• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরীক্ষা বাড়ালেই রোগী বাড়ে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২১  

দেশব্যাপী গত কয়েক দিনে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। বিভিন্ন জেলায় সেই তুলনায় পরীক্ষার হার বাড়েনি। তবে যতটুকুই বেড়েছে, তাতে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বেশি শনাক্ত হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলার গত ৪৮ ঘণ্টার পরীক্ষার রিপোর্টের তুলনামূলক চিত্রে এটা পর্যবেক্ষণ করা যায়। তাতে এও দেখা যায়, পরীক্ষা কমে গেলেই কমে যাচ্ছে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। আবার কিছু কিছু জেলায় কম পরীক্ষার মাঝেও বেশি হারে করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাছাড়া দিনাজপুর, সিলেট, নীলফামারী, নোয়াখালী, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো তো আছেই।

দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় ঢাকা জেলায় করোনা শনাক্তের হার কম। যদিও তা হাজারের কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৫৬২টি, এরমধ্যে ১০ হাজার ৬৫৩টি নমুনাই ঢাকা শহরের। বাকি ২ হাজারের কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পুরো বিভাগে। এতে দেখা যায়, আগের দিনের তুলনায় শনাক্তের হার বেড়েছে ফরিদপুর জেলায়। সেখানে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ৮৯ জন, যেখানে আগের দিন ২৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত ছিল ৫৭ জন। অন্যান্য জেলার মধ্যে দেখা গেছে—গাজীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৮টি নমুনার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ১১৫ জন। এই জেলায় আগের দিন ৩৪১টি নমুনার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ৫৯ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে স্থিতিশীল অবস্থা দেখা যায় গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ জেলায়। তবে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, নরসিংদীসহ অন্যান্য জেলায় দেখা গেছে, করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়লে পজিটিভের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আবার যেসব জেলায় একদিনের ব্যবধানে পরীক্ষা কমে গেছে, সেসব জেলায় পজিটিভের সংখ্যাও কমে গেছে।


ফরিদপুরে করোনা পরিস্থিতি এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একদিনে শনাক্তের হার  দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আমাদের এখানে মে মাসের শেষ থেকে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে এখানে মানুষের প্রচুর অনীহা। এখন সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। আমি জেলা প্রশাসনকে লকডাউনের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলায়ও দেখা গেছে, নমুনা পরীক্ষা আগের দিনের তুলনায় কমে যাওয়ায় কমে গেছে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। চট্টগ্রাম বিভাগে একমাত্র বান্দরবান জেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা নেই বললেই চলে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় একদিনের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ছিল ১৬৯ জন, আর আগের দিন তা ছিল ১০৭ জন। এ জেলায় পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। একইভাবে কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলায় দেখা গেছে একই চিত্র। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা সামান্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

পরীক্ষা বাড়ার কারণে করোনার চিত্র পাল্টে যাওয়ার নজির পাওয়া গেছে রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল এবং সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায়। সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন জানান, সেখানে সামান্য বেড়েছে শনাক্ত। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে।

 

তুলনামূলক পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন,  ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশের সীমান্ত এলাকাসহ নোয়াখালী ও মানিকগঞ্জ পর্যন্ত চলে এসেছে। অর্থাৎ ঢাকার কাছাকাছি চলে আসছে। এখন সাবধান না থাকলে বিপদ হবে। করোনা সংক্রমণ বেশি। এসব এলাকার আম ব্যবসায়ীদের জন্য সংক্রমণ বাড়তে পারে। যেখানে বাড়ছে সেখানেই লকডাউন দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেখানে বিনামূল্যে টেস্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে নমুনা টেস্টের সংখ্যা সেই তুলনায় বাড়ছে না।’

সীমান্ত বন্ধ রাখার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফরমাল চ্যানেল নয়—এমন পথেও লোক যাওয়া-আসা করে। ইনফরমাল চ্যানেল দিয়ে লোক যাওয়া-আসা করে, সেটা থামানো কঠিন। আমাদের পুলিশ-বিজিবি-প্রশাসন সবাই চেষ্টা করছে, যতখানি সম্ভব  বর্ডার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভাগ ওয়ারী পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, বরিশাল বিভাগ কিছুটা জায়গায় আছে। তাছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চাপ বাড়ছে। সেই তুলনায় ঢাকায় চাপ কম আছে। আমরা যদি শতকরা হারে বিবেচনা করি সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঢাকা শহরে গড়ে এখনও সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।’ তবে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, সেটি নির্ভর করবে বিদ্যমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে, সে অনুপাতে রোগীর সংখ্যার ওপর। আমাদের যা সক্ষমতা রয়েছে, এ মুহূর্তে কোভিড ডেডিকেটেড ৭ হাজার শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে যদি রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার হয়ে যায়, তাহলেই সেটি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াবে।’