• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্যে ভর করে এগোচ্ছে রফতানি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২১  

গত বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে কমতে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ে। ওই বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে অবস্থা আরও জটিল হয়। সরকার দীর্ঘ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে স্থবিরতা নেমে আসে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। বিশেষ করে রফতানির প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প পড়ে নিদারুণ বিপদে। হাতছাড়া হতে থাকে ক্রয়াদেশ। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এগোতে থাকেন পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি টালমাটাল, তখনও ভরসা যোগাচ্ছে সেই পোশাকশিল্প। এর সঙ্গে আছে পাটজাত পণ্য। এ দুই শিল্পের পণ্যের ওপর ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের রফতানিখাত।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে হাতছাড়া হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ক্রয়াদেশ। নতুন অর্থবছরের রফতানি আয় গত অর্থবছরের তুলনায় পিছিয়ে যেতে শুরু করে। তবে ওই বছরের শেষান্তে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সামলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রফতানিখাতও উঠে দাঁড়ায়। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চের অর্থাৎ অর্থবছরের নবম মাসের হিসাব মতে, ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে দেশের পোশাক রফতানি।

 লকডাউন চললেও কলকারখানাগুলো খোলা আছে। এর ফলে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রফতানি আয়ে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বিগত অর্থবছরের নয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এই নয় মাসে সামান্য পিছিয়ে ছিল দেশের রফতানি। তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, সাইকেল, পরচুলাসহ বেশকিছু পণ্য ধারাবাহিকভাবে রফতানিতে ভালো করছে। এর মধ্যে প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্য।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত (৯ মাসে) পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৮৯৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। আর গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩০৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে থেকে ২৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়।

অর্থবছরের ৯ মাসে দুই হাজার ৩৪৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের। নিট পোশাকের এই রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৯ মাসে এক হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়।

jagonews24

 চলতি বছরে রফতানি আয় গত বছরের তুলনায় বাড়বে। কারণ ২০২০ সাল পুরোটাই করোনাভাইরাস-লকডাউনে আটকা ছিল। ২০২১ সাল কিছুটা ভালো যাচ্ছে। সেই হিসাবে রফতানি আয় বাড়বে 

এছাড়া চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ৯৫ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৭ কোটি ডলার। বার্ষিক হিসাবে ২২ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে এই খাতে।

একই সময়ে হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি হয়েছে ৮৪ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ কোটি ডলার বেশি।

করোনার মধ্যে দেশের রফতানির প্রবৃদ্ধি ভালোই হচ্ছে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি আমাদের ভালো ছিল। প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশের মতো। করোনার মধ্যেও আমরা ভালো করছি।

তিনি আরও বলেন, লকডাউন চললেও কলকারখানাগুলো খোলা আছে। এর ফলে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রফতানি আয়ে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম।

ড. জাফর উদ্দিন বলেন, তৈরি পোশাকের প্রচুর অর্ডার আছে। মিয়ানমারে সহিংস পরিস্থিতির কারণে ওদের অনেক অর্ডার এদিকে আসছে। আশা করি সামনে রফতানি আয় আরও বাড়বে।

jagonews24

করোনার মধ্যে রফতানির এ ধরনের প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তৈরি পোশাকশিল্প উদ্যোক্তা এবং বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, খারাপ সময়ের মধ্যে আমরা সামান্য হলেও ভালো করছি। এটা ইতিবাচক।

করোনায় নিট পোশাকের রফতানি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনায় মানুষ ঘরবন্দি। আর বাসায় পরার পোশাকগুলো সাধারণত নিটের তৈরি। অফিস আদালত না হওয়ায় মানুষ ক্যাজুয়াল ড্রেস পরে বের হচ্ছে। এ ড্রেসগুলো সাধারণত নিটেরই। সারাবিশ্বে এ ধরনের পোশাকের চাহিদা বাড়ায় আমাদের তৈরি পোশাক তুলনামূলক ভালো করছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে রফতানি আয় গত বছরের তুলনায় বাড়বে। কারণ ২০২০ সাল পুরোটাই করোনাভাইরাস-লকডাউনে আটকা ছিল। ২০২১ সাল কিছুটা ভালো যাচ্ছে। সেই হিসাবে রফতানি আয় বাড়বে।

বিকেএমইএর পরিচালক বলেন, খারাপ সময়ে আমাদের রফতানি ভালো করছে। তবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষ বিপদ বা মহামারির সময় বেশি কেনে। খাবারের পরই দরকার হয় পোশাকের, সে কারণেই হয়তো তৈরি পোশাক একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে এই কঠিন সময়ে।