• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

‘অরাজনৈতিক’ হেফাজতের নেতৃত্ব চালায় ৭ রাজনৈতিক দলের ৮৫ নেতা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২১  

মুখে মুখে নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করে হেফাজতে ইসলাম, কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই উল্টো। সরেজমিনে দেখা যায়, মূলত অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যেই প্রতিটি কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫১ জনের মধ্যে ৮৫ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোটের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন হেফাজতের ৪ কেন্দ্রীয় নেতা।

মূলত, ৫ মে ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ব্যাপক নাশকতা ও তাণ্ডব চালানোর মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে উত্থান হয় হেফাজতের। বড় ধরনের নাশকতার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করেছিল তারা। তবে এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায়, তা নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্ত ও হেফাজত নেতাদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে জানা যায়, শাপলা চত্বরে নাশকতার আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছিল হেফাজত নেতা বাবুনগরী এবং মামুনুল হকরা। সরকার উৎখাতের জন্য কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের সামনে রেখে এবং কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার ব্যবহার না করে, নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর থেকে নিয়মিত বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে বড় ধরনের অর্থ পেতে শুরু করে হেফাজত।

এছাড়াও সরকার পতনে সফল হলে হেফাজত নেতাদের সরকারের অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে হেফাজতের আইন সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক এবং দুজন উপদেষ্টাকে ধানের শীষ প্রতীকে দেওয়া হয় বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে। বিএনপি-জামায়াতের হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন তারা।

এদিকে হেফাজত নিজেকে একটি ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করলেও, এটি পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের ভাড়াটে উইং হিসেবে। এবছর হেফাজতের সর্বশেষ কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক শিবির সভাপতি আহমেদ আবদুল কাদের, চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক জামায়াত নেতা নিজামউদ্দীন, হাটহাজারীর সাবেক বিএনপি নেতা নোমান ফয়জী, এমনকি মামানুল হক নিজেও একজন স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীর সন্তান।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫১ জন নেতার মধ্যে ৮৫ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা। বিরোধী দল বিএনপির একজন এবং স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ৮ জন রয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় পদে। সর্বোচ্চ ৩৪ জন আছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিক জমিয়তে ইসলাম থেকে। মামুনুল হকের নিজের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১৮ নেতার জায়গা হয়েছে হেফাজতের কমিটিতে। এছাড়াও অন্য আরেকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিস থেকে ৬ জন, খেলাফত আন্দোলনের ৮ জন, নেজামে ইসলামের ১০ জন রয়েছে হেফাজতের কমিটিতে।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নাশকতা চালায় হেফাজত। তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ দেখে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা অধিকাংশই মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের নেতাকর্মী। একইসঙ্গে হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছে তারা। মূলত অপকর্ম ও দুর্বৃত্তায়ন ঢাকতে ছদ্মবেশ হিসেবে হেফাজতকে ব্যবহার করছে ধর্মভিত্তিক এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা। কারণ হেফাজতের প্লাটফর্ম ব্যবহার করলে হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসার এতিম ও গরিব ছাত্রদের ফ্রি ফ্রি ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যায়। একারণে হেফাজত নেতারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে এই ছাত্রদের মাঠে সহিংসতার জন্য নামিয়ে দেন। সর্বশেষ দেশজুড়ে হেফাজতের তাণ্ডব থামাতে এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার্থে কঠোর অবস্থানে যায় পুলিশ। সেসময় হেফাজতের কয়েকজন কর্মী প্রাণ হারায়। তবে তাদের কবরের মাটি শুকোনোর আগেই নারী নিয়ে রিসোর্টে প্রমোদ বিহারে যান হেফাজত নেতা মামুনুল হক। পরবর্তীতে তার সব একাধিক নারী কেলেংকারী, মাদ্রাসা দখল ও দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে।

পুলিশের কাছে মামুনুল হক জানান, দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলতে ওয়াজ-মাহফিলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছিল হেফাজত। কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়াজিদের জন্য এজেন্ডা ঠিক করে দেওয়া হতো। তারা সেই অনুসারেই ওয়াজ করতেন। এজন্য বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে হেফাজতকে ফান্ড দেওয়া হয়। এছাড়া দেশের বাইরে থেকেও তাদের অনুদান বৃদ্ধি করানোর ব্যবস্থা করেছে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।