• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

‘না জানি কত কষ্ট কইরা আমার ছেলেডা মরছে’

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০  

বারান্দায় গড়াগড়ি করে কাঁদছেন জুলহাসের মা। পাশেই বিলাপ করছেন তার স্ত্রী। আর নিষ্পাপ শিশু দুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। বাড়িভর্তি মানুষ। কোনো সান্ত্বনাতেই যেন কান্না থামছে না বউ-শাশুড়ির। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় অতিদরিদ্র পরিবারটি।

শনিবার সকালে মানিকগঞ্জে নিহত পরিচ্ছন্নতা কর্মী জুলহাস হোসেনের পরিবারে এভাবেই আহাজারি চলছিল। আকিজ টেক্সটাইলের ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সহকর্মীরা পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।


সকালে সাটুরিয়া উপজেলার ভাসিয়ালি কান্দাপাড়া গ্রামে নিহত জুলহাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী জুলেখা বেগম বিলাপ করে বলছেন, ‘আমি এখন কি করবো রে..দুইটা বাচ্চা নিয়ে কার কাছে দাঁড়াবো। তুমি আমারে কি কইরা গেলা।’

মা ফজিরুন বেগম মাটিতে গড়াগড়ি করে বলছেন, ‘না জানি কত কষ্ট কইরা আমার ছেলেডা মরছে। আমি এর বিচার চাই। সবার ফাঁসি চাই।’ বউ-শাশুড়ির এমন আহাজারি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি উপস্থিত নারী-পুরুষরা।

নিহত জুলহাসের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমান জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট বেলা থেকেই সংসারের হাল ধরেন জুলহাস। বিধবা মা, স্ত্রী আর ১০ বছরের মেয়ে এবং চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। জুলহাস ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও তিন মাস আগে মানিকগঞ্জ আকিজ টেক্সটাইল মিলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ নেন। জুলহাসই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

তিনি আরও জানান, দুই চালা ছোট্ট একটি টিনের ঘর ছাড়া কোনো জায়গা জমি নেই জুলহাসের। কোনো মতে খেয়ে-পরে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে জুলহাস মারা যাওয়ায় যেন অথৈ সাগরে পড়ল পুরো পরিবার। জুলহাসের মেয়ে সাথী চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন মেয়েটিরও হয়তো লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।


গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগিরে আকিজ টেক্সটাইল মিলে দায়িত্বরত ছিলেন জুলহাস হোসেন (৩৯)। এ সময় চার সহকর্মী তার পায়ুপথে কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়। এতে পেট ফুলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে জুলহাসকে মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মৃত্যু হয় তার। শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে জুলহাসের মরদেহ দাফন করা হয় গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে।

এ ঘটনায় জুলহাসের স্ত্রী জুলেখা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজাহার নামীয় চারজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এরা হলেন- সদর উপজেলার কামারদিয়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে মো. বিজয় (২৭), ঘিওর উপজেলার বন্যাপ্রসাদ গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে মো. সোহেল রানা (২০), সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্যা দক্ষিণপাড়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে মো. লাবু (২০) এবং সদর উপজেলার চান্দির চর গ্রামের মোগর আলীর ছেলে সমির আলী (২২)। আসামিরা সবাই ওই কারখানার শ্রমিক।

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর সাহা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পায়ুপথে বাতাস দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না এবং ঘটনার মোটিভ কী তা অনুসন্ধান করা দেখা হবে।