• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দরিদ্র পিঠা বিক্রেতাদের চুলা নিয়ে গেলেন নারী ভাইস চেয়ারম্যান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২  

মানিকগঞ্জের ঘিওর বাস টার্মিনালের ভ্রাম্যমাণ দুই পিঠা বিক্রেতার চুলা, ছাঁচ না বলে নিয়ে গেলেন উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা। এই চুলা-ছাঁচে হরেক রকম পিঠা তৈরি করে আপ্যায়িত করা হয় কর্তাদের। গত শনিবার বিকালে চুলা-ছাঁচ হারিয়ে ভুক্তভোগী ওই দুই নারী পিঠা বিক্রেতা ঘিওর থানায় হাজির হন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলায় বেশ শোরগোল পড়ে যায়।

শনিবার বিকালে পিঠা তৈরির উপকরণ নিয়ে ভুক্তভোগী ঐ দুই নারী তাদের দোকানে এসে দেখেন, তাদের চুলা ও ছাঁচ নেই। পরে প্রতিবেশী দোকানদাররা জানান, তাদের চুলা ছাঁচ উপজেলা পরিষদের ভেতরে নিয়ে গেছেন উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা।

সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে এক অনুষ্ঠান ছিল। এতে জেলা প্রশাসকসহ সাত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, এনজিও কর্মকর্তাসহ প্রায় শতাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। তাদের আপ্যায়নে বিভিন্ন রকম খাবারের আয়োজন করা হয়।

উপজেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ৩০ বছর যাবৎ পিঠা বিক্রি করেন গোলাপ নগর গ্রামের প্রতিবন্ধী মো. বেল্লালের স্ত্রী আছমা বেগম। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো শনিবার বিকালে ১৫/১৬ কেজি চালের গুঁড়ি নিয়ে দোকানে এসে দেখি আমার একটি চুলা আর ছাঁচ নেই। পরে পাশের দোকানদাররা জানান, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা ভ্যানে করে এই চুলা নিয়ে গেছেন। এই পিঠা বিক্রি করেই আমার অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা আর সংসারের ভরণ-পোষণ করে থাকি।

অপর ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতা রূপালী আক্তার বলেন, আমি এখানে ১১ বছর যাবৎ পিঠা তৈরি ও বিক্রি করি। বিকালে ২০ কেজি গুঁড়ি, মসলা, গুড় নিয়ে দোকানে এসে দেখি আমার দুটি চুলা-ছাঁচ নেই। লোকমুখে শুনে কাজী মাহেলার মোবাইলে কল করলে তিনি বলেন, চুলা নিয়েছি, উপজেলায় বড় অনুষ্ঠান আছে। এ ব্যাপারে ইউএনও স্যার বলতে পারবেন। সন্ধ্যার পর এসে চুলা নিয়ে যেও। আমার ৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা গরিব মানুষ চার সন্তান নিয়ে এই পিঠা বিক্রি করেই সংসার চালাই।

টার্মিনালে প্রতিবেশী চটপটি দোকানদার রাসেল ও চা বিক্রেতা অনুকুল বলেন, সকালে ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা একটি ভ্যানে করে এই দুজন পিঠা বিক্রেতার চুলা আর ছাঁচ নিয়ে গেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা বলেন, ঐ নারী পিঠা বিক্রেতাদের আমাদের অনুষ্ঠানে পিঠা তৈরি করার জন্য বলেছিলাম। তারা রাজি হয়নি। পরে তাদের চুলা আর ছাঁচ নিয়ে আমাদের লোক দিয়ে পিঠা বানানো হয়।

ঘিওর থানার ওসি মো. আমিনুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নারীরা থানায় এসেছিলেন। কিন্তু কোন লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। না বলে চুলা আনা একজন জনপ্রতিনিধির ঠিক হয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। শোনার পর চুলাগুলো (সন্ধ্যার সময়) ভ্যানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।