• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সিলেটের হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বিয়ে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২১  

সিলেট নগরীর হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকা অবস্থায় এক প্রবাসী বিয়ে করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য ফেরত ওই প্রবাসী নগরের লামা বাজার এলাকার ‘হোটেল লাভিস্তা’ তে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। সেই হোটেলেই বিয়ের আয়োজন করা হয়। এতে কনে ছাড়াও বাইরে থাকা আসা অনেক অতিথিরা অংশ নেন। গত ২০ মার্চ রাতে ঘটা করে এ বিয়ের আয়োজন হয়। 

গত ১৮ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে হোটেল লাভিস্তায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এদের মধ্যে দুজন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাঙ্গাইল এলাকার এক নারী (৪৮) ও তার ছেলে (২৮)। ওই মা অবস্থান করেন ৪০১ নম্বর কক্ষে আর তার ছেলে অবস্থান করেন ৪০৬ নম্বর কক্ষে।

নিয়ম অনুযায়ী তারা সব ধরণের জনসমাগম এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলার কথা থাকলেও লাভিস্তা হোটেলে স্টেজ সাজিয়ে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই তরুণ (২৮)। আর এ বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাইরে থেকে আসা প্রায় ৫০ জন অতিথি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভুরিভোজও হয় হোটেলের রেস্টুরেন্টে। এর আগে গত ১৮ মার্চ বিকেলে একই হোটেলেই ‘এঙ্গেজমেন্ট’ অনুষ্ঠান হয়।

ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বাইরে বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতান থেকে কেনাকাটাও করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবকের মা। যার পুরোটাই হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে। যার বিনিময় হোটেল কর্তৃপক্ষ আদায় করেছেন মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা।

হোটেল লাভিস্তা কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপনের চেষ্টা করে প্রথমে পুরো ঘটনা অস্বীকার করে ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করে। প্রথমে হোটেল অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, এমন কোনও ঘটনাই হয়নি। এমনকি এসব কক্ষে কোনো প্রবাসী অবস্থান করছেন না।

একইসঙ্গে গত ১৫ এবং ২২ মার্চের হোটেলের বুকিং খাতার দুইটি তালিকা দেখিয়ে আর কোন প্রবাসী অবস্থা করছেন না বলে জানান তিনি। পরে অন্য একটি সূত্র থেকে ১৮ তারিখে হোটেল লাভিস্তায় আসা ১১ জনের তালিকা সংগ্রহ করে নাম এবং কক্ষ নম্বর মিলে যাচাই করা হলে দেখা যায় ৪০১ এবং ৪০৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছেন মা-ছেলে।

এমন তথ্য জানানোর পর হোটেল ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ নানা টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। পরে প্রায় ঘণ্টা খানেক পর আবার ফিরেন তিনি। এসময় তিনি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কথা অস্বীকার করলেও আকদ (বিবাহ রেজিস্ট্রি) হয়েছে বলে জানান।

বিয়ের পর কনে ৪০৬ নম্বর কক্ষেই বরের সাথে অবস্থান করছেন এমন তথ্য জানিয়ে হোটেলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চাইলে অপরগতা প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপক।

লাভিস্তা হোটেলের ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানের তথ্য ভুল। তবে আকদ হয়েছে (বিবাহ রেজিস্ট্রি)। এজন্য কাজিসহ ৪ থেকে ৫ জন মানুষ এসে তারা কেবল স্বাক্ষর নিয়েছেন। মূলত মানবিক দিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরকে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মুহি উদ্দিন ও তার মা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাৎক্ষণিক সুযোগ না দিয়ে ফোনে কথা বলিয়ে দেবেন বলেও জানান হোটেল লাভিস্তার ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা দেওয়া। হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো সমস্যা অনুভব করলে পুলিশকে জানাবেন। কিন্তু তারা পুলিশের অগোচরে অন্যান্য বর্ডারের মতো প্রবাসীদের বিয়ে করায়, বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দিয়ে দোষ চাপায় পুলিশের ওপর। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।