• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

সম্মানিত মাস জিলহজের প্রথম ১০ দিনের তাৎপর্য, আমল ও ফজিলত

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২০  

আরবি হিজরি সনের শেষ মাস জিলহজ। এই মাস চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম। এটি হজের মাস, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার মাস, প্রভুর সান্নিধ্য লাভের মাস। 

এ মাসের ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে হজ ও ১০ তারিখ কোরবানি করবে মুসলিম উম্মাহ। ত্যাগ-তিতিক্ষার এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নফসের খাহেশাতকে কোরবানি করে।

এ মাসে সংঘঠিত হয়েছে দুনিয়ার সেরা আত্মত্যাগ। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনে নিজের প্রাণ প্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানির মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম।

পুরো জিলহজ মাস তাৎপর্যপূর্ণ হলেও এ মাসের প্রথম ১০ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। কোরআনুল কারিমের সূরায়ে ফজরের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এই ১০ রাতের কসম খেয়ে বলেন, ‘কসম ফজরের এবং ১০ রাতের।’ এর দ্বারা জিলহজের প্রথম দশকের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।

হাদিস শরিফে আছে, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালার নিকট কোনো দিনের আমলই এই দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়?

উত্তরে বললেন, না আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ! যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় জিহাদে যায় এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসে।’ (সহিহ বুখারি:১/১৩২)।

এই ১০ দিনের মধ্যে শেষের দু’দিন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকে হাদিসের পরিভাষায় ‘ইয়াওমে আরাফা’ ও ‘ইয়াওমে নাহর’ বলা হয়। এ ছাড়াও দুটি ইবাদত এ মাসের প্রথম দশককে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করে তোলে। যে দুটি ইবাদত জিলহজ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমজানেও নয়। একটি হলো হজ, অপরটি কোরবানি।

এ মাসের করণীয় আমল:

প্রথমত, যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে তাদের জন্য উচিত বিলম্ব না করে হজ আদায় করা। আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন, যাদের ওপর হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও তা আদায়ে বিলম্ব করে থাকেন। মুসলমান হিসেবে কোনো পুণ্যময় কাজে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা উচিত নয়।

দ্বিতীয়ত, কোরবানি আদায় করা। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা তো অবশ্যই কোরবানি আদায় করবেন। এমনকি যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাদেরও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। আগ্রহ ও ইচ্ছা থাকলে নিঃস্ব ব্যক্তিকেও আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান করে দিতে পারেন। বাহ্যিক সামর্থ্য ও আর্থিক সচ্ছলতা তো আল্লাহ তায়ালার হাতে। সে কারণেই কোরবানি ওয়াজিব না হলেও কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত।

তৃতীয়ত, জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা। হাদিসে আছে, হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা যখন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (ইবনে হিব্বান)।

চতুর্থত, এই মাসের প্রথম দশক যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল এবং এ সময়ের আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় ও গ্রহণীয় তাই এই দশকে বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। বিশেষত নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দান-খয়রাত ইত্যাদি।

জিলহজের প্রথম দশকের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) জিলহজের প্রথম ৯ দিন (ঈদের দিন ছাড়া) রোজা রাখতেন। তবে এই দশকের নবম দিনটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দিন রোজা রাখার গুরুত্বও বেশি। হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’

পঞ্চমত, ৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক বলা প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক হলো- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’

নামাজ একাকী কিংবা জামাতের সঙ্গে, পুরুষ-নারী প্রত্যেকের ওপর একবার এ তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষ উচ্চস্বরে আর নারী অনুচ্চস্বরে তাকবির বলবে।

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হজের মাস জিলহজের পুরোপুরি ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।