• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ধামরাইয়ে ১৫-২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও মামা-ভাগনে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

ঢাকার ধামরাইয়ে রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতির নাম করে শত শত মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে প্রতিষ্ঠানের মালিক মইনুল ইসলাম ময়নাল (৫০) ও তার ভাগিনা আবদুল হালিম (২৮)।

ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকার শত শত নিরীহ ও দরিদ্র গ্রাহকদের তিলে তিলে জমানো কষ্টার্জিত টাকাসহ এলাকার বিত্তশালীদের আমানতের ওপর অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান মইনুল ও আবদুল হালিম।

অভিযুক্ত মইনুল ইসলাম ময়নাল ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মোড়ারচর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। তিনি কালামপুর বাজারে মুদি দোকানদারি করতেন। মইনুলের ভাগিনা সোমভাগ ইউনিয়নের দেপাশাই গ্রামের স্কুল পাড়া এলাকার মুক্তার আলীর ছেলে আবদুল হালিম। তিনি কৃষি কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু মইনুলের নিজ এলাকা মোড়ারচর থেকেই ছয়শত মানুষের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মইনুল। নিরীহ মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা সঞ্চয়ের জন্য রেখেছিলেন মইনুলের রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতিতে। এছাড়াও এলাকার বিত্তবানদের আমানতের ওপর অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিশ্বস্ততার জন্য স্ট্যাম্প করে তাদের আমানত সংগ্রহের মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মামা ভাগনে।

এর আগে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ ধামরাই উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে ৫৬৫ নম্বরে রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতি' নামে নিবন্ধন করে আনেন মুইনুল ইসলাম। পরে তার বোনের ছেলে আবদুল হালিমকে সাথে নিয়ে সমিতিটি পরিচালনা করেন।

এর মধ্যেই উপজেলার কালামপুর, দেপাশাই, ভালুম, মোড়ারচর, কাশিপুর, বরাটিয়া, বাথুলী, শৈলানসহ আরো কয়েকটি গ্রামের শত শত লোকের কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে ও আমানতের ওপর অধিক লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে মইনুল ও হালিম। মানুষকে বিশ্বাস করাতে কয়েক মাস আমানতের উপর লাভের টাকাও দেন তারা। এতে অধিক লাভের আশায় আশপাশের আরো মানুষ টাকা জমা রাখেন। কেউ কেউ ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকাও জমা রেখেছেন বলে বার্তা২৪.কমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এভাবেই কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে হঠাৎ একদিন সব অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান মইনুল ও তার ভাগনে হালিম। 

জীবনের শেষ সম্বল এভাবে হরিয়ে টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

আবদুল হালিম তার নিজ এলাকা দেপাশাই গ্রামের শতাধিক মানুষের কাছ থেকে এভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। হালিম ও মইনুল পালানোর পরে দেপাশাই গ্রামের অর্ধশত ভুক্তভোগী হালিমের বাবা মুক্তার আলীকে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দেন।

এর এক পর্যায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কয়েক জন ভুক্তভোগী হালিমকে দেয়া টাকা ফেরত না পেয়ে হালিমের বাড়িতে থাকা ছয়টি গরু নিয়ে বিক্রি করে দেন। এ ঘটনার পরদিন হালিমের বাবা ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে বিক্রি করা গরু উদ্ধার করে হালিমের বাবাকে ফিরিয়ে দেন পুলিশ।

এর আগে টাকা উদ্ধারের জন্য প্রায় ১০ জন গ্রাহক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মামা-ভাগনের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম জনান, মইনুলের নিজের গ্রাম মোড়ারচর থেকেই প্রায় ছয়শত লোকের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। আমি নিজেও ৪ লাখ টাকা রেখেছিলাম। আমাদের মত এমন হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মইনুল।

ভুক্তভোগী আবদুস সাত্তার জানান, আমি ৬ লাখ টাকা রাখছি। মইনুলেরও কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না।

নাম প্রকাশে আরেকজন জানান, আমাদের এসব টাকা নিয়ে মইনুল বিভিন্ন জাগায় জমি কিনেছে বাড়ি করেছে। শুনেছি কালামপুরও একটি তিন তালা বাড়ি করেছে। সেই বাড়ি বিক্রি করে নাকি আমাদের টাকা ফেরত দিবে এমনটা শুনেছিলাম। কিন্তু আজ পাঁচ-ছয় মাস হয়ে যায় সেই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা কোন টাকা পাই নাই।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা পারভীন আশরাফী বলেন, 'রোজ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মইনুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে হালিম  গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে শুনেছি। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।