• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সাপের শরীর মাথা মাছের, আজব বস্তুটিই জনগণের রক্ষক!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

আফ্রিকা নামটি শুনলেই প্রথমে কোন দৃশ্যটি চোখে ভাসে? নিশ্চয়ই কালো বর্ণের মানুষ ও খরাপ্রবণ দুর্ভিক্ষময় অঞ্চল! প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যের এক আঁধার হলো আফ্রিকা। 

সেখানকার বিভিন্ন জাতি ও উপজাতিদের সংস্কৃতি অবাক করার মতো। জনগণ ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে আফ্রিকানরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। সাতরংয়ের পাঠকদের জন্য আজ থাকছে আফ্রিকানদের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত দিক সম্পর্কিত তথ্য-

দেশ, কাল ও সংস্কৃতি ভেদে রীতি ও শিষ্টাচারে ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। এজন্যই তো বলে এক দেশের বুলি, অন্য দেশের গালি। দেশ ভেদে মানুষের কাছে অন্যান্যদের রীতি নীতি বেশ অদ্ভুত ও রহস্যময় বলে মনে হতে পারে। ঠিক তেমনই আফ্রিকান সংস্কৃতির এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো হাস্যকরও মনে হতে পারে!

হ্যান্ডসেক

 

হ্যান্ডসেকের অভিনব পদ্ধতি

হ্যান্ডসেকের অভিনব পদ্ধতি

ইউরোপিয়ানরা বেশিরভাগ সময়ই অন্যকে স্বাগত জানাতে চোয়ালে চুমু দেয়। ব্যক্তি বিশেষে এই চুমুর সংখ্যা এক থেকে চারটি পর্যন্ত গড়ায়। তবে আফ্রিকান সংস্কৃতি অনুযায়ী, একজনকে হ্যান্ডসেক করে স্বাগত জানান হয়। তবে তারা কোনোভাবেই গতানুগতিক ধাঁচে হ্যান্ডসেক করে না। তাদের হ্যান্ডসেক করার অভিনব কায়দাটি অনেকটা পাঞ্জা খেলার মতো।

জোরে কথা বলা 

 

জোরে কথা বলা নিষিদ্ধ

জোরে কথা বলা নিষিদ্ধ

আফ্রিকান সংস্কৃতিতে সাধারণত জোরে কথা বলা একটি রীতি হিসেবেই মানা হয়। তাদের জোরে কথা বলার কারণ হলো, উপস্থিত কেউ যাতে না ভাবে কোনো গোপন আলোচনা করা হচ্ছে। এটা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত তারা উচ্চ স্বরে কথা বলে। নিঃসন্দেহে অপরকে সম্মান করার নিদর্শন এটা। 

নাচ

 

আফ্রিকান নারীরা নাচছেন

আফ্রিকান নারীরা নাচছেন

বিয়ে, বিভিন্ন উৎসব কিংবা কারো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও আফ্রিকানরা নাচতে পছন্দ করে। তাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে নাচ। অনুষ্ঠান ভেদে নাচেরও রকমভেদ রয়েছে। উপলক্ষ্য অনুযায়ী নাচ ও সঙ্গীতের ধরনও পরিবর্তন করে তারা। 

মাছাই ওরিওর ডান্স 

 

মাছাই ওরিওর ডান্স

মাছাই ওরিওর ডান্স

এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও বিশেষ ধরনের নাচ। ছেলেরা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা যুদ্ধের জন্য উপযোগী বয়সে পৌঁছে এই নাচে অংশ গ্রহণ করে তারা। মাছাইরা শুধু কণ্ঠের সাহায্যে সুর তোলে ও নাচ করে। তবে আফ্রিকান রীতি অনুযায়ী নাচ করতে ড্রাম ব্যবহার করা হয়। এই নাচের সময় প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকরা সারিবদ্ধভাবে বৃত্তাকার হয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর তারা একে একে লাফ দেয়। লাফ দিয়ে এসময় যে যত উপরে উঠতে পারবে সে বেশি শক্তিশালী হিসেবে গণ্য হবে। মূলত কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়াতে মাছাই জনগোষ্ঠীর উদ্ভব বলে জানা যায়।

গুলে ওয়ামকুলু

 

 গুলে ওয়ামকুলু

গুলে ওয়ামকুলু

বিভিন্ন অনুষ্ঠান এমনকি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও চিউয়া উপজাতিরা এই গুলে ওয়ামকুলু নাচ পরিবেশন করে। নাচটির বিষয়ে অবশ্য কিছু গোপনীয়তা ও রীতি রয়েছে। এই নাচে অংশগ্রহণকারীরা আলখেল্লার ন্যায় পোশাক ও মুখে মুখোশ পরে। অতঃপর বিভিন্নভাবে শরীর নাচাতে থাকে। সেইসঙ্গে ক্রমাগত মাটিতে পদাঘাত করে নিজেকে ধূলাময় করে রাখে। তাদের ধারণা, এই নাচের মাধ্যমে পূর্ব পরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব।

লোবলা

 

লোবলা হিসেবে দেয়া হয় গরু

লোবলা হিসেবে দেয়া হয় গরু

একজন বর কনের পরিবারকে যা দেয় তাকে লোবলা বলে। অর্থাৎ বরের পরিবার বিয়ের সময় কনের পরিবারকে উপহার হিসেবে লোবলা দেয়। সাধারণত গবাদি পশু লোবলা হিসেবে দেয়া হয়। বিয়ের আগে বর বা বরের পরিবার পাত্রীর পরিবারের বড়দের সঙ্গে আলোচনা করে লোবলার পরিমাণ ঠিক করে। আফ্রিকান জুলু সম্প্রদায়ের মধ্য এই রীতি অনেকটা বাধ্যতামূলক। তাদের পুরুষতান্ত্রিক  সমাজে নারীদের নিরাপত্তার জন্যই লোবলা প্রথা চালু হয়।

নিয়ামি নিয়ামি রিভার গড

 

নিয়ামি নিয়ামি রিভার গড

নিয়ামি নিয়ামি রিভার গড

ভিক্টোরিয়া জল প্রপাতের পাশের রয়েছে এক স্মৃতিফলক। সেটি টঙ্গা জনগণের রক্ষক হিসাবে পরিচিত। বলা হয় কারিবা বাধ নির্মাণের পূর্বে জাম্বি নদীতে সে বাস করত। এটি সাপের শরীর এবং মাছের মাথা আকৃতির। এর নামই নিয়ামি নিয়ামি রিভার গড। 

হিম্বা সান ব্লক

 

হিম্বা নারী ও তার সন্তান

হিম্বা নারী ও তার সন্তান

নামিবিয়ার কুনেনে অঞ্চলের হিম্বা নারীরা লাল অথবা কমলা রঙের মাটি গুলিয়ে মুখসহ পুরো শরীরে ব্যবহার করে। মরুভূমির প্রচণ্ড খরতাপে এই মাটি সান ব্লক হিসেবে কাজ করে।

পরিবার এবং পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা

 

আফ্রিকান এক পরিবারের সব সদস্যরা

আফ্রিকান এক পরিবারের সব সদস্যরা

আফ্রিকানরা পরিবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ আফ্রিকান উপজাতির কাছে পরিবার বলতে শুধু স্বামী-স্ত্রী কিংবা সন্তানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধতাই বোঝে না। চাচা-চাচি, মামা-মামী, খালা-খালু এমনকি দূর সম্পর্কের ভাই-বোন সবাইকেই তারা পরিবারের অংশ হিসেবে মনে করে। পূর্বপুরুষরাও তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমারা সাধারণত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বড়দের গুরুত্ব দেয় না। তবে আফ্রিকানরা বয়স্কদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।

সাব-সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলের মানুষেরা প্রচণ্ডভাবে পূর্বপুরুষদের শক্তির উপর বিশ্বাস করে। পুর্বপুরুষদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন নাচ-গান এবং অনুষ্ঠান করে থাকে তারা। পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে পথ প্রদর্শনের অপেক্ষায় থাকে তারা।