• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

লেগুনার হেলপার থেকে `বিডিএসকে` গ্যাং লিডার!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩  

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, সদরঘাট ও ফরিদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে 'ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে)' সন্ত্রাসী গ্রুপের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়কে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় হৃদয়ের আট সহযোগীকেও দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ আটক করা হয়। গত শনিবার রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের আটক করে র‌্যাব।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় আধিপত্যসহ চুরি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল  'ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে)' গ্যাং গ্রুপ।  এই গ্যাংয়ের প্রধান শ্রীনাথ মণ্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের (২২) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২০-২৫ জন সদস্য। সন্ত্রাসী এই গ্রুপ পরিচালনার পাশাপাশি লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত হিটার হৃদয়। মূলত এই গ্রুপটি টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। 

আটককৃত বাকি আসামিরা হলো- বিডিএসকে গ্রুপের সমন্বয়ক মো. রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), মো. রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), মো. আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), মো. লোমান ঘাড় ত্যাড়া লোমান (২১), মো. আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), মো. জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের (১৯) এবং মো. সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)। অভিযানে তাদের মোহাম্মদপুর আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, ১টি রামদা, ১টি চায়নিজ কুড়াল, ৪টি চাকু (বড় ও ছোট), ২টি হাঁসুয়া, ১টি কাঁচি এবং ১টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই বছরের গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজন ভুক্তভোগী জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাইকারীরা নিয়ে যায়। পরে ওই ভুক্তভোগীকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। একইভাবে কিছুদিন আগেও একই এলাকার এক কলেজশিক্ষার্থীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অঙ্কের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনার তদন্তে নেমে র‍্যাব বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। 

তিনি বলেন, যেখানে দেখা যায়, ৮-১০ জনের একটি সন্ত্রাসীদল ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে যে ‘বিডিএসকে’ গ্রুপের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। এরপর এই গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা 'বিডিএসকে’ (ব্রেড ডেঞ্জার স্ট্রং কিং) গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। দলের গ্যাং লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে দুই বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এই গ্রুপের সদস্যরা পূর্বে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

এই গ্রুপের সদস্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত। এ ছাড়া তারা মাদক সেবনসহ মাদকের কারবারও করত। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভ টিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেয়। গ্রেপ্তার আসামিদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় গত দুই বছর ধরে 'বিডিএসকে (ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং)' গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার গ্রুপে ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। এই গ্রুপের সদস্যরা এর আগে 'সবুজ বাংলা গ্রুপ',  'টপ টেন গ্রুপ' ও ভাই ভাই গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা হিটার হৃদয়ের গ্রুপে এসে যুক্ত হয়। 

গ্রেপ্তার হৃদয় লেগুনা চালানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করত। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করেছে। গ্রেপ্তার রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন স্থানীয় একটি স্কুল থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বিডিএসকে গ্যাংয়ের বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে সে হৃদয়ের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করত। এই গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে অপরাধ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে আদাবর এলাকায় রিকশার গ্যারেজে কাজ করত সে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে কয়েকবার কারাভোগ করেছে।

বিডিএসকে গ্রুপের লিডার হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় স্থানীয় একটি স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকের কারবারসহ আধিপত্য বিস্তার করে ভয়ানক ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিল হিটার হৃদয়।