• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জামায়াত ছাড়লেন রাজ্জাক: নতুন কোনো দুরভিসন্ধি নয়তো?

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

মুক্তিযুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার জন্য নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সহকারী‘সেক্রেটারী জেনারেল’ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। যুক্তরাজ্য থেকে গতকাল সকালে পাঠানো একটি চিঠিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমদের কাছে আব্দুর রাজ্জাক তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করেন।

পদত্যাগের পেছনে আব্দুর রাজ্জাক দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়, জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে ও অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে দলটি নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি। মূলত মুক্তিযুদ্ধে দলটির ভূমিকাকে মেনে নিতে না পেরেই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার পদত্যাগপত্রে আরও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি শুরু থেকেই জামায়াতের এই ভূমিকাকে সমর্থন করেননি। অথচ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান কৌঁসুলি ব্যারিস্টার রাজ্জাক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে সেই আব্দুর রাজ্জাক একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে দলত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে তিনি যদি শুরু থেকেই একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকাকে সমর্থন না করে থাকেন, তাহলে তিনি কেন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে প্রধান কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বিচার চলাকালে? রাজ্জাকের এমন দ্বৈতনীতির ফলে অনেকেই জামায়াত তথা রাজ্জাকের সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধির গন্ধ পাচ্ছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, যেহেতু জামায়াত নামক রাজনৈতিক দলটিকে দেশবাসী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে সবক্ষেত্রে, তাই দলটি এবং তাদের নেতারা জামায়াত নামক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে নতুন করে এই দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পায়তারা করছে। অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো। প্রসঙ্গত, এরইমধ্যে জামায়তের পক্ষ থেকে দলটির নাম পরিবর্তনের নির্দেশনার কথা শোনা যাচ্ছে।

 

এদিকে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করা নেতাদের সাদরে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বিএনপি। এরইমধ্যে জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান রাজ্জাকের পদত্যাগের বিষয়ে বলেছেন, “আমি এটাকে খুব পজিটিভলি দেখছি। আমি মনে করি, রাজ্জাক সাহেব দেরিতে হলেও তার এই উপলব্ধি ও ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন– এটা খুব ভালো দিক।”

প্রকৃতপক্ষে, জামায়াত নেতাদের বিএনপির মূলধারার রাজনীতিতে সরাসরি সংযুক্ত করতেই এমন কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলে মনে করেন দেশের রাজনীতি সচেতন মহল। তাদের মতে, বিএনপি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতেই মূলত এই পন্থা অবলম্বন করে জামায়াত নেতাদের সরাসরি বিএনপিতে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

উল্লেখ্য - বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন-এর রিট আবেদনেই হাইকোর্ট ছয় বছর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে।

এই দলের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন - “রাজ্জাক জামায়াত থেকে সরে গেছেন এটা অবিশ্বাস্য। উনি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন। দেশের বাইরে জামায়াতের যে যোগাযোগ, কোটি কোটি টাকার লেনদেন, তা রাজ্জাক সাহেবের মাধ্যমে হচ্ছে।”

নজিবুল বশরের দাবি, জামায়াতকে নিয়ে তাদের মামলা তোলার জন্য ‘শত শত কোটি টাকা’ সেধেছিলেন রাজ্জাক।

“সেই রাজ্জাক সাহেব আবার দলের ক্ষমা চাওয়ার কথা বলছেন। এটা তাদের রাজনীতির জন্য একটা চাল। উনি দেশে ফিরে আসতে চাচ্ছেন। জাময়াতকে নতুনভাবে সংগঠিত করতে চাচ্ছেন। পুরনোগুলোকে বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়ে সংগঠিত করবেন। এটাকে ভালো চোখে দেখার কোনো কারণ দেখি না”

রাজ্জাকের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে নজিবুল বশর বলেন, “জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার জন্যে উনি (রাজ্জাক) পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু উনি নিজে ক্ষমা চেয়েছেন কিনা, উনি নিজে তো ক্ষমা চাননি।”

ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল এবং একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের পক্ষ থেকে এদেশের রাজনীতিতে দল হিসেবে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দলটির চিহ্নিত নেতকর্মীদেরও নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।