• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

‘মশলা রানী’ চেন্নাভইরাদেবী, ইতিহাস যাকে ভুলেনি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

যেকোনো রান্নায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটিই হলো মসলা। প্রাচীন আমল থেকেই রান্নায় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। 

আর বাঙালির রান্না; সে তো মসলা ছাড়া একেবারেই কল্পনা যায় না।

মসলার যদিও কোনো পুষ্টিগুণ নেই, তবুও মসলা খাদ্যের স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

যেকোনো উদ্ভিদ বা উদ্ভিদের অংশ যেমন ফুল, ফল, বীজ, কুঁড়ি, পাতা, বাকল। মসলার রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণ, যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।

 

 

মসলাকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে অনেক বড় বড় যুদ্ধও হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয়দের চিত্তাকর্ষক ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময়ে মশলার মূল্য স্বর্ণ বা যেকোনো মূল্যবান পাথরের থেকেও বেশি ছিল।

খাবার ও মসলা যেমন একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তেমনি খাবারের ইতিহাসের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে মসলার ইতিহাসও। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যের প্রথম ও প্রধান পণ্যই ছিল মসলা। একসময় বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই মসলা। মসলাকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে অনেক বড় বড় যুদ্ধও হয়েছে। মসলার জন্য প্রথম যুদ্ধ হয় ভারতবর্ষে।

আরব বণিকদের এক সময় মসলার একচেটিয়া ব্যবসা ছিল ভারতবর্ষে। কিন্তু সারা ভারতবর্ষে এ মশলার প্রচলন এবং তা ধরে রেখেছিলেন এক নারী। নাম তার রানী চেন্নাভইরাদেবী। যিনি  ১৫৫২ সাল থেকে প্রায় ৫৪ বছর ভারতের দক্ষিণে সালুভা সাম্রাজ্যের রাশ টেনেছেন বেহাল তবিয়তে। গোয়া থেকে, উত্তর কন্নড়, দক্ষিণ কন্নড়, মালাবার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সাম্রাজ্য। যার রাজধানী ছিল গেরুসোপ্পা।

রানী চেন্নাভইরাদেবীর রাজত্বকালে তার নামাঙ্কিত তামার মুদ্রার প্রচলন ছিল। সে সময় সালুভা সাম্রাজ্য ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ব্যবসা এবং পর্যটনের সূত্রে এখানে আসতেন। তার সাম্রাজ্যের হন্নাবর, ভাতকালা অঞ্চলগুলো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাজারে পরিণত হয়েছিল।

 

 

ইউরোপ এবং ভারতের মধ্যে ব্যবসার খাতিরে পর্তুগিজদের যাতায়াত। ছবি: সংগৃহীত

১৪৯৮ সালে ভারতের দক্ষিণের মালাবার উপকূলের কালিকটে পৌঁছেছিলেন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দ্য গামা। তিনিই প্রথম ইউরোপ থেকে জলপথে ভারতে আসার রাস্তা আবিষ্কার করেছিলেন। এরপরই ইউরোপ থেকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলগুলোতে বাণিজ্য শুরু হয়।

এতে ইউরোপ এবং ভারতের মধ্যে ব্যবসার খাতিরে পর্তুগিজদের যাতায়াত শুরু হয়। সে সময় গোয়া পর্তুগিজদের দখলে প্রায় চলেই গিয়েছিল। ঠিক সে সময়ই রানী এ সাম্রাজ্যের হাল ধরেছিলেন। তিনিই ভারতের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র নারী। যিনি এতবছর ধরে সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন।

রানী চেন্নাভইরাদেবী রাজত্বকালে এই অঞ্চলগুলোতে কালো মরিচ, সুপারি, জায়ফল এই মশলাগুলোর ব্যবসা প্রসার লাভ করে। সে কারণেই পর্তুগিজরা তাকে পেপার কুইন বা ‘মশলা রানী’-ও বলতেন।

রানী ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী। ১৫৬২ সালে তিনি কারকালায় শিখ মন্দির চতুর্মুখ বসারি নির্মাণ করেন। এছাড়াও তিনি বহু মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন।

তার পার্শ্ববর্তী কেলাড়ি এবং বিলগি রাজারা বহুদিন থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এই গেরুসোপ্পার দখল নেয়ার। অবশেষে দুই রাজা মিলিত ভাবে ১৬০৬ সালে রানী চেন্নাভইরাদেবীকে পরাজিত করেন। এরপর রানীকে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি অবস্থাতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।    

অনেকে হয়তো এ মশলা রানীকে মনে রাখেননি। তবে ইতিহাস তাকে ভুলে যায়নি। এখনো মশলার ইতিহাস ঘাটলেই সামনে চলে আসে রানী চেন্নাভইরাদেবীর নাম।