• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মহাসড়ক ও ফুটপাত দখল করে রমরমা ব্যবসা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২১  

পুঁজিহীন জীবনে মহাসড়কের অব্যবহৃত এক খণ্ড ভূমিতে স্বপ্ন বোনা বেঁচে থাকার। ধুলাবালি, প্রশাসনের চোখ রাঙানো, রোদ- বৃষ্টি-ঝড় এর মাঝে ফুটপাতের অস্থায়ী ঘর। বিক্রি হলেই ঘরে খাবার জোটে, না হলে অনাহার। এটাই যেন কিছু গরিবের ভাগ্যের পরিহাস। এসব পাড়ি দিয়ে ফুটপাতে সাজিয়ে বসেছেন কেউ সবজি, কেউ জামা কাপড় আবার রকমারি জিনিস পত্রের পসরা। আর ফুটপাত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অজুহাতে নিয়ে যায় কষ্টের রোজগারের সিংহভাগ টাকা।

ঘনবসতিপূর্ণ ও শ্রমিক অধ্যুষিত আশুলিয়ার প্রায় সব মহাসড়কের পাশেই এরকম ব্যবসা করে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর চলে সংসার। তবে এতে ফুটপাত ব্যবসায়ীর সংসার চললেও জীবন শঙ্কায় গার্মেন্টস কর্মীসহ ক্রেতারা। পথচারী ও গার্মেন্টস কর্মীর সংসার চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় হয়তো চলে যায় আরেক সংসারের বাতি। সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় সব মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে নানা ব্যবসা।

শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল, আশুলিয়া থানা সংলগ্ন এলাকা, নতুন ডিইপিজেড সংলগ্ন, পুরাতন ডিইপিজেডের পাশে, বলিভদ্রবাজার, শ্রীপুর, নবী টেক্সটাইল সংলগ্ন এলাকা, জিরানিবাজার এলাকা, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড মহাসড়কর ইউনিক জামগড়া, ছয়তলা ও জিরাবো ঘুরে দেখায় যায় এমন দৃশ্য।

মহাসড়কের জায়গা, কোথাও মহাসড়ক দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে মহাসড়কের ফুটপাত দিয়ে অফিস কিংবা কাজে যেতে সাধারণ  শ্রমিকরা পোহায় ভোগান্তি। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকেরই নিভে যায় জীবন প্রদীপ। তবে এই মৃত্যুর মিছিলকে পুঁজি করে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজি করে একটি শ্রেণি পাহাড় গড়ছে কালো টাকার। অনেকেই এই ফুটপাতের ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলেও তাদের পুঁজিসহ মালামাল জিম্মি করে এই চাঁদাবাজরাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাত ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের পুঁজি কম, তাই ফুটপাতে ব্যবসা করছি। কম খরচে ও পুঁজিতে ব্যবসা করার আশায় নেমেছিলাম ফুটপাতে। ব্যবসা মোটামুটি হচ্ছে, তবে চলতে হয় কষ্টে। প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। চাঁদার টাকা আয় করে পরে পরিবারের কথা ভাবতে হয়।

ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া পোশাক শ্রমিক নাজিমের সাথে কথা হলে তিনি  বলেন, আমরা সকালে অফিস যাই। এ সময় ফুটপাত ফাঁকা থাকে। যাতায়াতে কোন সমস্যাও হয় না। তবে দুপুরে ১ ঘণ্টার লাঞ্চ টাইম। ফুটপাতে দোকান বসার জন্য যাতায়াতে সময় বেশি লাগে। কোন সময় কারখানায় যেতে দেড়ি হলে অনুপস্থিত হিসাবে গণ্য করে।

অপর পথচারী নাসিমা বলেন, আসলে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু সড়কের অর্ধেকটা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। আমরা বর্তমানে যদি ফুটপাত দিয়ে হাঁটি তাহলে রাস্তার মাঝামাঝি দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এর কারণে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক শাহিন জানান, আমি জিরানী বাজার হামীম  কারখানায় কাজ করে ছুটির পর হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলাম। ফুটপাতের জন্য হাঁটাই যাচ্ছিলো না। এসময় পিছন থেকে একটি ডিম বোঝাই পিকআপ এসে আমাকে চাপা দেয়। আমার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আজ আমি পঙ্গু,  ফুটপাতের সঠিক ব্যবহার থাকলে আজও আমি দুই পায়েই হাঁটতে পারতাম।

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই, ধামরাই এর সভাপতি নাহিদ বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিকল্প নেই। অন্যান্য সমস্যার মত এটিও একটি বড় সমস্যা। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের ব্যবসার স্থান করে দিয়ে ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলে পথচারীদের ঝুঁকি মুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত হবে।

মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নাইমুল ইসলাম জানান,, আমরা ফুটপাতে নানা সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি। এর পরেও ফুটপাত ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা শুরু করে। এবার স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এত সব পরিকল্পনা আর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও চাঁদার বিনিময়ে কিভাবে বসানো হচ্ছে এসব অস্থায়ী দোকান, আর কে বা নিচ্ছে এই চাঁদা, তা নিয়ে প্রশ্নের জট জনমনে।