• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিশুদের যেভাবে ভালোবাসতেন রাসুল (সা.)

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর তাই ইসলাম শিশুকে স্নেহ-মমতা ও আদর-যত্ন দিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছে। বস্তুত ইসলাম শুধু কিছু আচার-সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবনের প্রতিটি বিষয়ের বয়ান রয়েছে ইসলামে। সমাজের ধনী, দরিদ্র ও ছোট-বড় সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার এবং কর্তব্যের কথা রয়েছে ইসলামে।

শিশুর প্রতি আচরণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিশুকে স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান দেখায় না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯২১)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার রাসুল (সা.) নিজ নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। সে সময় তার কাছে আকরা বিন হারেস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি দশ সন্তানের জনক। কিন্তু আমি কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি। তখন মহানবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, তার প্রতিও দয়া করা হয় না’। (বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৫১)

ভালোবাসা ও স্নেহ শুধু নিজের বাচ্চাদের প্রতি সীমাবদ্ধ রাখা নয়, বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশ আবশ্যক। বিশেষ করে মা-বাবার মমতাহারা শিশুদের স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করা চাই। তাদের প্রতি সাহায্য-সহায়তার হাত বাড়ানো জরুরি। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব।’ একথা বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রাখেন। (বুখারি, হাদিস নং: ৪৯৯৮)

মহানবী (সা.) যখন মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, তখনও তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝে-মধ্যে তাদের সঙ্গে আনন্দ-রসিকতা করতেন। ঘোড়া সেজে অনেক সময় নাতি হাসান ও হোসাইনকে পিঠে নিয়ে মজা করতেন।

আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার ছোট ভাইয়ের (তার উপনাম ছিল আবু উমায়ের) একটি পাখি ছিল। সে তার পাখিটি নিয়ে খেলা করতো। একদিন পাখিটি মারা গেল। এরপর একদিন রাসুল (সা.) আমাদের বাড়ি এসে দেখলেন, আবু উমায়েরের মন খারাপ। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, আবু উমায়ের মন খারাপ কেন? সবাই বললো, তার পাখিটা মারা গেছে। তখন মহানবী (সা.) বললেন, ‘হে আবু উমায়ের! কী করেছে তোমার নুগায়ের?’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪৯৭১)

বিশ্বনবী হয়েও তিনি শত ব্যস্ততার মাঝে শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। এটি তার অনুপম ও সুমহান চরিত্রের দ্যুতিময় দৃষ্টান্ত। শিশুর প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসার কারণে শিশুরাও মহানবী (সা.)-কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আবদুল্লাহ বিন জাফর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়িতে ফিরতেন, তখন বাচ্চারা তার আগমনের পথে গিয়ে অভ্যর্থনা জানাত। একবার তিনি তার সফর থেকে এসে আমাকে তার বাহনের সামনে বসালেন। অতঃপর নাতি হাসান, হোসেন (রা.)-কে বাহনের পেছনে বসালেন। তারপর আমাদের নিয়ে তিনি মদিনায় প্রবেশ করলেন। (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৪২১)

মক্কা বিজয়ের পর যখন মহানবী (সা.) মক্কা শহরে আগমন করেন, তখন কিছু ছোট বাচ্চা তার কাছে আসলে তিনি তাদের আদর করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বিজয়ীবেশে মহানবী (সা.) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন আবদুল মুত্তালিব বংশের ছোট ছোট ছেলেরা তার কাছে আসে। তিনি তাদের একজনকে নিজ বাহনের সামনে বসালেন এবং অপরজনকে পেছনে বসালেন। (বুখারি, হাদিস নং: ১৭০৪)

শিশুদের সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও গভীর ভালোবাসা ছিল। অথচ আমাদের অনেকে শিশুদের অপহরণ ও পাশবিক নির্যাতন করে নিজেদের কলঙ্কিত করছি। ক্ষেত্র বিশেষে পাষণ্ডতা ও রূঢ়তা প্রকাশ করছি।

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে বললেন, আমার হৃদয় খুব কঠিন। তিনি বললেন, তুমি কি তোমার অন্তর কোমল করতে চাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসুল (স.) বলেন, তাহলে এতিম বাচ্চাদের আদর করো, স্নেহ করো। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, তাদের খাবার দাও। তবেই তোমার অন্তর কোমল হবে।’

নির্দয় ব্যক্তি সবচেয়ে বড় হতভাগা। আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন। তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেবল হতভাগ্য ব্যক্তির হৃদয় থেকেই দয়া তুলে নেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯২৩)