• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

৩৩৩ নম্বরে ফোন, রাতের আঁধারে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে খাদ্য সহায়তা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৭ মে ২০২১  

কোনোদিন ভাবিনি এতগুলো সরকারি লোক বাড়িতে আসবেন। বসতে দেওয়ার জায়গা নেই, তাই দাঁড়িয়ে থেকেই সবার সঙ্গে কথা বলেছেন, সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন, তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে করোনাকালীন ঈদ উপহার (খাদ্য সহায়তা) হাতে তুলে দিয়েছেন।

বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুরের তীলক এলাকার বাসিন্দা ওয়াকশপশ্রমিক মো. নাছির উদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার হেনা ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তার আবেদন জানিয়ে তা পাওয়ার পরে এসব কথা বলছিলেন ।

তিন শিশু কন্যা সন্তানের এ জননী বলেন, স্বামী নাছির উদ্দীন ঢাকায় ওয়াকশপে কাজ করতেন, তবে করোনার কারণে তার কাজ নেই তাই বাড়িতেই থাকেন। তিন মেয়ে ও তারা দু’জন মিলে খুব কষ্টে টিনের জরাজীর্ণ ঘরটিতে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

নাসরিন বলেন, দু’দিন আগে সেহেরি খেয়ে ওযু করতে ঘরের পাশের পুকুরে যাই। ঘরে খাবারের সংকটের কারণে চিন্তা করি ৩৩৩ নম্বরে একটা কল দেই। এরপর ঘরে গিয়ে বড় মেয়ের সঙ্গে কথা বলে সাহস করে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেই এবং আমাদের বর্তমান অবস্থা জানাই। কিন্তু ভাবিনি খাদ্য সহায়তা পাবো আর তাও বাড়িতে বসে। সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে স্যারেরা বাসার ঠিকানা নেয় এরপর রাতের বেলা ঘর পর্যন্ত সহায়তার প্যাকেটটি পৌঁছে দিয়ে গেছে।  

একইভাবে বরিশাল সদর উপজেলার কলসগ্রামের বাসিন্দা পঙ্গু মো. আলমগীরের ঘরেও রাতের বেলা খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একটি দল।  

খাদ্য সহায়তা পেয়ে নির্মাণশ্রমিক মো. আলমগীর বলেন, টিউমারের কারণে ৮/১০ বছর আগে তার ডান পায়ের নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়, এরপর থেকে তিনি পঙ্গু হলেও কষ্ট করে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করেন। তবে বর্তমানে কোনো কাজ নেই তার হাতে। মা, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাইয়ের ঘরটিতে থাকছেন ঠিকই তবে আর্থিক কারণে নানা সংকটে পড়েছেন। তাই তিনি বেশ কিছুদিন আগে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান। কয়েকদিন হয়ে যাওয়ার কারণে বুঝছি পাবো না, কিন্তু বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাতে খোদ ইউএনও স্যার বাড়িতে একটি উপহারের প্যাকেট নিয়ে এসে হাজির।

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তার জন্য যারা আবেদন জানিয়েছেন বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে তাদের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এখন থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সহায়তাগুলো আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা ১০ জনের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছি, যারা ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়েছিলেন।

রাতের বেলা মানুষের বাড়ি খুঁজে খুঁজে এভাবে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরে বেশ ভালো লাগছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের বাড়িতে যাচ্ছি, তারা প্রথমে আমাদের দেখে বিশ্বাসই করতে পারছে না যে, এভাবে সেবা পাবে। তাদের আনন্দের হাসি বা অশ্রু আমাদের কাজে আরও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

এ কাজের সঙ্গে সহায়তা করছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান সন্যামত, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা বাবুল গাজী, সহকারী প্রোগ্রামার চৌধুরী শওকত হোসেনসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা।