• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

টাঙ্গাইলে গরু চুরির হিড়িক!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২১  

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় গরু চোরদের তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় হানা দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর দল। গরু চোর চক্রের বেপরোয়া অপতৎপরতায় কৃষক ও খামারীরা আতঙ্কে রাত জেগে গোয়াল ঘর পাহারা দিচ্ছেন।


গত এক সপ্তায় দুই এলাকার দু’জনের বাড়ি থেকে ৯টি গরু চুরি হয়েছে। ইতোমধ্যে চোরদের গুলিতে শহীদ খান নামে এক ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানায়, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে ওঠার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় গভীর রাতে গোয়াল ঘর থেকে গরু চুরি করে নম্বরবিহীন ট্রাক, ভটভটি, পিকআপ, সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায় চোরদল।

এসব ঘটনায় খুব কম সংখ্যক মামলাই থানায় রেকর্ডভুক্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিকার না পাওয়ার আশঙ্কা বা পুলিশি হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করেন না। ফলে চোর দল নিরীহ কৃষক বা খামারীর গরু চুরি করে নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাচ্ছে। 


এলাকাবাসী জানায়, দেলদুয়ার উপজেলার কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো গরু দিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। চোর দল মূল্যবান গরু চুরি করে নেওয়ায় ইতোমধ্যে হতদরিদ্র কৃষক পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তারা জানায়, রাতে যেসব সড়কে আলো কম থাকে কিংবা অনেকটা নির্জন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি উন্নত বিশেষ করে সে সব এলাকায় চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি জানান, চোররা গোয়াল ঘর থেকে রশি কেটে অথবা খুলে গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। রাতে গাড়ির ভেতর গরু দেখলে জনতা সাধারণত আটক করতে ভয় পায়। থানায় মামলা করলে উল্টো নিজেদেরকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়।

এ কারণে সংঘবদ্ধ চোর দল সহজে পার পেয়ে যায়। পুলিশের নজরদারির অভাব তথা রাতে পুলিশি টহল না থাকায় চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেন।

বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ডুবাইল গ্রাম। সোমবার(১৮ জানুয়ারি) রাতে ওই গ্রামের হাসেন আলী খানের ছেলে হাসমত আলীর একটি গাভি এবং তার ভাই বাছেদ খানের একটি ষাঁড় ও একটি গাভি চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোরচক্র।

ডুবাইল গ্রামের মনির হোসেন জানান, সম্প্রতি গরু চুরির ঘটনা টের পেয়ে পাশের বাড়ির রঙ্গু খানের ছেলে শহীদ খান বাধা দিতে যান। ধাওয়া করে মহাসড়কের পাশে পৌঁছলে তাকে লক্ষ্য করে চোররা রাবার বুলেট ছুঁরে। এতে তিনি বুলেটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

দেলদুয়ারের লাউহাটি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাসমত আলী খান জানান, লাউহাটি, ফাজিলহাটি, কুমুল্লি, চর কুমুল্লি, এলাসিন, ডুবাইল, বর্ণী, চুক্তানপুর, নাটিয়াপাড়া প্রভৃতি এলাকায় চোরের উপদ্রব বেশি।

প্রায় প্রতি রাতে গোয়াল ঘরে চোরদল হানা দিয়ে থাকে। বাধ্য হয়ে গরুর মালিকরা পালা করে রাত জেগে গোয়াল ঘর বা গরু পাহারা দিয়ে থাকে।

লাউহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক পলাশ ভূঁইয়া জানান, লাউহাটি গ্রামের অতি দরিদ্র লালভানু তার স্বামী কেছু পাগলার সাথে গরু লালন পালন করে দুধ বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালিয়ে থাকেন।

কয়েকদিন আগে তার তিনটি গরু চুরি হয়ে গেছে। তারা দুধ বিক্রি করে পরিবারের খরচ চালান। এখন ভিক্ষা করা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই। গরু চুরি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দেলদুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, গরু চুরির বিষয়টি তারা জানতে পেরেছেন।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, শীতের এই সময়টাতে এরকম চুরির ঘটনা সারাদেশেই একটু বাড়ে, তবে দেলদুয়ারে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।