• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের টাকায় পাকা ঘর উঠছে স্বপ্নার বাড়িতে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়ার জয়রাম গ্রামের মো. মোকছার আলী ও গৃহিণী লিপি বেগম দম্পতির কোনো ছেলে নেই। তাদের তিন কন্যার মধ্যে ছোট সিরাত জাহান স্বপ্না জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার। বড় দুই সন্তান মুক্তাজিনা ও সানজিনার বিয়ে দিয়ে স্বপ্নাকে নিয়ে কোনোমতে ব্যবসা করে সংসার চালাতেন মোকছার আলী। এখন ছোট মেয়ের ফুটবল থেকে উপার্জিত অর্থে বদলে গেছে পুরো পরিবারের চেহারা। ধানের ব্যবসা ছেড়ে জমি রেখে তা দেখাশোনা করছেন স্বপ্নার বাবা। ধান, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, আদাসহ অনেক ফসল ফলান মোকছার আলী।

জয়রাম গ্রামের বাড়িতে টিনের ঘর ছিল স্বপ্নাদের। এখন সেটা ভেঙে নতুন পাকা ঘর উঠেছে। গ্রামেও কদর বেড়েছে স্বপ্নার। বাড়ি গেলে অনেকে তাকে দেখতে আসেন। স্বপ্না বলেন, ‘৫-৬ বছর আগের স্বপ্না আর এখনকার স্বপ্নার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ফুটবল আমার এবং আমার পরিবার বদলে দিয়েছে।’

এ সব কিছু হয়েছে যে ফুটবল খেলে, সেই ফুটবল সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। ‘ছোট সময় এমনিতেই গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ফুটবল খেলতে নামতাম। ক্রিকেটও খেলতাম। কিন্তু ফুটবল নিয়ে কোনো স্বপ্ন ছিল না। ফুটবলের জাতীয় দল আছে, বিদেশে যাওয়া যায় এসব তো আমার মাথায়ই ছিল না। পরে বয়সভিত্তিক দলে ডাক পেয়ে বুঝতে লাগলাম। শুনলাম। নিজের মধ্যেও স্বপ্ন তৈরি হলো’- ফুটবলার হওয়ার গল্পটা এভাবেই শুরু করলেন এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়া স্বপ্না।

২০১১ সালে স্বপ্না যখন রংপুরের ১ নং কালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, তখন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হয়ে অংশ নেন বঙ্গমাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে। রানার্সআপ হয় তাদের স্কুল। পরের বছর চ্যাম্পিয়ন। ২০১৩ সালে প্লানের ক্যাম্পে ডাক এবং তার পরের বছর বাফুফের ক্যাম্পে। দ্রুত স্বপ্নার ফুটবল ভুবনটা বড় হতে থাকে।

football1

২০১৫ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৫ রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই বদলে যায় নারী ফুটবলে বাংলাদেশের রঙটা। ওই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ড তাজিকিস্তানে খেলেও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। এভাবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্ব, অনূর্ধ্ব-১৮ তে বাংলাদেশ সেরা এবং সিনিয়র সাফে রানার্সআপ। এসব সাফল্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দু'হাত ভরে উপহার দিয়েছেন মেয়েদের। ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন মেয়েরা।

সিরাত জাহান স্বপ্না তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন মোট ১৪ লাখ টাকা। একবার ১০ লাখ, আরেকবার ৩ লাখ এবং আরেকবার ১ লাখ। এর বাইরে বাফুফে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া মিলে স্বপ্নার অর্জন ২০ লাখ টাকার মতো। একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের চেহারা বদলে দেয়ার জন্য যে টাকা যথেষ্ট।

বদলে গেছে স্বপ্নাদের পরিবারও। ‘আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। সবই হয়েছে ফুটবল খেলে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক দিয়েছেন। এটা ধারণারও বাইরে’- বলেন সিরাত জাহান স্বপ্না। ফুটবল খেলে অর্জিত টাকার মধ্যে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রেখেছেন ১০ লাখ। বাকি টাকা দিয়ে পাকা ঘর বানাচ্ছেন, জমি রেখেছেন। সেই জমিতে এখন তার বাবা মানুষ দিয়ে কাজ করান। জমিজমা তদারকি করেই এখন সোনার সংসার স্বপ্নাদের।

স্বপ্নার ক্যারিয়ারে অবশ্য ইনজুরি হানা দিয়েছে দুবার। এর মধ্যে বড় ধরনের চোট পেয়েছেন গত বছর বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সময়। কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিড়েছে। গত জুনের ২৬ তারিখ রাজধানীর একটি হাসপাতালে পায়ের অপারেশন হওয়ার পর ৭-৮ মাস ধরে নিজেকে মাঠের জন্য তৈরি করে তুলছেন।

কখনো সাইকেল চালানো, কখনো সাঁতার কাটা, কখনো সিঁড়ি বেয়ে ওঠা- এভাবে দিনে ছয়টি সেশন পার করে স্বপ্না এখন পুরোপুরি ফিট। ইনজুরি আর মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে চলমান নারী লিগে নাম লেখাননি স্বপ্না। পুরোপুরি তৈরি হয়েই নামতে চান মাঠে। আবার গোলের পর গোল করে কাঁপাতে চান প্রতিপক্ষের জাল।