পায়নি এজন্যই তাকে চলে যেতে বলেছে। অতঃপর ইয়াকুব সেখান থেকে ফিরে আসে। ড. হায়েনার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই ইয়াকুব তিনবার সেখানে গিয়েছিলেন। তবে আকস্মিভাবে প্রতিবারই তিনি ড. হায়েনার কাজ থেকে একইরকম আচরণ লক্ষ্য করেছেন।