• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ফ্যালকন-৯

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২০  

ফ্যালকন-৯, দুই স্তর বিশিষ্ট পুনরায় ব্যবহারযোগ্য একটি রকেট। যা পৃথিবীর কক্ষপথে বা তার বাইরেও নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ পরিবহণের জন্য স্পেসএক্স এর একটি যুগান্তকারী আবিস্কার। এটি বিশ্বের প্রথম পুনরায় ব্যবহারযোগ্য অরবিটাল রকেট। রকেটকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলার কারনে সামনে স্পেস এক্সপ্লোরেশন এর খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। আজ আমরা জানবো কিভাবে রিইউজএবল রকেট কাজ করে।

দ্বি-স্তর বিশিষ্ট রকেট ফ্যালকন-৯ এর প্রথম স্তরের বুস্টার নাইন ইঞ্জিন লিফট অফে সহায়তা করে এবং রকেটটিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় স্তরটি পৃথক হয়ে যায় এবং পে লোডকে কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজস্ব দ্বিতীয় ইঞ্জিন কাজ শুরু করে। দ্বিতীয় ইঞ্জিন রকেটকে অরবিট এ নিয়ে যায় আর প্রথম ইঞ্জিন ফিরে আসে পৃথিবীতে।

ফ্যালকন-৯ প্রথম স্তরের বুস্টারটি তার নজ এর নিকটে ছোট থ্রাস্টার দিয়ে সজ্জিত যা নাইট্রোজেন গ্যাসকে বের করে দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই একটি কন্ট্রোল ব্লাস্ট ফ্লিপ এর সহায়তায় গ্রাউন্ড এ ফিরে আসার প্রস্তুতি নেয়।

 

 

রকেটের প্রথম ইঞ্জিন ফুয়েল এর প্রতিটি ফোটা ব্যবহার করে বুস্ট করে রকেটকে অরবিট এ নিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্লিপ ওভার এর পর ফ্যালকন-৯ এর তিনটি ইঞ্জিন রি ইগনিট করে এবং পুনরায় ফিরে আসার জন্য ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে আনা হয় ইঞ্জিনের। যা ঘণ্টায় ৪ হাজার ৭০০ কিলোমিটার গতিবেগ থেকে ২০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়। পুরো বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় ভাবে হয়।

ফ্যালকন-৯ এর ইঞ্জিন মারলিন ১ প্রাথমিক বুস্ট করে লিফট অফ এর জন্য প্রায় ৬০০ টন থারস্ট প্রদান করে পরবর্তীতে রকেটকে স্টাবল করার জন্য স্পেস এক্স তৈরি করেছে অক্টাওয়েব ইঞ্জিন। একটা ইঞ্জিনকে ঘিরে রয়েছে আরো আটটি ইঞ্জিন। প্রতিটি ইঞ্জিন তাদের থারস্ট এর দিক পরিবর্তন করে পিচ ও রোলকে কন্ট্রোল করে রকেটকে স্থিতিশীল রাখে।

গ্রিড ফিন্স এর পাখাগুলি দেখতে প্লাস্টিকের জালির মতো। প্রত্যেকটির আকার রান্নাঘরের টেবিলের সাইজ। প্রথম পর্যায়ে ‘বুস্টব্যাক বার্ন’ শুরু হওয়ার পরে তিনটি ইঞ্জিনকে তার গতি কমিয়ে আনার জন্য তাপ প্রতিরোধী ডানাগুলি বুস্টারটির পাশ থেকে বেরিয়ে আসে। যেটি রকেটটি অবতরণ প্যাডের দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। কমপক্ষে এক ডজন সেন্সর এটিকে অবস্থান, বেগ এবং উচ্চতা সম্পর্কিত তথ্য দেয়।

 

 

শক্তিশালী, হালকা ওজনের কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি চারটি পা অবতরণের ঠিক আগে ডেপ্লয় করা হয়। প্রতিটি পায়ে সংঘর্ষ বলকে শোষিত করার জন্য একটি সংঘর্ষ -শোষণকারী ব্যবস্থা রয়েছে। একটি গাড়িকে যেমন ডিজাইন করা হয় যাতে করে গাড়িটি সংকুচিত হলেও যান্ত্রিক ধাক্কা শোষণ করে যেন ভেতরের মানুষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে ঠিক তেমনি ভারী অবতরণগুলির জন্য অ-পুনঃব্যবহারযোগ্য সামগ্রীর একটা শক্তি বলের উপর কাজ করে।

অন্যান্য রকেটের মতো, ফ্যালকন-৯ সমুদ্রের নিকটবর্তী স্থানগুলি থেকে যাত্রা শুরু করে, সুতরাং যখন প্রথম-স্তরের বুস্টার পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন এর নীচে খোলা সমুদ্র ছাড়া আর কিছুই থাকে না, তাই নিরাপদের অবতরন করতে পারে। একটি ড্রোন বার্জ এর আকার ফুটবল খেলার মাঠের সমান হয় যা বিভিন্ন ধরনের সেন্সর এ যুক্ত থেকে নিরাপদ অবতরণের জন্য সবসময় রকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। স্পেস এক্স এর একজন মুখপাত্র জানান, একটি নতুন রকেট নির্মাণ ব্যয়ের অর্ধেকেরও কম খরচ হয় পুনরায় ব্যবহার করা রকেটে।