• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গাজীপুর সিটিতে ভোট শেষ, চলছে গণনা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩  

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের সিটিকরপোরেশন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকালেই আটজন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী স্ব স্ব কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকালে কম এলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। শেষ সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারের লাইন লক্ষ করা যায়। বিকাল ৪টার সাথে সাথে কেন্দ্রেগুলোর সামনে ও রাস্তায় থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন তৎপরতা বাড়িয়ে দেন। সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে তারা অতিরিক্ত টহল শুরু করেছেন।

গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে গাজীপুর সদরে ৪২টি ও টঙ্গীতে ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ ভোটার টঙ্গীতে। টঙ্গীতে ভোট দেন তিনজন মেয়র প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লাহ খান, লাঙল প্রতীকের এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর  ইসলাম উরফে রনি সরকার। 

ভোট দিয়ে সকল প্রার্থী সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য প্রার্থীদের অনেকেই নানা ধরনের অভিযোগ করতে থাকে। সকল অভিযোগের মধ্যেও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

বিকেল সোয়া ৪টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে হাতি প্রতীকের প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের নিকট তার এজেন্ট বের করে দেওয়াসহ একজন নারী এজেন্টকে লাঞ্ছিত করার লিখিত অভিযোগ দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা নিয়ে গঠন করা হয়েছিল আয়তনে দেশের অন্যতম বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। বিগত দুই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পেছনে স্পষ্ট ছিল আঞ্চলিকতার ছাপ।

দুই নির্বাচনেই বিজয়ী হয়েছেন গাজীপুর সদরের প্রার্থী। এবারও টঙ্গীর বাসিন্দা আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আগের দুইবারের মতো যদি এবারও আঞ্চলিকতার ইস্যু সামনে আসে তাহলে বেকায়দায় পড়তে পারেন ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থী। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকায় ভোট দেবে বলে আশা ক্ষমতাসীন দলের।

গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড  ও সংরক্ষিত ১ থেকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত সদর থানার আওতাভুক্ত। আর ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত ১৪ থেকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত টঙ্গী থানার অধীন। টঙ্গীতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ৭৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ২৮ জন।  গাজীপুর সদরে মোট ভোটার আট লাখ ১৪ হাজার ৭৪৩ জন আর টঙ্গী থানার ভোটার তিন লাখ ৬৯ হাজার ৬২০ জন।

দুই এলাকায় ভোটারের এই ব্যাপক পার্থক্য নির্বাচনে বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারে, এমন নজিরও রয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এম এ মান্নান। আর পরেরবার নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম। তারা দুজনই গাজীপুর সদরের বাসিন্দা।

প্রথমবার টঙ্গীর বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, পরেরবার টঙ্গীর বাসিন্দা হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিলে পরাজিত হয় বিএনপি। এবার আবারও আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। আর গাজীপুর সদর থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

গাজীপুর সদরের তুলনায় টঙ্গীতে ভোটার কম হলেও এই এলাকা থেকে এবার আজমত উল্লা খান ছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির সাবেক এক নেতার ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি। টঙ্গী এলাকায় সরকার পরিবারের প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছেন এই প্রার্থী। ফলে তিনি টঙ্গীতে আজমতের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই তীব্র কোন্দল রয়েছে বলে মনে করেন ভোটাররা। তাদের মতে, নির্বাচন এলেই কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে নির্বাচনের দিন দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বেশির ভাগ ভোটার।