বঙ্গবন্ধুর সাহিত্য: ভাষণ থেকে নয়াচীন
মানিকগঞ্জ বার্তা
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২০

বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন জনদরদী নেতাই ছিলেন না। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগীও ছিলেন। যার প্রমাণ পাই আমরা তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ নামক বইয়ে। যদিও তিনি সাহিত্যে স্থান করে নেয়ার জন্য লেখেননি। নিজের তাগিদে সময়ের প্রয়োজনে লিখেছেন। তার সেই লেখাই এখন আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং জিজ্ঞাসাকে নিবৃত্ত করছে।
‘রাজনীতির কবি’ খ্যাত শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয়েছেন লেখক সত্তা নিয়ে। আমরা খুঁজে পেয়েছি কথাসাহিত্যিক বঙ্গবন্ধুকে। অনেক অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে তার হস্তলিপি প্রকাশের মাধ্যমে। মূলত ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে তার লেখক সত্তা আমাদের সামনে প্রস্ফুটিত হয়। ভাষণের যদি সাহিত্যমূল্য থাকে, তবে ৭ মার্চের ভাষণেরও বিশেষ সাহিত্যমূল্য রয়েছে। কাব্যিক ছন্দের সেই ভাষণকে তবে ‘দীর্ঘ কবিতা’ বলা যায়।
সেই অমর কবিতা আজো মানুষের মুখে মুখে। তিনি হয়ে আছেন ‘রাজনীতির কবি’। দীর্ঘ কবিতার সেই কবিকে নিয়ে রচিত হচ্ছে অনেক কবিতা। সেই ভাষণকে কেন্দ্র করে রচিত হচ্ছে অনেক সাহিত্য। জাতি আজও প্রাণভরে স্মরণ করছে তার জাদুময় কবিতা। কচি কচি শিশুদের মুখেও উচ্চারিত হচ্ছে সেই কণ্ঠস্বর। আঠারো মিনিট স্থায়ী সেই ভাষণ এ পর্যন্ত বারোটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠে শুধু ভাষণই উচ্চারিত হয়নি, বজ্রমুষ্ঠিতে উঠেছিল কলমও। তিনি কারাবন্দি জীবনের ফাঁকে ফাঁকে সময়ের সদ্ব্যবহারও করেছেন। তিনি লিখে গেছেন তার আত্মজীবনী। যদিও তা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তিনি কারাগারে বসে রোজনামচা লিখেছেন। স্বাধীনতার এতো বছর পর তা বর্তমান প্রজন্মের তরুণ পাঠকের কাছে অবশ্য পাঠ্যরূপে পরিগণিত হয়েছে।
২০০৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি এক্সারসাইজ খাতা আকস্মিকভাবে তার মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুঁজে পান। খাতাগুলো অনেক পুরনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায় অস্পষ্ট। মূল্যবান ওই খাতাগুলোই বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। যা তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তবে ২০১২ সালে অসমাপ্ত রেখেই তার আত্মজীবনী প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয় বইটি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দি অবস্থায় এই অমূল্য জীবনী রচনা করেন। তার লিখিত স্মৃতিকথা ২০১২ সালের ১৮ জুন বাংলায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রথম প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্বপালন, তত্ত্বাবধান ও কার্যক্রম পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বইটি প্রকাশ করে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। বাংলার পাশাপাশি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদ ‘আন ফিনিসড মেমোরিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম।
ইংরেজি ভাষায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর প্যারিস থেকে বইটি ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হয়। অনুবাদ করেন প্রফেসর ফ্রান্স ভট্টাচারিয়া। পাদটীকা লিখেছেন ইনালকোতে বাংলা ভাষা ও সভ্যতার শিক্ষক জেরেমি কদ্রন। শুধু তাই নয়- চীনা ভাষায় অনূদিত হয় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত চাই শি বইটির অনুবাদ করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে মোড়ক উন্মোচন হয় হিন্দি ভাষায় অনূদিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীর। ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর আরবি ভাষায় অনূদিত বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ এন.এ. মালকি। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র জাপানি অনুবাদ করেন জাপান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (এনএইচকে) বাংলা বিভাগের কাজুহিরো ওয়াতানাবে। জাপানের প্রকাশনা সংস্থা আশাহি সোতেন বইটি প্রকাশ করে। এছাড়া স্প্যানিশ এবং উর্দু ভাষায়ও বইটি অনূদিত হয়েছে।
কারাগারে বসে বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, বইটি তারই সাক্ষ্য বহন করে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগ পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে তার পাশে অবিচল ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে তার রচিত নতুন গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ কালপর্বের কারাস্মৃতি এ বইটিতে স্থান পেয়েছে। তবে বইটি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র দ্বিতীয় খণ্ড বলে ধারণা হতে পারে। তবে এটি বঙ্গবন্ধুর সম্পূর্ণ নতুন বই। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কারাগারে তার লেখা দুটি এক্সারসাইজ খাতা জব্দ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এবং পুলিশের বিশেষ শাখার সহায়তায় উদ্ধারকৃত একটি খাতার গ্রন্থরূপ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত এই ‘কারাগারের রোজনামচা’।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র পর ‘কারাগারের রোজনামচা’ পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। কারণ বইটি পড়লে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের যতো বাধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ব্যথা-বেদনা, রক্তক্ষরণ, ক্রান্তিকাল সম্পর্কে অনুধাবন করা যায়। আমাদের ভাগ্যোন্নয়ন, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের জন্য নিজের জীবন-যৌবন উজাড় করে দিয়ে যে মহান আত্মত্যাগের পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তা এই বইয়ের পাতায়-পাতায় পরম মমতায় শব্দে-বাক্যে উঠে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর বারবার গ্রেফতার হন। ওই সময়ের বন্দিজীবনের দিনলিপি উঠে এসেছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধু কারান্তরীণ থাকাকালীন প্রতিদিন ডায়েরি লেখা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর জেল-জীবন, জেল-যন্ত্রণা, কয়েদীদের অজানা কথা, অপরাধীদের কথা, কেন তারা এই অপরাধ জগতে পা দিয়েছিল- সেসব বিষয় যেমন সন্নিবেশিত হয়েছে; ঠিক তেমনি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা, গণমাধ্যমের অবস্থা, শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতন, ৬ দফার আবেগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রকৃতিপ্রেম, পিতৃ-মাতৃভক্তি, কারাগারে পাগলদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সংবেদনশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
বইটির পাণ্ডুলিপি দু’বার উদ্ধার করা হয়। প্রথমবার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরপরই, দ্বিতীয়বার জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বইটির পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের লোমহর্ষক দু’টি ঘটনা বইয়ের ভূমিকাতে সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। বইটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
বইটিতে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন স্মৃতিচারণে তার মনের অব্যক্ত কথা বলতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দেশ ও জনগণের স্বার্থেই রাজনীতি করেছেন। বাঙালির চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কখনো ‘বীরের জাত’ আবার কখনো ‘পরশ্রীকাতর’ও বলেছেন। বাঙালি অন্যের দুঃখে ব্যথিত হয়, আবার অন্যের ভালো দেখতে পারে না। আবার সবসময়ই কিছু বাঙালি ছিল বিশ্বাসঘাতক। সবসময়ই বাঙালিরা নিজেদের অস্তিত্ব ভুলে নিজেদের ক্ষতি করেছে, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ভিনদেশিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।
জনগণের নেতাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে অন্ধকার কারাগারে। একদিকে উঁচু প্রাচীর। পাশের সেলে সত্তর জন পাগল। একদিকে শাসকগোষ্ঠীর মানসিক নির্যাতন, অন্যদিকে পরিবার-পরিজন ছাড়া একাকী জীবন। সেই দুঃসহ জীবনে তার সঙ্গী হয়েছিল ‘প্রকৃতি’ আর ‘বই’। কারাগারে বসে শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ পাঠের খবরও আমরা পাই। কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিঃসর্গের অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন। আত্মজীবনীতে তিনি ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলীর বর্ণনা দিয়েছেন। রোজনামচায় প্রকৃতির নানা রূপের বিবরণ রয়েছে। একজোড়া হলুদ পাখির জন্য তার ব্যাকুলতা আমরা দেখতে পাই।
কারাগারের রোজনামচা বইটি দিনলিপি হলেও; তিনি কখনো ফিরে গেছেন ভাষা আন্দোলনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে, কখনো বা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে ওঠা সেই মহৎ সংগ্রামে। বর্ণনা করেছেন সেই সময়কার সংগ্রামে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের বীরত্বব্যঞ্জক ভূমিকার কথা। একজন মহান, মানবিক নেতার সংস্পর্শে এসে একজন কুখ্যাত ‘চোর’ কিভাবে জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে আলোর পথে যাত্রা শুরু করে, সে সত্যও বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক যেন কোন রকম শব্দ-বিভ্রান্তিতে না পড়ে তার জন্য তিনি দিনলিপি লেখার আগেই কারাগারের প্রচলিত শব্দগুলোর অর্থ ঘটনার বিবরণীর মধ্যদিয়ে তুলে ধরেছেন। তাঁর মাধ্যমে জেলখানায় ব্যবহৃত নানাবিধ শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। অপরদিকে বিভিন্ন প্রবাদ-প্রবচনেরও ব্যবহার করেছেন।
দিনলিপিতে বাংলা বা বাঙালিত্বের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ব্যক্তিকে ছাপিয়ে সমষ্টির জন্য তার ক্রন্দন প্রকটিত হয়েছে প্রতিটি চরণে। প্রতিটি দিনলিপির শেষে লেখকের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতার নিদারুণ বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। কোমল পাঠকও যেন তার জীবনের বন্দিশালায় এসে কান্নাসিক্ত হয়ে পরেন।
কারাগারের রোজনামচা জেলজীবনের খুঁটিনাটি নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। স্মৃতিচারণের ধারাবাহিকতার স্বার্থে প্রতিটি লেখার একটি আলোচ্য বিষয় উঠে আসে। জেলখানায় সংঘটিত বিভিন্ন কথা ও কাজের মধ্যদিয়ে তার স্মৃতিকথা সবিস্তারে লিখে গেছেন। প্রতিটি রোজনামচায় তারিখ এবং বার উল্লেখ করেছেন।
রোজনামচা পড়তে গিয়ে পাঠক বঙ্গবন্ধুর মার্জিত রসবোধের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। সুযোগ পেলেই তিনি ব্যঙ্গ, বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেছেন। ‘ইন্দোনেশিয়াকে পাকিস্তানের আপন মায়ের পেটের ভাই’ বলে অভিহিত করেছেন। রাজনীতির বাইরেও বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তা তাঁর লেখাতেই বোঝা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘মানিক ভাইকে সেখানে রেখেছে, সেখান থেকে খবর আনা খুবই কষ্টকর। এত বড় আঘাত পেলাম তা কল্পনা করতে বোধ হয় অনেকেই পারবে না। প্রথম থেকেই এই কাগজের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম।’
জেলখানায় কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় তাকে। তবুও তার লেখায় কৌতুকবোধের অভাব হয়নি। তাই রোজনামচায় বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনের কষ্টের পাশাপাশি রসবোধের পরিচয়ও পাবেন পাঠক। কেননা তিনি লিখেছেন, ‘আমার অবস্থা হয়েছে, ‘পর্দানসিন জানানা’র মতো কেউ আমাকে দেখতেও পারবে না, আমিও কাউকে দেখতে পারব না। কেউ কথা বলতে পারবে না, আমিও পারব না।’ প্রায় তিন বছর এক দুঃসহ কারা নির্যাতন ভোগের পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন তিনি। প্রবল মানসিক শক্তির জোরে এই অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছেন।
কারা-জীবনে তিনি সীমাহীন নির্যাতন, কষ্ট, অপমান, অবহেলা সহ্য করেছেন। বন্দি থাকাকালীন তার সংসার, সন্তান, সহধর্মিনী কষ্ট, দুর্বিসহ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে পার করেছেন। তার আত্মজীবনী এবং রোজনামচা পড়ে আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছে। তবে তিনি যোগ্য সহধর্মিনী পেয়েছিলেন বলেই অখণ্ড মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন দেশ ও জাতির জন্য। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে অগণিত স্থানে তার সহধর্মিনীর প্রতি গভীর ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস ও পরম নির্ভরতার কথা উল্লেখ রয়েছে।
আত্মজীবনীতে তিনি সন্তানদের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা, রোজনামচায় সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করেছেন রাসেলকে। তবে বঙ্গবন্ধুর লেখায় জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনার প্রতি একটু বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। সেটা হয়তো স্বাভাবিক।
আগের দুটি বইয়ের পাশাপাশি এবারের বইমেলায় যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি বই। যার নাম ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বইটির প্রকাশক বাংলা একাডেমি। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার লেখাটি খুবই যথাযথ ও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। সে কাহিনি তিনি লিখেছিলেন ১৯৫৪ সালে। তিনি যখন কারাগারে। তার লেখা এ খাতার ওপর গোয়েন্দা সংস্থার সেন্সর ও কারাগার কর্তৃপক্ষের যে সিল দেওয়া আছে, তা দেখেই সময়কাল জানা যায়।
বইটি পড়লে জানা যায়, আজ থেকে সাত দশক আগে বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী ছিলেন। সময় থেকে তিনি কতটা অগ্রগামী ছিলেন। তিনি পিকিংয়ে শান্তি সম্মেলনে কেন যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছিলেন এবং কতটা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে নয়াচীনে গিয়েছিলেন তা বোঝা যায়। বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘দুর্ভিক্ষ মহামারি সমস্ত দেশকে গ্রাস করবে। তাই মানুষের মঙ্গলের জন্য, পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য- যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। ঠিক করলাম শান্তি সম্মেলনে যোগদান করতে হবে। আমাদের পূর্ব বাংলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জনাব আতাউর রহমান খান, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, যাকে আমরা সকলে ‘মানিক ভাই’ বলি, বন্ধুবর খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস আর ইউসুফ হাসান এবং আমি, এই পাঁচজন যাবো ঠিক হলো।’
বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘আমি বক্তৃতা করলাম বাংলায়, আর ভারত থেকে বক্তৃতা করলেন মনোজ বসু বাংলা ভাষায়। বাংলা আমার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করাই উচিত। কারণ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের কথা দুনিয়ার সকল দেশের লোকই কিছু কিছু জানে। মানিক ভাই, আতাউর রহমান খান ও ইলিয়াস বক্তৃতাটা ঠিক করে দিয়েছিল। দুনিয়ার সকল দেশের লোকই যার যার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করে। শুধু আমরাই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করে নিজেদের গর্বিত মনে করি।’
‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে নয়াচীনের রেলভ্রমণের বর্ণনা এসেছে দারুণভাবে। তিনি যা দেখেছিলেন তাই বিশ্লেষণ করেছেন। অসংখ্য বিষয়বস্তু এবং তার ব্যাখ্যা খুবই প্রাঞ্জল ভাষায় তার বর্ণনা এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসাধারণ ভাষায় শিশুদের নিয়ে ভাবনা ও নয়াচীনের সে সময়কার দুই বছরের সরকারের অর্জন করেছে তা বিবৃত করেছেন। বইটিতে তৎকালীন নয়াচীনের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। মালিক-শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। সর্বোপরি সমগ্র চীনের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও বিশদ ধারণা পাওয়া যাবে।
নিঃসন্দেহে বই তিনটি ব্যতিক্রম। এখানে কল্পনার আশ্রয় নেই। পাঠককে আপ্লুত করার কৌশল নেই। নিরেট একজন মানুষের কষ্টে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। একজন নিয়মিত লেখক না হয়েও বঙ্গবন্ধু এক অমূল্য সম্পদ আমাদের জন্য রেখে গেছেন। তবে অল্প কথায় বই তিনটির আলোচনা শেষ করা কঠিন। আমরা শুধু একটু ধারণা দিতে পারি মাত্র। বইগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমূল্য উৎস। বাঙালির জাগরণের দলিল। বাংলা সাহিত্যের নতুন সংযোজন।
শেষকথা
তবে তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরো স্মৃতিচারণ, রোজনামচা আমরা পেতে পারতাম। আমরা পাঠে ঋদ্ধ হতাম। আগামী প্রজন্ম তার আদর্শ নিয়ে একটি সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়তে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারতো। সে সুযোগ আমরাই নষ্ট করেছি। অকৃতজ্ঞ সন্তানের অপবাদ নিয়ে জাতির বুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আজ এ গোধুলি বেলায় এমন একজন মহান সাহিত্যিকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
- বাংলাদেশকে বাসযোগ্য করতে ব্যবস্থা নিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
- দৃশ্যমান ও অনুকরণীয় বাংলাদেশের উন্নয়ন
- এক দরে ডলার কেনা বেচা করবে ব্যাংক
- পদ্মা সেতুতে বদলে যাচ্ছে ফরিদপুর
- চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্পগুলোতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে
- অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ
- আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ শনিবার ঢাকায় পৌঁছাবে
- আম পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
- রাজধানীতে প্রভাষক-ছাত্র অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে
- কুড়িয়ে পাওয়া ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিলেন সাংবাদিক সিজেল
- সাভারে যথেচ্ছা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধে এখনই সময়
- সাভার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা
- সাইবার পুলিশের নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা, গ্রেফতার ২
- অনিবন্ধিত দুই ক্লিনিক সিলগালা
- দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে দুই ছিনতাইকারী গ্রেফতার
- সেই কলেজছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায়, হুমকি-হয়রানির অভিযোগ
- লিবিয়ার বন্দিদশা থেকে দেশে ফিরলেন ১৬০ জন
- মির্জাপুরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেন্দ্র
- বাংলাদেশে কম্বাইন হারভেস্টার তৈরি করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান
- বাংলাদেশের সভাপতিত্বকালেই সিভিএফ ন্যায্য কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত
- ইভিএম ম্যানিপুলেট করা অসম্ভব: ড. জাফর ইকবাল
- ইউক্রেনে নিহত হাদিসুরের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ ডলার
- উন্নয়নে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
- নবাবগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি সম্রাট, সম্পাদক সোহান
- ধামরাইয়ে আগুনে পুড়ল ১২ ঘর, ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি
- ব্যস্ত সড়কে সুয়ারেজের পানি, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী
- কেরানীগঞ্জে অস্ত্রসহ ছয় ডাকাত সদস্য আটক
- ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ৩ যুবক গ্রেফতার
- বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় চালক নিহত
- গাজীপুরে কিশোরীকে দেড় মাস আটকে রেখে ধর্ষণ
- হত্যার আগে স্ত্রীর কপালে চুমু দিয়ে মাফ চেয়ে নেন রুবেল
- আশুলিয়ায় কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি!
- সাভারবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব
- নির্বাচন প্রক্রিয়া কলুষিত করেছে বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী
- কক্সবাজারকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য
- বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে
- সেনাবাহিনীর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে: সেনাপ্রধান
- স্তনে ট্যাটু, কটাক্ষের শিকার নুসরাত
- ফিনফিনে প্যান্টের ভিতর স্পষ্ট মালইকার অন্তর্বাস
- ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে: সজীব ওয়াজেদ জয়
- শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
- আমার শরীর বিক্রি করেই বড়লোক হয়েছে: পূজা
- শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
- ঈদের রাত থেকে যেসব এলাকায় থাকবে না গ্যাস
- বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা আকাশপাতাল
- কারা ফটকের সামনে থেকে ইয়াবাসহ বিদেশফেরত নারী আটক
- কনডম বিক্রি করতে গিয়ে অশ্লীল আক্রমণের শিকার নায়িকা
- গাজীপুরে দুই বাড়িতে ডাকাতের হানা
- `শেখ হাসিনা থাকতে এ দেশ কখনো শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান হবে না`
- সাভারের মহাসড়কে তীব্র যানজটের শঙ্কা