• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দ্বিতীয় শ্রেণি পাস ছাত্রের কবিতায় তিনজনের পিএইচডি অর্জন

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২০  

তেলতেলে কুকড়ানো লম্বা চুল, সাদা ধুতি আর গেঞ্জি পরণে ব্যক্তি চানা-ঘুগনি বিক্রি করেন। বাহ্যিক রূপ দেখে কারো নজরে আসার উপায় নেই। সাধারণ ভেবে চোখ ঘুরিয়ে নিতেই পারেন সবাই। কিন্তু এ ব্যক্তির অসাধারণ প্রতিভায় কাত হালের সব আধুনিক কবিতার পাঠকও। তার সম্পর্কে যত জানবেন, আপনি তত অবাক হবেন। দ্বিতীয় শ্রেণি পাস করা কবির কবিতায় সাহিত্যের মুক্তা ঝরেছে। এরইমধ্যে তার কবিতা গবেষণা করে তিন শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কবির ঝুলিতে রয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ চতুর্থ বেসামরিক পদ্মশ্রী সম্মাননাও।

এমন প্রতিভাধর ব্যক্তি সম্পর্কে বেশ চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। পত্রিকাটির তথ্যানুযায়ী, সাদামাটা প্রতিভাধর কবির নাম হলধর নাগ। ১৯৫০ সালে ওড়িষ্যার সম্বলপুর থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরে বরগড় জেলায় তার জন্ম।

 

সাধারণ ঘরে কবির বসবাস

সাধারণ ঘরে কবির বসবাস

দেশটির জনপ্রিয় কবিদের মধ্যে তিনি একজন। বাহ্যিক পোশাকে তাকে চেনার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এ মানুষের ভেতরে রয়েছে বিশাল প্রতিভা। তবে তার জীবনের শুরু সুখকর নয়। রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার পর তার মনে তিল পরিমাণ অহংকার নেই। তাই এখনো ওড়িষ্যার সম্বলপুরের সড়কে মাঝে মাঝে তাকে চানা-ঘুগনি বিক্রি করতে দেখা যায়।

জীবন সংগ্রামী হলধর নাগ দ্বিতীয় শ্রেণি পাস করার পর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় ১০ বছরেই জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন। প্রথমে মিষ্টির দোকানে বাসন ধোয়ার কাজে তাকে লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে আবার স্কুলে পাঠানো হয়, তবে লেখাপড়ার জন্য নয়, রান্না করার জন্য।

১৬ বছর এক স্কুলের রাঁধুনির কাজ করেছেন। একই এলাকায় বেশ কিছু স্কুল চালু হয়। তখন ব্যাংক থেকে এক হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্কুলের বাইরে ছোট স্টেশনারি দোকান চালু করেন হলধর। তবে রান্না পেশা ছাড়েননি তিনি। ছোটবেলা থেকে ছোটগল্প লিখতেন। কিন্তু সব ছিল লুকানো অধ্যায়।

১৯৯০ সালে প্রথম কবিতা লিখতে কলম ধরেন। ‘ধোদো বরগাছ’ অর্থাৎ বুড়ো বটগাছ নামে তার প্রথম কবিতায় সাহিত্যের মুক্ত ঝরতে থাকে। কবিতাটি স্থানীয় ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। একে একে আরো চারটি কবিতা লিখে পাঠালে সেগুলোও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। সব কবিতা যখন সর্ব মহলে প্রশংসিত হতে থাকে, তখন দ্বিগুণ উৎসাহে কবিতা লেখায় মনোযোগী হন হলধর। তার লেখায় উঠে আসে ধর্ম, প্রকৃতি, সমাজ।

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সংগ্রামী ছেলের হাতের কলম জাদুর মতো কাজ করতে থাকে। তার নামের পাশে ‘লোক কবি রত্ন’ তকমা লেগে যায়। জনপ্রিয় কবির সব কবিতা নিয়ে ‘হলধর গ্রন্থাবলী’ প্রকাশিত হয়েছে। যেটি প্রকাশ করে সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তার দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। এ মুহূর্তে কবি হলধর নাগের কবিতা নিয়ে পাঁচজন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

 

তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নেন কবি।

তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নেন কবি।

২০১৬ সালে তার হাতে উঠে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী। তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তার হাতে সম্মাননাটি তুলে দেন। এছাড়া তাকে ডক্টরেট ডিগ্রিতে সম্মানিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সম্মাননাটি দেয় সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পুরস্কার নেয়ার পর মেয়েসহ কবি

পুরস্কার নেয়ার পর মেয়েসহ কবি

এতো অর্জন, এতো খ্যাতি, এতো সম্মাননা হলধরকে বিশেষ শ্রেণিতে ফেলতে পারেনি। ৮-১০ জনের মতো সাধারণ জীবনযাপন তার। স্ত্রী মালতি নাগ ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার।