• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ধসে পড়লো স্কুলের একাংশ, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব ১২ পরিবার

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৩  

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে ধসে পড়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাত্র আধাঘণ্টার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে ১২টি পরিবার। ঘর-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। হরিরামপুর উপজেলার ধুলসুড়া ইউনিয়নের আবিধারা ও ইসলামপুর এলাকায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণেই আকস্মিক এই ভাঙন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, নদী পাড়ে লন্ডভন্ড অবস্থা। ৪৬ নম্বর চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের সিঁড়ি ও দুটি কক্ষ পদ্মায় ধসে পড়েছে। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে বাকি অংশটুকুও। বিদ্যালয়ের আশপাশের অনেক ঘর বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কাটা হচ্ছে গাছপালা। চোখের পানি মুছতে মুছতে বাপদাদার ভিটা ছাড়ছেন অনেকেই। পদ্মার ভয়ালরূপ দেখতে নদীপাড়ে জড়ো হয়েছেন অনেক মানুষ। সেখানে অস্থায়ীভাবে চা, পান সিগারেট ও ঝাল মুড়ির দোকানও বসেছে।

ধুলসুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদ খান বলেন, সোমবার রাতে হঠাৎ করেই ওই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে নদীতে বিলীন হয় ১২টি ঘরবাড়ি। সঙ্গে ধান, চাল, ভুট্টাসহ অন্য মালামালও গেছে। নদীতে ধসে পড়েছে চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একাংশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখনো ভাঙন ঝুঁকিতে আছে বহু মানুষ।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন জেলেখা বেগম। তিনি বলেন, ঘটনার কিছু সময় আগে নদীপাড়ে বসে গল্প করছিলেন তারা। হঠাৎ ফাটল দেখতে পান। মুহূর্তের মধ্যেই ভাঙন শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একে একে বিলীন হতে থাকে ঘরবাড়ি। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডাকা হয়। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় কয়েকটি ঘর সরানো গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বলাই দত্ত জানান, ঘরের চাল ও বেড়া খুলে রাস্তায় রাখা হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন কোথায় আশ্রয় নেবো জানি না।

স্কুলের পাশেই বাড়ি ছিল বিমলের। অর্ধেক ভিটা নদীতে গেছে। বাকি অংশের ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। জানালেন, যেকোনো সময় আবারো ভাঙন শুরু হতে পারে। তাই যা আছে তা নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন পদ্মার ভাঙনের কারণে বাপদাদার ভিটা ছাড়তে হলো। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। অথচ আগে থেকেই ব্যবস্থা নিলে এমন ক্ষতির মুখে পড়তে হতো না।

ভাঙন এলাকায় দাঁড়িয়ে কথা হয় হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তার অভিযোগ, ভাঙনকবলিত এলাকায় দোহার নবাবগঞ্জের একটি চক্র কয়েক বছর ধরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে। অপরিকল্পিত এ ড্রেজিংয়ের কারণেই হঠাৎ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন সবাইকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদী ভাঙন আরও ভয়াবহ হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ নদী ভাঙনে ৪৬ নম্বর চর মকুন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের আংশিক ধসে গেছে। নদীর কাছাকাছি থাকায় আগে থেকেই সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কম ছিল। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় এজন্য পাশের একটি সরকারি স্কুলে তাদের সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়টি উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে অন্যত্র স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান বলেন, নদী ভাঙনের খবর পেয়েই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়। আপদকালে ১২০০ মিটার এলাকায় এ কাজ চলছে। তিনি আশা করেন এতে ভাঙনরোধ হবে।