• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

১২ বছর পর পাওয়া গেল ময়নাকে

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০২০  

ময়না বেগম (২৫)। বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নাজিমপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ইউনুস ব্যাপারী। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে একমাত্র মেয়ে ময়নাকে গৃহকর্মী হিসেবে ২০০৬ সালে নড়িয়া উপজেলার দীগম্বরপট্রি গ্রামের মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার, তার স্ত্রী শিরিয়া বেগম, মেয়ে মুনমুন আক্তার ও শ্যালক দুলাল খানের হাতে তুলে দেন ইউনুস ব্যাপারী।

মোসলেম উদ্দিন পরিবার নিয়ে ঢাকার সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেই বাসায় ময়না দুই মাস ভালোই ছিল। এরপর মোসলেম উদ্দিনসহ তার পরিবারের লোকজন ময়নার ওপর নির্যাতন শুরু করে।

ময়না বেগম বলেন, আমার বয়স যখন ১১ বছর তখন আমাদের সংসারে অনেক অভাব। বাবা-মা ঢাকার সাভারে মোসলেম উদ্দিনের বাসায় এক হাজার টাকা বেতনে কাজে দেন। দুই মাস ভালোই ছিলাম। এরপর মোসলেম উদ্দিন, তার স্ত্রী শিরিয়া, মেয়ে মুনমুন ও শ্যালক দুলাল সামান্য বিষয় নিয়ে আমাকে মারধর করতেন। ওই বাসায় যাওয়ার চার মাস পর মোবাইলে মা-বাবার সঙ্গে একবার কথা বলতে দিয়েছিলেন তারা। আর যোগাযোগ করতে দেননি।


একদিন ওই বাসার একটি মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাই। স্কুল ছুটি হওয়ার পর মেয়েটি আমাকে রেখে বাসায় চলে যায়। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে মোসলেম উদ্দিন, শিরিয়া, মুনমুন ও দুলাল লাঠি দিয়ে ইচ্ছা মতো আমাকে মারধর করে। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পরদিন (২০০৮ সালের ২১ ডিসেম্বর) ওই বাসা থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু আমি আমার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারতাম না। সাভার থেকে একটি বাসে উঠি।

কয়েক বাস ঘুরে রাজবাড়ী জেলায় পৌঁছাই। সেখানে অপরিচিত জায়গা। বাসস্ট্যান্ডে বসে কাঁদছিলাম। হঠাৎ এক বৃদ্ধ আমাকে উদ্ধার করে তার বাসায় নিয়ে যান। আমি তাকে বাবা ডাকতাম। সেই বাসায় কাজ করতাম। তিন বছর পর রাজবাড়ীর সেনগ্রামের মাসুদুর রহমানের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমার এক ছেলে মনির হোসেন মুন্না (৮) ও এক মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৫)।


তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার  রাজবাড়ী থেকে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বেড়াতে আসি। পরে রাতে পুলিশ আমাকে নড়িয়া থানায় নিয়ে আসে।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২১ ডিসেম্বর ময়না নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে। পরে না পেয়ে ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ময়নার বাবা ইউনুস ব্যাপারী বাদী হয়ে শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মোসলেম উদ্দিন, শিরিয়া, মুনমুন আক্তার ও দুলাল খানের বিরুদ্ধে অপহরণ করে পাচারের মামলা করেন। মামলার আসামিরা জেল খেটে জামিনে আছেন।


নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২০ অক্টোবর রাতে নড়িয়া বিঝারী গ্রামের কাঞ্চনপাড়া থেকে ১২ বছর আগে সাভার থেকে অপহৃত ময়নাকে উদ্ধার করে। স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া মেয়ে ময়নাকে তার দুই শিশুসন্তানসহ উদ্ধার করা হয়।

 বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন নিরপরাধ মানুষ ১০ বছর ধরে মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছে।