• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ডলার পাচার প্রতিরোধে এলসি খোলায় সতর্কতার নির্দেশ

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২  

পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে ডলার পাচার করছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এভাবে কোনো কোনো পণ্যে ২০০ শতাংশ বেশি দেখিয়ে ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনি পরিস্থিতিতে ডলার পাচার প্রতিরোধে পণ্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে শাখা প্রধানদের এমন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এতে বলা হয়, আমদানির আড়ালে মূল্য বাড়িয়ে বা কমিয়ে ডলার পাচার করা হচ্ছে কি না সে জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য যাচাই-বাছাই করতে হবে। নিশ্চিত হয়েই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে বলা হয়েছে। একাধিক ব্যাংকের শাখা প্রধান গতকাল নয়া দিগন্তকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে জরুরি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি মৌখিকভাবে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদেরকে এমন নির্দেশনা দেন। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের এমন মৌখিক নির্দেশনার আলোকেই গতকাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা তাদের শাখা প্রধানদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা একাধিক ফোরামে অভিযোগ করেছেন, শতভাগ মার্জিন দিয়েও অর্থাৎ শতভাগ অর্থ আগাম দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি খুলছে না। ডলারের সরবরাহ কম হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। আগে ৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করা হতো। ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন ৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩০ লাখ ডলারের পণ্য এলসি খোলার ক্ষেত্রেও তদারকি করা হচ্ছে। এর ফলে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার হার কমে গেছে। তবে, বকেয়া আদায়ের জন্য নিষ্পত্তি হচ্ছে বেশি হারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পণ্যের এলসি তদারকি করতে গিয়ে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং), কোনো ক্ষেত্রে কম মূল্য দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) ডলার পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পণ্য ভেদে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ বেশি মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করার তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ যে পণ্যের মূল্য ১০০ টাকা, সেটা ৩০০ টাকা দেখিয়ে পণ্য আমদানি করছে। এ ক্ষেত্রে ২০০ টাকা পাচার করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ টাকার পণ্য ১০ টাকা দেখিয়ে আমদানি বা রফতানি করছে। আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশে হুন্ডির ডলার দিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে। একই সাথে সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে ডলার বিদেশে রেখে দেয়া হচ্ছে। এভাবেই অর্থ পাচার বেড়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংকারদের সাথে জরুরি বৈঠকে বসেন সোমবার। ওই বৈঠকে এমডিদের সামনে এমন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, এর দায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এড়াতে পারে না। তিনি এ বিষয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গভর্নরের মৌখিক নির্দেশে ব্যাংকের শাখা প্রধানদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতেই ব্যাংকগুলোতে ডলার সঙ্কট রয়েছে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের এলসি খুলতে পারছেন না। কিন্তু এর পরেও এক ধরনের ব্যবসায়ীরা পণ্য এলসি খোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। তিনি বলেন, গভর্নরের নির্দেশক্রমে শাখা প্রধানদেরকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য যাচাই-বাছাই করে পণ্যের এলসি খুলতে হবে। বিলাসী পণ্যের এলসি খোলা থেকে আপাতত বিরত থাকতে হবে। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেই কেবল এলসি খুলতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে কোনো শাখায় এ ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানকে তার দায়দায়িত্ব বহন করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে তারা জানতে পারছেন, অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক এলসি খোলা বন্ধ আছে। বিষয়টি সঠিক নয়। এ ধরনের এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে নীতিমালার আলোকে তদারকি করা হচ্ছে। বিশেষ তদারকিতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে। গত জুলাই থেকে কঠোর তদারকির ফলে তা কমেছে।