• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাকেশের থেকে রক্ষা পাননি তার বাবাও

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০১৯  

‘মনে করেছিলাম ছেলে চাকরি পেয়েছে। অভাবের সংসারে সুখ আসবে। আমার স্ত্রী (রাকেশের মা) হার্টের রোগী। এবার তাকে চিকিৎসা করাব। তা তো আর হলো না। ও আমার সঙ্গেও প্রতারণা করল।’

শুক্রবার চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ ইউপির বহিলাপোতা গ্রামের বাড়িতে রাকেশ ঘোষের বাবা সন্তোষ ঘোষ অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন।  

এরমধ্যে যশোর শহর থেকে আটক হয়েছেন আইজিপির চিফ প্রটোকল অফিসার ও এএসপি পরিচয়দানকারী রাকেশ ঘোষ। যিনি নিজের পিতা ও পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

তবে রাকেশ অপরাধী হলে আইনানুযায়ী তার বিচার দাবি করেন বাবা সন্তোষ ঘোষ। একই সঙ্গে রাকেশকে যারা এ পথে এনেছে, তাদেরও বিচার দাবি করেন তিনি। আলাপকালে স্থানীয়দের সামনে কেঁদে ফেলেন সন্তোষ ঘোষ।

সন্তোষ ঘোষ বলেন, ‘মনে করেছিলাম ছেলে চাকরি পেয়েছে। অভাবের সংসারে সুখ আসবে। আমার স্ত্রী (রাকেশের মা) হার্টের রোগী। এবার তাকে চিকিৎসা করাব। তা তো আর হলো না বাবা। ও আমার সঙ্গেও প্রতারণা করল। আগেও রাকেশ আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাংকে জমানো ডিপিএসের টাকা প্রতারণা করে নিয়ে নিয়েছে। পুলিশের অফিসার পদে চাকরি পেয়েছে বলে সে আমার থেকে চার লাখ টাকা নিয়েছে। আমি জমি বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছি।’

সন্তোষ ঘোষ জানান, রাকেশ ২০১০ সালে উপজেলার আন্দারকোটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাস করে। ২০১২ সালে চৌগাছা শহরের তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনার্স শেষ করে। 

আক্ষেপ প্রকাশ করে সন্তোষ ঘোষ বলেন, ‘ছেলেকে লেখাপড়া শিখালাম। আর ওসহ পুলিশ পরিচয়ে অন্যরাও আমার সঙ্গে এমন প্রতারণা করল? রাকেশের ফোনে সব সময় কল এসেই যেত। মনে হতো সে যেন বড় কোনো অফিসার বা কেউ হবে।

আমাকে বলেছিল, চৌগাছা থানায় একসময় দায়িত্বপালনকারী এএসআই শহিদ তাকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে একদিন সন্ধ্যায় দুটি মোটরসাইকেলে চেপে পাঁচজন পুলিশের পোশাক পরা লোক বাড়িতে আসে ছেলের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য। তারা আমাকে বলেন, আপনার ছেলে ওপর র‌্যাংকের অফিসার হতে যাচ্ছে।

তবে সে সময় আমার কাছ থেকে কোনো কিছুতে কোনো স্বাক্ষর নেয়নি তারা। ভেরিফিকেশনে আসা পুলিশ দলের কাছ থেকে আমি এএসআই শহিদের মোবাইল নম্বর (০১৭২০৫৬১৫৩১) নিই। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে বলেন আপনার ছেলের চাকরি হয়ে গেছে। কোনো চিন্তা করবেন না। এরপর একদিন আমি যশোর-কুষ্টিয়া সড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার থেকে ছেলেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার জন্য রাজশাহীগামী বাসে উঠিয়ে দিই। সেখানেও একজন পুলিশের পোশাকে একজন সদস্য ছিলেন।’ সন্তোষ ঘোষের প্রশ্ন- এত কিছুর পরও এভাবে প্রতারিত হলাম?

বর্তমানে সাতক্ষীরার তালা থানায় কর্মরত এএসআই শহিদ মোবাইল ফোনে বলেন, রাকেশের চাকরি বা চাকরিজনিত কোনো বিষয়ই আমার জানা নেই। তার সঙ্গে যশোরে চাকরিরত অবস্থায় পরিচয়। তিনি হঠাৎ একদিন বলেন ৩৭তম বিসিএসে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে আমরা সম্মান করি। সেভাবেই তাকে সম্মান করতাম। তার সঙ্গে চা খেয়েছি। এরপর একদিন তার ছোট বোনের বিয়েতে যেতে আবদার করে। পরিচয়ের সূত্র ধরেই আবদার মেটাতে সেখানে যাই। কিছুদিন আগে অর্থাৎ মাস তিনেক হবে তিনি প্রশিক্ষণের দিনক্ষণও বলেছিলেন। এএসআই শহিদ আরো বলেন, টাকার বিষয় আমি জানি না। এর আগেও তার পিতা আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলেছি যদি তার চাকরি হয়ে যায়, তা হলে অল্পস্বল্প খরচ খরচার জন্য যেন না আটকে যায়। 

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজিব বলেন, এগুলো সবই ভুয়া হতে পারে। রাকেশ ঘোষ নামে কোনো ব্যক্তির পুলিশ ভেরিফিকেশন চৌগাছা থানা পুলিশ করেনি। এএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে এএসপি পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা থাকতে হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর শহরের দড়াটানা থেকে ভুয়া এএসপি রাকেশ ঘোষকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে তাকে এসপি কার্যালয়ে নেয়া হলে ভুয়া পরিচয়ের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। এসময় তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যশোর শহরের একটি বাসা থেকে পুলিশের পোশাক, ব্যাগ ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ওসি তদন্ত সমীর কুমার সরকার জানান, রাকেশ ঘোষ কয়েকদিন ধরে যশোরে অবস্থান করে এএসপি পদমর্যাদার আইজিপির প্রটোকল অফিসার পরিচয় দিচ্ছিলেন। এসআইদের সঙ্গে নিজেকে ওই পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধাও নিচ্ছিলেন।

বুধবার থানার এসআই শাহিদুল আলমকে হুমকি দিয়ে একটি মামলার বিষয়ে তদবির করেন। এরপর শাহিদুল রাকেশ ঘোষের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হন। একপর্যায়ে রাকেশ ঘোষ নামে আইজিপির কোনো প্রটোকল অফিসার বা রাকেশ বলে কোনো এএসপি নেই বলে নিশ্চিত হয় এসআই শাহিদুল আলম। এসআই শাহিদুল আলম জানান, রাকেশ ঘোষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।