• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ধর্ষণের শাস্তি ‘তওবা’ আর জরিমানা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২২  

মানিকগঞ্জে গ্রাম্য সালিশে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে হুজুরের মাধ্যমে ‘তওবা পড়া’ আর ৬০ হাজার টাকা জরিমানা। এই শাস্তি মেনে সম্প্রতি ধর্ষণ অভিযোগ থেকে রেহায় পেয়েছেন আব্দুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ (৫৬) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া গ্রামের মৃত উসমান শিকদারের ছেলে। পেশায় কৃষক আব্দুল মজিদ তিন সন্তানের বাবা।

নির্যাতিত ওই শিশু স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলে জানা গেছে।

শিশুটির মা জানান, তিন মাস আগে তার স্বামী বিদেশে গেছেন। ১২ বছরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকেন। তার মেয়েটি কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। দুই সপ্তাহ আগে তার মেয়ে প্রতিবেশী আব্দুল মজিদের বাড়িতে গেলে মজিদ কৌশলে তাকে ধর্ষণ করেন। বাড়িতে আসার আগেই ঘটনাটি অনেকের কাছে বলে দেয় তার মেয়ে।

মেয়ের কাছে ঘটনা শুনে তিনি আব্দুল মজিদের বাড়িতে গেলে তার বাড়ির লোকজন খারাপ আচরণসহ নানা হুমকি ধামকি দেন। এরপর বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারসহ গ্রামের গণ্যমান্যদের জানানো হয়।

তারা উপযুক্ত বিচার করার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত ২৬ মার্চ রাতে স্থানীয় চাঁনু শিকদারের বাড়িতে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই সালিশে ভুক্তভোগী শিশু ও তার মাকে ডাকা হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো জবানবন্দিও।

সালিশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সমাজপতি আব্দুল করিম। উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, চাঁনু শিকদার, শুকুর শিকদার, আব্দুল মজিদ, মেয়েটির চাচা মহিদসহ সমাজের ২০-২৫ জন ব্যক্তি।

সালিশে অভিযুক্ত আব্দুল মজিদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। রায়ে তাকে ৬০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা ও তওবা করানোর সিদ্ধান্ত হয়। সালিশেই হুজুর ডেকে আব্দুল মজিদকে তওবা করানো হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় দেওয়া হয়।

শিশুটির মা বলেন, সমাজপতিরা তাকে সুষ্ঠু সমাধানের আাশ্বাস দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো সালিশ করেছেন। তাকে আইনের আশ্রয় নিতে দেয়নি। আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটির এতো বড় ক্ষতি করলো ওরা। এখন মানুষের কাছে মুখ দেখাবো কেমন করে?

হাটিপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার খোরশেদ আলম জানান, ঘটনার পর সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। আমাদের গ্রামের বিষয় আমরা মীমাংসা করেছি। এটা নিয়ে আপনাদের মাথা ঘামাতে হবে না। আমরাওতো আইন জানি।

আব্দুল মজিদের চাচাতো ভাই চাঁনু শিকদার জানান, ঘটনার পর মানুষের সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করে চলতে হয়েছে। এ কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমার বাড়িতে সালিশের ব্যবস্থা করা হয়। সালিশে দোষ স্বীকার করলে তাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং হুজুরের মাধ্যমে তওবা পড়ানো হয়। সেইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিষদের কথা বলাও হয়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউব জানান, ধর্ষণের ঘটনা আপোষ অযোগ্য। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি তিনি। সাংবাদিকদের কাছেই ঘটনাটি তিনি প্রথম জেনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে রোববার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে।