• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে কাঙালি ভোজের বদলে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২১  

মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাধারণত কাঙালি ভোজ বা দোয়া মাহফিলসহ খাবারের আয়োজন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান করে থাকে মানুষ। তবে, মানিকগঞ্জে ‘গরিবের ডাক্তার’ খ্যাত লুৎফর রহমান তার পিতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রামের শত শত গরিব ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এজন্য তিনি মানিকগঞ্জ থেকে নিয়ে আসেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। শুধু রোগী দেখা নয়, দিয়েছেন বিনামূল্যে বিভিন্ন ওষুধ।

মৃত্যুবার্ষিকীতে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যতিক্রমী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা, মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক আফতার উদ্দিন সরকার। 

আগত অতিথিরা ডাক্তার লুৎফর রহমানের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


 
বিনামূল্যে রোগী দেখছেন আমন্ত্রিত চিকিৎসক ডা. মানবেন্দ্র সরকার মানব
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান তার বাবা মরহুম আনসার আলীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের সাহেবপাড়া গ্রামে এ ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেন।

স্থানীয়রা বলেন, সবসময় ডাক্তার লুৎফর রহমানকে আমরা পাশে পাই। বছর জুড়েই নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে নীরবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছেন। এজন্য আমরা তাকে বলি ‘গরিবের ডাক্তার’।

 অবসর পেলে তিনি ছুটে যান নিজ গ্রামে। ঘুরে বেড়ান দুস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি। খোঁজ নেন গ্রামের কে অসুস্থ, কার কী অসুখ। তিনি বিনা খরচে সেসব দুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

 চিকিৎসক বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে সেখানে আয়োজন করেন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প।

লুৎফর রহমান জানান, গ্রামের অসহায় মানুষদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি খুব কাছে থেকে দেখেছি। অনেকেই ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। সেই ভাবনা থেকে সারাবছর বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে ফ্রি স্যাম্পল হিসেবে পাওয়া ওষুধ জমিয়ে বছরে একবার আমার বাবা আনসার আলীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করি।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাহেবপাড়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সী আসগর আলী বলেন, ‘গরিবের ডাক্তার লুৎফর রহমান। তার কাছে গেলে যত্নসহকারে দেখেন এবং টাকা ছাড়া আমাগো সব ওষুধ দিয়া দেন।’

ওই গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘ছয় বছর হইলো আমরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধ পাই। তিনি হইলেন, আমাগো গরিবের ডাক্তার। রাইত নাই দিন নাই, তার কাছে গেলে নিজে না পারলে অন্য ডাক্তারদের সহায়তায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেন।’

সোমবার সাহেবপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লুৎফর রহমানের বিশাল বাড়ির আঙিনাজুড়ে করা প্যান্ডেলে সেবাদানকারী ডাক্তারদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কর্নার। মেডিসিন কর্নারে বসে রোগী দেখছেন ডা. মানবেন্দ্র সরকার মানব ও রাজীব বিশ্বাস। এছাড়া গাইনি সেবা দিচ্ছেন ডাক্তার নাছিমা আক্তার। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রামের নানা বয়সী নারীরা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন।এই চিকিৎসকরা জানালেন, লুৎফর রহমানের এই মহৎ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে তারা এখানে এসেছে।