• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

করোনার ভয়াবহতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার শঙ্কা!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২০  

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভোগার শঙ্কা রয়েছে। সেই শঙ্কা থেকে বাদ যাননি করোনাজয়ী প্রাপ্ত বয়স্করাও।

শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এ শঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস শনাক্তের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর ৩৫ শতাংশ ব্যক্তির স্বাভাবিক সুস্থতা ফিরে আসেনি।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত করোনায় শনাক্ত ২৯২ জনের ওপর জরিপ পরিচালনা করে সিডিসি। ওই সময় বহির্বিভাগের রোগী হিসেবে চিকিৎসা নেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনে মধ্যে ওই রোগীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

গত শুক্রবার সিডিসির রোগ এবং মৃত্যুহার বিষয়ক এক সপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ হয়।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৪ শতাংশ জানিয়েছে, করোনা পরীক্ষা করার সময় তাদের শরীরে কমপক্ষে একটি উপসর্গ ছিল। আর সিডিসির তালিকভুক্ত ১৭ উপসর্গের মধ্যে তাদের শরীরে প্রায় সাতটি বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে বেশি উপসর্গ ছিল শারীরিক ক্লান্তি, মাথা ব্যথা ও কাশি।

করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৬ তম দিনে নেয়া সাক্ষাৎকারে ৪৩ শতাংশের কাশি, ২৯ শতাংশের শ্বাসকষ্ট, ৩৫ শতাংশের ক্লান্তি ছিল।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৫ শতাংশ জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ থেকে ১২ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক সুস্থতায় ফিরেছেন তারা। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসার কয়েক সপ্তাহ পর কেউ অসুস্থ বোধ করছেন কিনা-এটির ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

৫০ এবং তার চেয়ে বেশি বয়সীদের ৪৭ শতাংশ জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরও শরীরে করোনার উপসর্গ বিদ্যমান ছিল।

এমনকি ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ২৬ শতাংশেরও শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল বলে সিডিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের ৩২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি সুস্থতায় ফিরতে পারেনি।
দীর্ঘস্থায়ী রোগের সমস্যায় থাকায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ভাইরাসের উপসর্গ বেশি দিন ছিল। কিন্তু ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পাঁচ যুবকের  মধ্যে এক জনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছিল না। তবে তারা পুরোপুরি সুস্থতা লাভ করতে পারেনি।

ইতালিতে এক জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির দুই মাস পর ৮৭ শতাংশের বেশিরভাগ লোকের শরীরে অন্তত একটি করোনার উপসর্গ বিদ্যমান রয়েছে। অর্ধেকের বেশি সুস্থ হওয়া রোগীর শরীরে এখনো তিন বা এর চেয়ে বেশি উপসর্গ বিদ্যমান রয়েছে।

অনেক চিকিৎসক করোনা মুক্ত হওয়ার পর উপসর্গ থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, উপসর্গ বছরের পর বছর থেকে যাবে। অনেক রোগী আছেন যারা কখনই শতভাগ সুস্থতা লাভ করতে পারবে না। 
এরইমধ্যে করোনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরিমাপের জন্য গবেষণা চলছে। দীর্ঘমেয়াদি করোনার উপসর্গ থাকা সুস্থ করোনাজয়ীদের সহায়তার লক্ষ্যে ক্লিনিক কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।

হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছিলেন তাদের সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি ক্লিনিক দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বিশেষজ্ঞ, ডায়েটিসিয়ান ও একজন মনোবিজ্ঞানী নিযুক্ত করেছে। তবে করোনার মৃদ্যু উপসর্গ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে আসছেন।

সিডিসির নতুন গবেষণায় থাকা গবেষকদের মতে, জনস্বাস্থ্যে জড়িতদের মাধ্যমে জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরি যে, মৃদু করোনায় আক্রান্ত হলেও তরুণ, স্বাস্থ্যবানদেরও মাঝে কয়েক সপ্তাহ করোনার উপসর্গ থাকতে পারে।

সিডিসি পরামর্শ, করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি ধীর করতে মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতা হিসেবে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।