• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রেমের টানে বাংলাদেশে: কারো সংসার টিকেছে, কেউ পালিয়েছে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২০  

ধর্ম-বর্ণসহ নানা ধরনের সংস্কার ও জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে প্রেম-ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন অনেক বিদেশী তরুণী। এটি এখন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয়ের সূত্র ধরে ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে।

সকল ভেদাভেদ ভুলে সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে। ভালোবাসার টানে ঘর ছাড়ার ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটলেও বর্তমান যুগে দেশ ছাড়ার বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। বিষয় গুলো মিডিয়ার বদৌলতে আলোচিত হয়েছে। অনেকেই প্রেমের টানে দেশ ছাড়লেও হয়নি কোন সংসার।

আবার অনেকেই স্ত্রীর সাথে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে চুটিয়ে করছে সংসার, হয়েছে সন্তান। সুখের কাটছে তাদের দাম্পত্য জীবন। বিদেশ থেকে পাড়ি জমিয়ে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা এরকম কয়েকজন দম্পত্তির খোঁজখবর নিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে পাঠকদের উদ্দেশ্যে।

ফাতেমা-আশিকুরের সুখের সংসার

বছর পাঁচেক হলো বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের আশিকুর রহমান ও মালয়েশিয়ার কলেজছাত্রী ফাতেমা বিনতে আবদুর রহমান।

কাজের সন্ধানে ২০১১ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান আশিকুর। বছর দুয়েক পর সেখানে পরিচয় ঘটে ফাতেমার সঙ্গে। আশিকুর ২০১৫ সালে দেশে আসেন। এরপর তাঁর মালয়েশিয়া ফিরতে দেরি হচ্ছিল। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় ফাতেমার। প্রেমিকের টানে চলে আসেন ঢাকায়। এরপর ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মাহবুব হাসানের চেম্বারে বিয়ে করেন দুজন। আশিকুরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার মন্দিবাগে। বিয়ের পর স্ত্রীকে বাড়িতেও নিয়ে গেছেন আশিকুর। বর্তমানে দুজনেই মালয়েশিয়ায় থাকেন। দুই সন্তান তাঁদের।

সুখে আছেন এলিজাবেথ আর মিঠুন

বাংলাদেশের মিঠুন বিশ্বাসের সঙ্গে ২০১৫ সাল থেকে ফেসবুকে প্রেম মার্কিন তরুণী এলিজাবেথের। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি প্রেমের টানে চলে আসেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের এক গ্রামে। ৯ জানুয়ারি এলিজাবেথ বিয়ে করেন মিঠুন বিশ্বাসকে। ভালো চলছে তাঁদের সংসারজীবন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুজনে সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন বসবাস ভার্জিনিয়া শহরে। দুজন দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন মিঠুনের ভাই পলাশ বিশ্বাস।

ভেঙে গেছে সাহেদ ও লুসির সম্পর্ক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রাজিলের লুসি ক্যালেন ও বাংলাদেশের সাহেদ আহমেদের প্রণয়ের শুরু। ভালোবাসার টান অনুভব করে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন লুসি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মান্তরিত হয়ে সাহেদকে বিয়ে করেন।

বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীর সঙ্গে ব্রাজিলে পাড়ি জমান সাহেদ, কিন্তু সেখানে গিয়ে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। জানতে পারেন, এর আগেও স্ত্রী লুসির বিয়ে হয়েছিল। এমনকি সন্তানও রয়েছে তাঁর। সাহেদ বুঝতে পারেন, তিনি চরমভাবে প্রতারিত হয়েছেন। লুসির সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন তিনি।

প্রেম এখনো অটুট

থাইকন্যা সুপুত্তোর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় নওগাঁর ছেলে অনিক খানের। অনিকের সরলতা দেখে প্রেমে পড়ে যান সুপুত্তো। অবশেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিবারের অনুমতি নিয়ে মাত্র পাঁচ দিনের জন্য বাংলাদেশে আসেন তিনি। অনিকের পরিবারের কাছে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। তবে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি তখন। শূন্য হাতেই ফিরে যেতে হয় তাঁকে।

মাস তিনেক পর আবার বাংলাদেশে ছুটে আসেন সুপুত্তো। এ যাত্রায় অনিকের পরিবারের সম্মতি পেয়ে যান তিনি। মুসলমান হলেন, নাম পাল্টে রাখলেন সুফিয়া খাতুন। নাটোরের আদালতে বিয়ে হলো।

৩৬ বছর বয়সী সুফিয়া থাকেন থাইল্যান্ডেই। এখন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করেন। এদিকে নওগাঁয় অনিক ইলেকট্রনিকস পণ্যের একটি দোকান চালান। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন সুফিয়া। বছরে বার দুয়েক নওগাঁ আসেন।

ফিরে গেলেন জুলিজা

প্রেমের কারণে মালয়েশিয়া ছেড়ে টাঙ্গাইলের সখীপুরের মনিরুল ইসলামের কাছে ছুটে এসেছিলেন জুলিজা বিনতে কামিস। ফেসবুকে প্রেমের সূচনা। ২০১৭ সালে বিয়ে হয় তাঁদের। তবে মনিরুলের কপালে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

বিয়ের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে জানতে পারেন, মালয়েশিয়ায় জুলিজার আরও একটি সংসার রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, মালয়েশীয় তরুণী জুলিজার আগের স্বামীও একজন বাংলাদেশি। মনিরুল ও জুলিজার বিয়ের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে সেটি নজরে আসে জুলিজার প্রথম স্বামী আজগরের। এরপর আজগর ও তাঁর পরিবার মনিরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মনিরুল জানতে পারেন, মালয়েশিয়ায় জুলিজার স্বামী ও চার সন্তানের সংসার। বাংলাদেশে আসার ১৭ দিনের মাথায় প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যান জুলিজা।

একত্রে বসবাস রুবেল আর এভিলার

জীবিকার তাগিদে সিঙ্গাপুরে প্রবাসজীবন শুরু করেন কুড়িগ্রামের ছেলে রুবেল। চাকরি নেন কাচের কারখানায়। একই কারখানায় রুবেলের মতোই প্রবাসী শ্রমিক ছিলেন ফিলিপাইনের ফ্লোডিলিজ এভিলা টপিয়া। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই ভালোবাসার ফানুস ওড়ান দুজনে। তবে ভালোবাসার আকাশে কালো মেঘের ছায়া দেখা দেয় রুবেলের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে এলে। ২০১৭ সালে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরেন রুবেল। তবে ফেসবুক আর মুঠোফোনে যোগাযোগ চলতে থাকে তাঁদের।

এভাবে কেটে যায় প্রায় এক বছর। অবশেষে দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিয়েটা করেই ফেলবেন। ২০১৮ সালের মার্চে ঢাকায় আসেন এভিলা। ২৫ মার্চ ঢাকায় বিয়ে করেন এই যুগল। বিয়ের পর বউকে নিয়ে কুড়িগ্রামে যান রুবেল। বর্তমানে রুবেল ও এভিলা থাকেন সিঙ্গাপুরে।

আত্মগোপনে সঞ্জনা ও লাবু

প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার জামালপুর সীমান্তে বিজিবি আর বিএসএফের এক পতাকা বৈঠক বসে। উদ্দেশ্য ভারত থেকে চলে আসা সঞ্জনা বিশ্বাসকে ফিরিয়ে নেওয়া। ভারতের চর মেঘনা আর এই নদী দুটি দেশকে আলাদা করলেও ভারতের সঞ্জনা আর বাংলাদেশের লাবু মিয়াকে একই সুতোয় বেঁধেছে। কারণ, এই নদী পেরিয়েই ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতের চর মেঘনা থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন সঞ্জনা বিশ্বাস। এরপর প্রেমিক লাবুর বাড়িতে ওঠেন তিনি।

এদিকে সঞ্জনাকে খুঁজতে বিএসএফ আর বিজিবির মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান চলে। তবে এরই মধ্যে বিয়ে করে ফেলেন এই প্রেমিকযুগল। বিয়ে করেই আত্মগোপনে চলে যান তাঁরা। সর্বশেষ লাবু মিয়ার পরিবার জানায়, তাঁরা দুজন একসঙ্গেই আছেন। তবে পরিবার ঠিকানা জানে না।