• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মেলায় জামাই-শ্বশুরের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২১  

গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিনিরাইল গ্রামে বসে মাছের মেলা। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে এ আয়োজন করা হয়। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এই মেলা প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

মূলত মাছের মেলা হলেও সবাই একে জামাই মেলা বলে। কারণ এ সময় স্থানীয় জামাই এবং শ্বশুরদের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর সারাদেশ থেকে বিক্রেতারা এখানে মাছ নিয়ে আসেন। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসেন মাছ কিনতে।


বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী এমনই চিত্র চোখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জাঙ্গালিয়া, মোক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়নের ত্রি-মোহনার বিনিরাইল গ্রামের বিরাট এলাকাজুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মাছ বিক্রেতারা।

গাজিপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থানের মাছ বিক্রেতারা এখানে ছুটে এসেছেন। নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়- কে কত বেশি ওজনের বা বড় মাছ মেলায় আনতে পারেন।


অন্যদিকে স্থানীয় জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও হয় সেই বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। এ মেলায় মাছের সাথে বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যেরও আমদানি হয়। মেলায় আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়েছে। এছাড়া কার্পজাতীয় মাছের আমদানি হয়েছে।

এক থেকে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা এসব মাছ কিনছেন। বড় মাছ কেনার জন্য বিনিরাইলের মাছের মেলাই উত্তম জায়গা।

কালিয়াকৈর থেকে আসা মেলার মাছ বিক্রেতারা জানান, বিনিরাইলের মাছের মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি। বিক্রিও একেবারে খারাপ নয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়ায় প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন তারা। এখানে বেচাকেনাকে মুখ্য মনে করেন না বলেও জানান।

আয়োজক কমিটি জানায়, শুরুতে মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। বেড়েছে মেলার পরিধিও।

এখানে শুধু মাছ নয়, এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজষপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের স্টল বসে। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে আনা এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। তাদের পাশাপাশি কাজ করছে স্থানীয়রাও।

তিনি আরো বলেন, মাছের মেলা এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।